পশ্চিমের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আন্তর্জাতিক ছাত্রদের মধ্যে ভারতীয় পড়ুয়াদের সংখ্যা বেশ বেশি। তার মধ্যেই পড়ুয়াদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে। কারণ, কয়েকশো ইজরায়েলিকে হামাসের হত্যার পর ইজরায়েল পালটা প্যালেস্তাইনে হামলা চালাচ্ছে। যাকে ঘিরে পশ্চিমের দেশগুলোতে শুরু হয়েছে জায়নবাদ বিরোধী বিক্ষোভ।
ইহুদি পড়ুয়াদের ওপর হামলা
এই বিক্ষোভের অংশ হিসেবে ইহুদি সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের ওপর বেশ কয়েকটি জায়গায় হামলা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ইজরায়েলি পড়ুয়াদের লাগানো পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁদের দখলদার হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। একটি কলেজে তো আবার ইজরায়েলি পড়ুয়ারা বাধ্য হয়েছিলেন নিজেদের বাঁচাতে ব্যারিকেড গড়ে তুলতে। তার মধ্যেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিযোগ উঠেছে, ইজরায়েলি পড়ুয়াদের একতরফাভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে। সেই কাজে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক থেকে কর্তাদের অনেকেই আবার জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।
হিংসাত্মক চেহারা নিচ্ছে হামলা
প্রথমদিকে যখন ইহুদিদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ছড়াচ্ছিল, তখন মনে হয়েছিল ব্যাপারটা বোধহয় তাত্ত্বিক কোনও বিষয়। পরে বোঝা যায়, একদমই তা নয়। বরং, তা ক্রমশই হিংসাত্মক চেহারা নিচ্ছে। ২০২০ সালের জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের বিরুদ্ধে যেভাবে বিক্ষোভ ছড়িয়েছিল, এ-ও যেন অনেকটাই সেরকম। হামাস যে ইহুদিদের ১,৪০০ জনকে হত্যা করেছে, তা নিয়ে যেন বিক্ষোভকারীদের কারও কোনও মাথাব্যথা নেই। তাঁদের যাবতীয় মাথাব্যথা হামাসের বিরুদ্ধে ইহুদিদের অভিযানকে নিয়েই। আরও স্পষ্ট করে বললে ইহুদিবাদ বা জায়নবাদের বিরুদ্ধে যত ক্ষোভ।
ভারতীয় হিন্দুরা কাশ্মীরে দখলদার
ভারতীয় শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা সম্ভবত সচেতন নন, আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ভারত এবং বিশেষ করে হিন্দুদের সম্পর্কে প্রায় ঠিক একই জিনিস শেখাচ্ছে। যেমনটি তারা ইহুদি এবং ইজরায়েল সম্পর্কে বেশ কয়েক বছর ধরে শিখিয়ে এসেছে। আমেরিকার গড় স্নাতক ছাত্রদের কাছে, ভারতকে অনেক অধ্যাপক কাশ্মীরের উপনিবেশকারী হিসেবে তুলে ধরেন। ঠিক যেমন ইজরায়েকে প্যালেস্তাইনের উপনিবেশকারী হিসেবে তুলে ধরা হয়। কাশ্মীরে হিন্দু, শিখ এবং অন্যান্য ভারতীয়দের হত্যাকে এখানে ভারতীয়দের মতো সন্ত্রাসবাদ বা বিচ্ছিন্নতাবাদ হিসেবে নয়, বরং বিদেশি দখলদারদের বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবে দেখানো হয়। উপনিবেশের বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। আর, এটা চলছে বছরের পর বছর ধরে। যাদের কাছে 'মোদী' নামটা সব ধরনে ভয়ংকরের প্রতীক।
(লেখক ভামসী জুলুরি সান ফ্রান্সিসকো বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া স্টাডিজের অধ্যাপক)