সুপ্রিম কোর্ট, সোমবার (১১ ডিসেম্বর) সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের হওয়া পিটিশনের ওপর একটি রায় ঘোষণা করবে। সংবিধানের ৩৭০ ধারা, পূর্ববর্তী জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে একটি বিশেষ মর্যাদা প্রদান করেছিল। এই ধারা ২০১৯ সালের আগস্টে বাতিল হয়। পরবর্তীতে, জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছিল- জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ। গত চার বছরে, এই বিভাজনের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে একাধিক পিটিশনও দায়ের হয়েছে। যা বর্তমানে বিচারাধীন।
আজ সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা অপসারণের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা পিটিশনের উপর তার রায় ঘোষণা করবে। সুপ্রিম কোর্টে মোট ২২টি পিটিশন দাখিল করা হয়েছিল, যার উপর একটানা ১৬ দিন ধরে 'ম্যারাথন শুনানি' চলছে। এই সিদ্ধান্তের জেরে আজ জম্মু ও কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ এ বিষয়ে শুনানি করে অনেক আগেই সিদ্ধান্ত সংরক্ষণ করে রেখেছিল। সবার চোখ এই সিদ্ধান্তের দিকে। সুপ্রিম কোর্ট আজ সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করার কেন্দ্রের ২০১৯-এর অগাস্টের সিদ্ধান্তের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে আবেদনের শুনানি করবে। যা পূর্ববর্তী জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে তার বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়েছিল এবং লাদাখ এবং জম্মু-তে বিভক্ত করেছিল। কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছিল।
প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ এই রায় দেবেন। ১৬ দিন শুনানির পর গত ৫ সেপ্টেম্বর এ মামলার রায় সংরক্ষণ করেন শীর্ষ আদালত। আজ রাজ্যসভায়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন (সংশোধনী) বিল ২০২৩ এবং জম্মু ও কাশ্মীর সংরক্ষণ আইন (সংশোধনী) বিল ২০২৩ পেশ করবেন, যে দুটিই ইতিমধ্যে লোকসভায় পাস হয়েছে।
জম্মু কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ৩৭০ ধারা বাতিলের কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দায়ের করা পিটিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বলেছেন, 'আমরা সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকে ন্যায়বিচার আশা করছি। আজকের এই দিনটার জন্য আমরা সকলেই অপেক্ষা করছিলাম'।
ন্যাশনাল কনফারেন্সের সাংসদ বলেন- আশা করি সিদ্ধান্ত আমাদের পক্ষে হবে
ন্যাশনাল কনফারেন্সের সাংসদ হাসনাইন মাসুদি বলেন, 'আমরা আশাবাদী যে আমাদের আইনজীবীরা যেভাবে তাদের মতামত তুলে ধরেছেন তাতে সিদ্ধান্ত আমাদের পক্ষে আসবে।' সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ আজ এই বিষয়ে রায় দেবে। জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন এবং ধারা ৩৭০ সরানোর কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল শীর্ষ আদালতে।
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কৌল, বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিআর গাভাই এবং বিচারপতি সূর্য কান্তের সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ আজ এই রায় ঘোষণা করবে। ১৬ দিন শুনানির পর আদালত ৫ সেপ্টেম্বর তার রায় সংরক্ষিত করে।
কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে কংগ্রেস, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ইস্যুতে কংগ্রেসের পুরানো অবস্থান কিছুটা নরম হয়েছে। কংগ্রেস ছাড়াও ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি), পিপলস কনফারেন্স সহ জম্মু ও কাশ্মীরের বেশিরভাগ আঞ্চলিক দল ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেছে। এছাড়া সিপিআই, সিপিআইএম, ডিএমকে, এমডিএমকে এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দলও বিলের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে।
শুনানির সময়, সুপ্রিম কোর্টে ৩৭০ ধারা বাতিলের পক্ষে এবং অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরামানি, সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা, সিনিয়র অ্যাডভোকেট হরিশ সালভে, রাকেশ দ্বিবেদী, ভি গিরি এবং কেন্দ্রের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন। অপর দিকে কপিল সিব্বল, গোপাল সুব্রামানিয়াম, রাজীব ধাওয়ান, জাফর শাহ, দুষ্যন্ত দাভ এবং অন্যান্য সিনিয়র আইনজীবীরা আবেদনকারীদের পক্ষে যুক্তি দেন।