রিলায়েন্স কর্ণধার মুকেশ আম্বানির বাড়ির সামনে বিস্ফোরক ভর্তি গাড়ি উদ্ধারের ঘটনায় আর ঘনীভূত রহস্য। যে গাড়িতে অই বিস্ফোরক রাখা হয়েছিল, তার মালিক মনসুখ হীরেনের মৃতদেহ উদ্ধার ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সেই রেশ মিটতে না মিটতেই একই জায়গায় উদ্ধার হল আর একটি মৃতদেহ। এই মৃতদেহ উদ্ধারের সঙ্গে মনসুখের মৃত্যুর কোনও সম্পর্ক রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
মুম্বই পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘শনিবার বেলা ১১টা ১০ মিনিট নাগাদ মুমব্রার রেতি বুন্দের ক্রিক থেকে একটি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। মুমব্রা পুলিশ, আঞ্চলিক বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর ও দমকল মিলে দেহটি উদ্ধার করে। দেহটি শেখ সেলিম আবদুল (৪৮) নামের এক ব্যক্তির। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এলে তবেই মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।’
পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাথমিক তদন্তে অনুমান নিছকই আত্মহত্যা। তবে এখনই কোনও সিদ্ধান্তে আসতে চাইছে না পুলিশ। কিছুদিন আগে একই জায়গা থেকে মনসুখ হীরেনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল। তাই এই ঘটনাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে, এমনটাই জানিয়েছে পুলিশ।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মুকেশ অম্বানীর বাড়ির বাইরে একটি পরিত্যক্ত গাড়িতে ২০টি জিলেটিন স্টিক ও একটি হুমকি চিঠি উদ্ধার হয়। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে গাড়িটি মনসুখ হীরেন নামে এক ব্যক্তির। তার কিছুদিন পরেই ৫ মার্চ রেতি বুন্দের ক্রিক থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়।
এদিকে, রিলায়েন্স কর্ণধার মুকেশ আম্বানির বাড়ির সামনে উদ্ধার বিস্ফোরক বোঝাই স্করপিও এসকর্ট করে নিয়ে আসে ধৃত অফিসার শচীন ভাজেই। এনআইএ সূত্রে এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করা হয়েছে। অ্যান্টিলায় বোমাতঙ্কের ঘটনায় স্করপিও গাড়িটিকে এসকর্ট করে নিয়ে আসে একটি সাদা গাড়ি। সেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন শচীন নিজেই।
এনআইএ তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, শচীন বড় কুর্তা পরে মুখ ঢেকে সেখানে এসেছিলেন। অ্যান্টিলার বাইরে যে বিস্ফোরক বোঝাই স্করপিও গাড়িটি পাওয়া যায় তার কয়েক ঘণ্টা পরেই সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে শচীনের উপস্থিতি। আইজি অনিল শুক্লা জানিয়েছেন, ওই স্করপিও গাড়িটির জন্য ভুয়ো নম্বর প্লেট ব্যবহার করা হয়েছি। পরে জানা যায়, সেই নম্বর প্লেটটি শচীনের ব্যবহৃত মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ির।
মঙ্গলবার ওই মার্সিডিজ গাড়িটে দক্ষিণ মুম্বইয়ের একটি পার্কিং লট থেকে উদ্ধার করা হয়। তাতে ছিল জামাকাপড়, ৫ লক্ষ টাকা নগদ, টাকা গোনার মেশিন এবং কেরোসিন তেল। তদন্তে পাওয়া গিয়েছে, শচীন থানের অটোমোবাইল ব্যবসায়ী মনসুখ হিরেনের সঙ্গে দেখা করেন ১৭ ফেব্রুয়ারি। মানে মুকেশ আম্বানির বাড়ির সামনে বোমাতঙ্কের আট দিন আগে। মনে করা হচ্ছে, হিরেন নিজের স্করপিও গাড়ির চাবি শচীনকে সিএসএমটি স্টেশনে দেখা করে দিয়ে দেন। তার থেকে সামান্য দূরেই ছিল মুম্বই পুলিশের হেডকোয়ার্টার।
এনআইএ নিশ্চিত, মুকেশ আম্বানির বাড়ির সামনে বিস্ফোরক বোঝাই স্করপিও রেখেছিল শচীনই। কিন্তু কেন এমনটা করলেন ওই পুলিশ আধিকারিক, সেটা এখনও রহস্যের। শচীনের পুরনো অপরাধের রেকর্ড খতিয়ে দেখছে এনআইএ। এক অভিযুক্তের পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু ছাড়াও ২০১৭ সালে হুমকি ফোনে তোলাবাজির ঘটনাতেও অভিযুক্ত।