আগুন জ্বলল অরুণাচল প্রদেশে। রাজ্যে বসবাসকারী ছটি উপজাতি গোষ্ঠীকে স্থায়ী নিবাস প্রমাণপত্র (পার্মানেন্ট রেসিডেন্স স্ট্যাটাস) প্রদান করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছিলই। রবিবার রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী চাউনা মেইনের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। পাশাপাশি তারা ভাংচুর চালায় রাজধানী ইটানগরের ডেপুটি কমিশনারের দপ্তরেও।
অথচ শনিবার ইটানগর এবং নাহারলাগুনে বিক্ষোভকারীদের ছোড়া পাথরের আঘাতে ২৪ জন পুলিশকর্মী সমেত ৩৫ জন জখম হওয়ার পর থেকেই অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি করা হয়।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছে তারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিং মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু এবং রাজ্যপালের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, জানাচ্ছে সংবাদ সংস্থা এএনআই। আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ইটানগরে মোতায়েন করা হয়েছে ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশের ছ'টি কোম্পানি।
#WATCH Permanent residence certificate row: Violence broke out in Itanagar during protests against state’s decision to grant permanent resident certificates to non-#ArunachalPradesh Scheduled Tribes of Namsai & Chanaglang; Deputy CM Chowna Mein's private house also vandalised. pic.twitter.com/FrcmqWbL8c
— ANI (@ANI) February 24, 2019
শুক্রবার পুলিশের গুলিতে আহত এক ব্যক্তি হাসপাতালে মারা যাওয়ার পর বহুগুণ বেড়ে যায় বিক্ষোভের মাত্রা। পুলিশকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জনিয়েছে, রবিবার দলে দলে জমায়েত হয় উন্মত্ত জনতা, শুরু হয়ে যায় অবাধে জনগণের সম্পত্তি এবং গাড়ি ভাংচুর। এই ডামাডোলের মধ্যেই নীতি বিহারে উপ-মুখ্যমন্ত্রীর নিজস্ব বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। চাউনা মেইন অবশ্য সেসময় বাড়িতে ছিলেন না।
অন্যদিকে ডেপুটি কমিশনারের দফতর তছনছ করার পাশাপাশি কম্পাউন্ডে পার্ক করা অনেকগুলি গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা, এবং ইটানগর থানাতে হামলা চালায়। নাহারলাগুন রেল স্টেশনে যাওয়ার রাস্তা অবরোধ করে কিছু বিক্ষোভকারী, যার ফলে দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয় নিত্যযাত্রীরা।
ইটানগর এবং নাহারলাগুনে আপাতত বন্ধ করা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। সমস্ত বাজারহাট, পেট্রল পাম্প, ও দোকানপাট বন্ধ থাকায়, এবং অধিকাংশ এটিএমে টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায়, রাজধানীতে স্বাভাবিক জীবন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে।
সমস্ত অশান্তির মূলে রয়েছে জয়েন্ট হাই পাওয়ার কমিটির একটি সিদ্ধান্ত, যার ফলে অরুণাচলে বসবাসকারী, কিন্তু সে রাজ্যের আদি বাসিন্দা নয়, এমন ছ'টি গোষ্ঠীকে স্থায়ী নিবাস প্রমাণপত্র দেওয়ার ঘোষণা করা হয়। এই গোষ্ঠীগুলি কয়েক দশক ধরে নামসাই এবং চাংলাং জেলায় বসবাস করছে, কিন্তু ওই ঘোষণার তীব্র বিরোধিতা করেছে একাধিক সাম্প্রদায়িক এবং ছাত্র সংগঠন।
তাদের দাবি, ওই ছটি গোষ্ঠীর সদস্যদের রাজ্য সরকার গ্রহণ করে নিলে রাজ্যের আদি বাসিন্দাদের স্বার্থ ও অধিকার খর্ব হবে। এই ছটি গোষ্ঠী হলো দেওরি, সোনোওয়াল কাছাড়ি, মোরান, আদিবাসী, মিশিং, এবং গোর্খা। এদের অধিকাংশই পড়শি রাজ্য আসামে তফসিলি উপজাতির স্বীকৃতি পেয়েছে।
জয়েন্ট হাই পাওয়ার কমিটির প্রস্তাব শনিবার বিধানসভায় পেশ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু অধ্যক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য সভা মুলতুবি করে দেওয়ায় তা সম্ভব হয় নি। শনিবারেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিং রাজ্যের মানুষের কাছে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানান।