তুরস্কে ফের ভূমিকম্প, মৃতের সংখ্যা ৩৪ হাজার পার। ভূমিকম্প তুরস্কে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে, আবারও একটি ভূমকম্প আঘাত হেনেছে তুরস্কে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪.৭। তুরস্কের কাহরামানমারাসের ২৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে ভুমিকম্প আঘাত হানে। তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়েছে। ভূমিকম্পের পর কেটে গিয়েছে এতগুলো ঘণ্টা। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া এখনও চলছে। মৃতের সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে এক গর্ভবতী মহিলা এবং দুই শিশুসহ বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করেছে। শক্তিশালী ভূমিকম্পে হাজার হাজার ভবন ধসে পড়েছে।
তুরস্ক এবং উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৪,০০০-এর বেশি। চলছে ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযান। রবিবার মৃতের সংখ্যা ৩৪,১৭৯ তে পৌঁছেছে। শুধুমাত্র তুরস্কে মৃতের সংখ্যা ২৯,৬০৫। সিরিয়ায় মৃত্যু হয়েছে ৪, ৫৭৪ জনের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। টেড্রোস এবং ডব্লিউএইচওর শীর্ষ কর্মকর্তাদের একটি দল শনিবার আলেপ্পোতে পৌঁছেছে।
এদিকে, তুরস্ক ও সিরিয়ায় বিধ্বংসী ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পের এক সপ্তাহ পর, ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম পুরোদমে চলছে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া মানুষজনকে উদ্ধার করা হচ্ছে। রবিবার ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে ১৪৭ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়েছে ১০ বছরের এক কিশোরীকে। ইস্তাম্বুলের মেয়র জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের প্রায় ১৬২ ঘন্টা পরে রবিবার ১০ বছরের এক কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়েছে। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম টিআরটি জানিয়েছে, রবিবার ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে বছর ৫০-এর এক মহিলাকেও উদ্ধার করা হয়েছে। তুরস্কের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফাহরেটিন কোকা জানিয়েছেন, রবিবার তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের ১০৮ ঘণ্টা পর তুরস্কের হাতায় প্রদেশে একটি দুই মাস বয়সী শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে।
বাড়তে পারে মৃত্যু
তুরস্কের যেখানে কম্পনটা হয়েছে, সেখান থেকে সিরিয়া কাছাকাছি। তাই ক্ষয়ক্ষতির প্রভাব সিরিয়াতেও ব্যাপক পড়েছে। সেদেশে মৃত্যুর সংখ্যাটা ৩,৫০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। সিরিয়ার অসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ, প্রাণপণে এখনও ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ চালাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে ‘হোয়াইট হেলমেট’ নামে পরিচিত সিরিয়ার অসামরিক বিভাগের কর্মীরা আশঙ্কা করছেন, মৃত্যুর সংখ্যাটা আরও কয়েকগুণ বাড়তে পারে। কারণ, এখনও অনেকে ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে আছেন। আর, যাঁরা আছেন, অলৌকিক কোনও ঘটনা ছাড়া বাকিরা সকলেই মারা গিয়েছেন। এমনটাই ধরে নিচ্ছেন উদ্ধারকারীরা। কারণ, এতদিন পর আর অন্যকিছু আশাও করা যায় না।
বিপুলসংখ্যক মানুষ ঘরহারা
ভূমিকম্পের পর সবমিলিয়ে ঘরহারা সিরিয়ানের সংখ্যাটা প্রায় ৫০ লক্ষ। এটা রাষ্ট্রসংঘের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের হিসেব বলছে। রাষ্ট্রসংঘের ইউএন হাইকমিশন ফর রিফিউজিস (ইউএনএইচসিআর)-এ সিরিয়ার প্রতিনিধি সিভাঙ্কা ধানাপালাও স্বীকার করে নিয়েছেন, ‘বিপুল সংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।’ তাঁর দাবি আবার ৬৮ লক্ষ সিরিয়ান বর্তমানে বাস্তুচ্যুত।
হিমশীতল আবহাওয়ার কারণে কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধারকার্য। হাজার হাজার উদ্ধারকর্মী জীবন বাজি রেখে প্রাণ বাঁচাতে তাদের লড়াই জারি রেখেছেন। এখনও সাহায্যের প্রয়োজনে মরিয়া লক্ষ লক্ষ মানুষ। তুর্কি মিডিয়া জানিয়েছে, ভূমিকম্পের পাঁচ দিন পর যাদের উদ্ধার করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজন দুই বছর বয়সী এক বালিকা, ছয় মাসের এক গর্ভবতী মহিলা এবং ৭০ বছর বয়সী এক মহিলাও রয়েছেন।
আরও পড়ুন: < কাকভোরে ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল সিকিম, তুরস্কের স্মৃতি ফিরে চরমে আতঙ্ক >
সোমবারের ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে, তুরস্ক এবং সিরিয়া! সঙ্গে বেশ কয়েকটি শক্তিশালী আফটারশক। যা এই শতাব্দীর বিশ্বের সপ্তম মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ২০০৩ সালে প্রতিবেশী ইরানে ভূমিকম্পে মারা যান ৩১ হাজারের বেশি। তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পরেই পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিল ভারত। সেই মতো এর আগেই ভূমিকম্প বিধ্বস্ত দেশে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম-সহ অন্যান্য জিনিসপত্র পাঠিয়েছে ভারত।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরাও বিধ্বস্ত তুরস্কের পাশে দাঁড়াতে সেদেশে ছুটে গিয়েছেন। ভারত থেকে আট ঘন্টার বিমান যাত্রার পর সেনাবাহিনীর ৬০ প্যারা ফিল্ড হাসপাতালের ইউনিট দুটি পৃথক ব্যাচে গত মঙ্গলবার তুরস্কে নেমেছিল। তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রায় ২৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশাল ওই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছিলেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওই দলটি তুরস্কের ইস্কেন্দারুনের উদ্দেশ্যে যায়।
সেনাবাহিনীর ওই দলের একজন অফিসার বলেন, “তিন দিন ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা পাঁচ বছরের একটি মেয়েকে আমরা চিকিৎসা দিয়েছি। তারপরে ৪৮ বছর বয়সী একজন লোক ছিল যার পা ধ্বংসাবশেষের নীচে পিষ্ট হয়েছিল। আমাদের তার পা কেটে ফেলতে হয়েছিল।”