সিয়াচেনে বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়ল ভারতীয় সেনা। বুধবার সকালের দিকে এই হিমবাহের পাহারায় মোতায়েন থাকা এক সেনাকর্তা আগুনে নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও চার জন। ভোর তিনটে নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে। যিনি মারা গিয়েছেন তিনি আবার সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট রেজিমেন্টের মেডিক্যাল অফিসার। নিহত অফিসারের নাম ক্যাপ্টেন অংশুমান সিং। তাঁর শরীরে এক বিরাট অংশ পুড়ে গিয়েছে। বাকি জওয়ানদেরও দেহের বিভিন্ন অংশ পুড়ে গিয়েছে। আহত জওয়ানদের হেলিকপ্টারে চাপিয়ে সেনা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে তাঁদের চিকিৎসা চলছে। সেনাবাহিনীর আধিকারিকদের দাবি, আহত জওয়ানদের পরিস্থিত বর্তমানে স্থিতিশীল।
সিয়াচেন হিমবাহ কারাকোরাম পর্বতের অংশ। এই হিমবাহের দখল রাখা নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল আশির দশকের গোড়ায়। সেই দ্বন্দ্বের বীজ লুকিয়ে ছিল করাচি আর সিমলা চুক্তিতে। কারণ, এই সব চুক্তিতে দুই দেশের যে সীমারেখা টানা হয়েছিল, তাতে 'এনজে ৯৮৪২' নামের একটি জায়গার পর থেকে মানচিত্রে কোনও নিয়ন্ত্রণ রেখার উল্লেখ করা হয়নি। কারণ, সেই সময় মনে করা হয়েছিল যে সিয়াচেনের আবহাওয়া অত্যন্ত প্রতিকূল। তাই সেখানে কোনও মানুষ থাকতে পারবে না।
কিন্তু, ৭৪ কিলোমিটার লম্বা এই হিমবাহের অধিকার নিয়ে সাতের দশকের শেষের দিক থেকেই ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে শুরু হয় তীব্র টানাপোড়েন। সাতের দশকের শেষের দিকে ভারতের অনুমতি নিয়ে পাকিস্তান সিয়াচেনে পর্বত অভিযানের সংখ্যা বাড়াতে শুরু করে। ভারতের গোয়েন্দারা খবর দেন যে লন্ডনের একটি দোকান থেকে সিয়াচেন হিমবাহে অভিযানের জন্য প্রচুর পোশাক আর সরঞ্জাম কেনা হচ্ছে। অভিযানের ছকে পাকিস্তান আসলে সিয়াচেন দখলেরই পরিকল্পনা করছে। এই খবর পাওয়ার পরই ভারত ১৯৮৪ সালে বিমানের মাধ্যমে স্থলসেনা পাঠিয়ে সিয়াচেন হিমবাহের দখল নেয়। যা বর্তমানে পৃথিবীর সর্বোচ্চ যুদ্ধক্ষেত্র।
আরও পড়ুন- মুখ পুড়ল গুজরাট পুলিশের, গুজরাট হাইকোর্টের নির্দেশ খারিজ, তিস্তার জামিন সুপ্রিম কোর্টে
অবস্থানগত কারণেই সিয়াচেন দখল রাখা ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কারণ, এর পশ্চিমদিকে রয়েছে পাকিস্তান। আর, পূর্বদিকে রয়েছে চিন। যারা সিয়াচেন ভারতের দখলে না-থাকলে, গোটা লাদাখ এলাকাকেই ভারতের থেকে ছিনিয়ে নিতে পারত। কিন্তু, এই অঞ্চল দখলে রাখার বিপুল খরচ। সিয়াচেন দখলে রাখার জন্য ভারত প্রতিদিন এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে। শুধু তাই নয়, শুধুমাত্র ১৯৮৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ভারতের ৮৮০ জন সেনা সিয়াচেনের কঠিন প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে মারা গিয়েছেন।