"স্বাধীনতা যদি খর্বিত হয়, সে রাষ্ট্রের দ্বারাই হোক কি ব্যক্তির দ্বারা অথবা শিল্পের দ্বারা তাহলে তা বিপজ্জনক। মানুষের যৌথ প্রগতির জন্য কলার স্বাধীনতাকে সমস্ত দিকে প্রসারিত হওয়া দরকার।" শনিবার এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। তিনি বলেন, "লোকে অন্যরকম ভাবলে, বললে, অন্যরকম খাবার খেলে, পোশাক পরলে এমনকি ভিন্নরকম ভাবে ভাবলে, তাদের দিকে বিষ ছেটানোই এখন স্বাধীনতার অর্থ হয়ে দাঁড়িয়েছে।"
মুম্বইয়ে "ইমাজিনিং ফ্রিডম থ্রু আর্ট" শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে দেশের উচ্চতম ন্যায়ালয়ের বিচারপতির মুখে উঠে এসেছে এ বঙ্গের কথাও। পশ্চিমবাংলায় যে ভাবে ভবিষ্যতের ভূত নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, সে প্রসঙ্গে কথা বলেছেন চন্দ্রচূড়। তিনি বলেন, "রাষ্ট্র যদি শিল্পের কণ্ঠরোধ করে আমার কাছে তা বেশি অস্বস্তিকর হয়ে দাঁড়ায়... সে ব্যান্ডিট কুইন হোক কী নাথুরাম গডসে বোলতো, পদ্মাবত কিংবা দু মাস আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যেভাবে ভবিষ্যতের ভূত নিষিদ্ধ করেছিল কেননা তাতে রাজনীতিবিদদের মধ্যে ভূতের প্রতারণার কথা ছিল। রাজনীতির মধ্যে ভূত রয়েছে এ কথা দেখানোর মত স্পর্ধা কোনও পরিচালকের রয়েছে, এ ব্যাপারটাতেই অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলেন রাজনীতিবিদরা।"
আরও পড়ুন, সাভারকরের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক ছিল আরএসএস-এর?
বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, "স্থিতাবস্থার দিকে যে শিল্প চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় তাকে রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিদ্রোহী মনে হতে পারে, কিন্তু তার জন্য শিল্পের কণ্ঠরোধ করার প্রয়োজন নেই... আমাদের পৃথিবীতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে ক্রমশ, সে পৃথিবীতে শিল্পের কণ্ঠরুদ্ধ হচ্ছে। শিল্পের উপর আক্রমণের অর্থ হল স্বাধীনতার উপর আক্রমণ... শিল্প নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর এবং তার বয়ান হয়ে উঠতে পারে... তাকে রক্ষা করা আমাদের কাজ।"
চন্দ্রচূড়ের ৫০ মিনিটের ভাষণের সময়ে হল ছিল ঠাসা। সেখানে আইনজগতের মানুষেরা যেমন ছিলেন, তেমনই ছিলেন নাট্য ও শিল্পকলার জগতের মানুষজনও। চন্দ্রচূড় বলেন, "মূলধারার শিল্প থেকে প্রায়ই নিপীড়িত গোষ্ঠীর জীবন্ত অভিজ্ঞতা বাদ পড়ে যায়।"
তিনি বলেন, "ভুললে চলবে না যে সমস্তরকম শিল্পই হল রাজনৈতিক। যদি তা না হত, তাহলে শিল্পকলা হয়ে উঠত কেবল রং বা শব্দ বা সঙ্গীত দিয়ে তৈরি একটা অলংকার মাত্র।"
আরও পড়ুন, মোদীর এক দেশ, এক ভোট: এর অর্থ কী?
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের যে ঐতিহাসিক রায়ে সমকামিতাকে অপরাধ নয় বলে গণ্য করা হয়েছিল সেই রায়দানকারী বেঞ্চের পাঁচ সদস্যের একজন ছিলেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়। বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের ভাষণে যাঁদের শিল্পকলার কথা স্থান পেয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে কর্নাটকি সঙ্গীত বিশারদ টিএম কৃষ্ণার পারফর্মিং দ্য পেরফেরি কনসার্ট, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা হলেন যোগাপ্পা নামের রূপান্তরকামী কমিউনিটির মানুষেরা। এ ছাড়া দলিত প্যান্থার আন্দোলন, ব্রিটিশ গ্রাফিত্তি শিল্পী বানস্কির কথা ছাড়াও তিনি উল্লেখ করেছেন চিত্তপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাংরি বেঙ্গল আন্দোলনের কথা, "যেখানে উপনিবেশের শাসন এবং বিশ্ব পুঁজিবাদের সৃষ্ট খাদ্য সংকটের কথা বিধৃত রয়েছে।"
পরে কর্পোরেট আইনজীবী জিয়া মোদীর সঙ্গে এক আলোচনায় বিচারপতি চন্দ্রচূড়কে জিজ্ঞাসা করা হয়, অযোধ্যা মামলার মত বিষয় আদালতের বিচার্য হওয়া উচিত কিনা। এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, "সব নাগরিকেরই বিচারপ্রার্থনার অধিকার রয়েছে - কখনও কখনও আপনাদের মনে হতে পারে এ মামলা হাই কোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে এল কী করে- এর অর্থ হল বিচারপ্রক্রিয়া যাতে সকলের কাছে পৌঁছয় তা সুনিশ্চিত করা।"
Read the Full Story in English