চিনির বদলে কৃত্রিম সুইটনার খাচ্ছেন? আখেরে নিজের বিপদ কিন্তু নিজেই ডেকে আনছেন। এবার আরও সজাগ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। ক্যালোরি ঝরাতে চিনি বাদ দিয়েছেন, তার বদলে নিয়মিত খাচ্ছেন আর্টিফিসিয়াল সুইটনার। আখেরে লাভের বদলে ক্ষতিই হচ্ছে না তো? ক্ষতি হলেও কী পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন আপনি? শুনলে চমকে উঠবেন। কৃত্রিম সুইটনার থেকে হতে পারে ক্যান্সারও। আগামী মাস থেকেই ব্যবস্থা নেবে WHO! অ্যাসপার্টাম নামক যে কৃত্রিম সুইটেনার বিশ্বের ৯০টি দেশে ব্যবহৃত হয়, তা থেকে হতে পারে মারণ রোগ ক্যানসার। ইতিমধ্যেই এবিষয়ে সতর্ক করেছে WHO
চিউইং গাম, ক্যান্ডি, ঠান্ডা পানীয় এবং বেকড পণ্যের মতো খাবারে মিষ্টি যোগ করতে কৃত্রিম মিষ্টি ব্যবহার করা হয়। তবে এবার এই নিয়ে সামনে এসেছে বড় খবর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আগামী মাসে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কৃত্রিম সুইটনার অ্যাসপার্টেমকে স্বাস্থ্যঝুঁকি পন্য হিসাবে ঘোষণা করতে চলেছে। কারণ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এটি খেলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
অ্যাসপার্টাম, বিশ্বের 90 টিরও বেশি দেশে ব্যবহৃত হয়। জুলাই মাসে ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (IARC) প্রথমবারের মতো এই অ্যাসপার্টামকে ‘সম্ভাব্য কার্সিনোজেন’ হিসাবে তালিকাভুক্ত করতে চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যান্সার গবেষণা শাখার সূত্রে এই তথ্য জানা সামনে এসেছে।
IARC-এর ঘনিষ্ঠ সূত্র বলেছে যে aspartame কে সম্ভাব্য কার্সিনোজেন হিসাবে তালিকাভুক্ত করার উদ্দেশ্য হল আরও গবেষণাকে উৎসাহিত করা। আগামী মাসে এই কৃত্রিম সুইটনারকে নিষিদ্ধ করা হলে বিশ্বে আবারও নতুন করে বিতর্ক শুরু হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর আগে ১৫ মে ওজন কমাতে এবং ডায়াবেটিসের মতো জীবনযাত্রার রোগ প্রতিরোধে কৃত্রিম মিষ্টি ব্যবহার করার বিরুদ্ধে সুপারিশ করেছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে যখন চিনির পরিমাণ কম করা প্রয়োজন, তখন যেন কোনওমতেই কৃত্রিম মিষ্টি ব্যবহার করা না-হয়। এমনিতে কৃত্রিম সুইটনারগুলো খুব কম বা কোনও ক্যালোরি ছাড়াই মিষ্টির স্বাদ দেয়। বহু ডায়াবেটিস রোগী তাঁদের চা এবং কফিতে সেই মিষ্টি ব্যবহার করেন।
এই জাতীয় পন্যের চাহিদার কথা মাথায় রেখে একটি সতর্কতামূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। প্রায় ২৮৩টি গবেষণার ওপর ভিত্তি করে একটি ৯০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হু। তাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ‘ডব্লিউএইচও পরামর্শ দিচ্ছে যে নন-সুগার সুইটনারস (এনএসএস) ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য বা অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি হ্রাস করার উপায় হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়।’
কৃত্রিম সুইটনারস ব্যবহারে স্বল্পমেয়াদে ওজন-হ্রাস বা বডি মাস ইনডেক্স হ্রাস হতে পারে। কারণ কৃত্রিম সুইটনারগুলো খাওয়া ক্যালোরি কমিয়ে আনে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এগুলো ব্যবহার করলে ওজন বাড়তে পারে। ঝুঁকি বাড়তে পারে ক্যানসারেও। এমনটাই জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। হু তার রিপোর্টে জানিয়েছে, সুইটনারগুলো দীর্ঘমেয়াদে টাইপ-২ ডায়াবেটিস, কার্ডিওভাসকুলার রোগ এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়।
শুধু তাই নয়, গর্ভবতী মহিলারা এই সব কৃত্রিম সুইটনার খেলে মূত্রাশয়ের ক্যানসার এবং সন্তানের অকাল জন্মের সম্ভাবনা বাড়ে বলেও আশঙ্কা রয়েছে গবেষকদের একাংশের। এনএসএস বেশি গ্রহণের ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ২৩% বৃদ্ধি পায়। যখন পানীয়র আকারে খাওয়া হয় এবং খাবারে যোগ করা হয় সেই ঝুঁকি বাড়ে ৩৪%। এই মিষ্টিজাতীয় দ্রব্যগুলো বেশি ব্যবহার করলে কার্ডিও-ভাসকুলার রোগের ঝুঁকি ৩২% বৃদ্ধি পায়। স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ১৯%। আর, উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে ১৩%