জম্মু কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খোয়া যাওয়ার প্রতিবাদে ১০,০০০ মানুষের প্রতিবাদের খবর নস্যাৎ করে দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। একটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে মন্ত্রকের তরফে শনিবার বলা হয়েছে, কাশ্মীরে গত কয়েকদিনে "বিক্ষিপ্ত প্রতিবাদ" হয়েছে, কিন্তু প্রতিবাদীদের সংখ্যা কোথাও ২০ ছাড়ায় নি, জানাচ্ছে সংবাদ সংস্থা পিটিআই। মন্তকের তরফে আরও বলা হয়েছে, প্রতিবেদনটি "অসত্য এবং ত্রুটিপূর্ণ"। মন্ত্রকের এক মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে পিটিআই জানিয়েছে, "শ্রীনগর/বারামুল্লায় কিছু বিক্ষিপ্ত প্রতিবাদের ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু কোনও ঘটনাতেই লোকসংখ্যা ২০ ছাড়ায় নি।"
এর আগে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এক পুলিশ আধিকারিক এবং দুজন সাক্ষীর বয়ানের ভিত্তিতে জানায়, শুক্রবার শ্রীনগরে এক প্রতিবাদ সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন অন্তত ১০ হাজার মানুষ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক একদিকে যেমন উপত্যকায় "বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশের" খবর খণ্ডন করে, তেমনই অন্যদিকে শনিবার দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগে পৌঁছন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, যেখানে ঈদের প্রাক্কালে গরু ব্যবসায়ী এবং স্থানীয়দের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। উল্লেখ্য, জম্মু কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদ হওয়ার একদিনের মধ্যে জম্মু সফরে গিয়েছিলেন দোভাল। পিটিআই-কে স্থানীয় আধিকারিকরা জানিয়েছেন, শনিবার অনন্তনাগে গরু কেনাবেচার এক অস্থায়ী হাটে থামেন দোভাল। প্রসঙ্গত, জঙ্গি কার্যকলাপের ক্ষেত্রে অত্যন্ত স্পর্শকাতর এলাকা অনন্তনাগ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত একটি ভিডিওয় দোভালকে গরুর দাম, ওজন এবং খাবার নিয়ে প্রশ্ন করতে শোনা যাচ্ছে, যদিও বিক্রি হচ্ছে মূলত ভেড়া। পিটিআই সূত্রে খবর, কার্গিলের দ্রাস এলাকা থেকে গরু বেচতে আসা এক তরুণ ব্যবসায়ীর দোভালকে প্রশ্ন, "দ্রাস কোথায় জানেন?" দোভাল উত্তর দেওয়ার আগেই অনন্তনাগের ডেপুটি কমিশনার খালিদ জানাগির ওই তরুণকে জানাচ্ছেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলছেন তিনি।
শুক্রবার শ্রীনগরের কিছু স্থানীয় বাসিন্দা এবং নিরাপত্তা কর্মীর সঙ্গে দেখা করেন দোভাল। শহরের ঈদগাহ এলাকায় যান তিনি, পথে কথা বলেন বেশ কিছু বাসিন্দার সঙ্গেও। গত বুধবার তাঁকে উপত্যকায় দেখা গিয়েছিল স্থানীয়দের সঙ্গে বসে খাবার খেতে।
কাশ্মীর উপত্যকার কিছু জায়গায় ১৪৪ ধারায় কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছে, একথা নিশ্চিত করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষণ রেড্ডি শনিবার আশা প্রকাশ করেন যে "আগামী ১০-১৫ দিনে পুরোপরি শান্ত হয়ে যাবে পরিস্থিতি", জানাচ্ছে পিটিআই। "আইন-শৃঙ্খলা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিছু জায়গায় শুক্রবার শিথিল করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। আজ (শনিবার) থেকে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও চালু হয়েছে," বলেন মন্ত্রী।
শুক্রবার কাশ্মীরের কিছু এলাকায় ১৪৪ ধারায় জারি করা কারফিউ শিথিল করা হয় এক সপ্তাহের অচলাবস্থার পর, যাতে স্থানীয়রা মসজিদে নমাজ পড়তে যেতে পারেন। ওদিকে জম্মুতে তুলে নেওয়া হয়েছে ১৪৪ ধারা, যার ফলে শনিবার থেকে খুলে গেছে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করে বৃহস্পতিবার ৩৭০ ধারা রদের প্রতিবাদ করায় কার্গিলে গ্রেফতার হয়েছেন বেশ কিছু প্রতিবাদকারী বলে খবর পাওয়া গেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ। ৩৭০ ধারা পুনর্বহাল করার দাবি জানিয়ে কার্গিলের প্রতিবাদকারীরা সংঘর্ষে জড়ান পুলিশ এবং ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে। সূত্রের খবর, নিরাপত্তা রক্ষীদের লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ায় প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে লাঠিচার্জ এবং টিয়ার গ্যাস চার্জ করে পুলিশ। কার্গিলের জেলাশাসক বশির-উল-হক চৌধুরী অবশ্য জানিয়েছেন, এই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হন নি। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটা থেকে কার্গিল টাউন এবং সেখানকার দ্রাস ও সাঙ্কু অঞ্চলে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা।
এর আগে বুধবার সাজ গ্রামে রাজৌরি-থানামন্ডি রোডে বিক্ষুব্ধদের অবরোধ হঠাতে ঘটনাস্থলে পাঠাতে হয় অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী। মঙ্গলবার পুঞ্চ জেলার বুফলিয়াজ এলাকায় প্রতিবাদকারীদের ছোড়া পাথরে আহত হন দুই পুলিশ কর্মী এবং একজন ডেপুটি সুপারিন্টেনডেন্ট। একই দিনে পুঞ্চের সুরানকোট শহরে আন্দোলনকারীদের হঠাতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ।
এদিকে জম্মু কাশ্মীরে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছে জম্মু কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি)। তাদের আবেদনে এনসি ৩৭০ ধারা রদ করার রাষ্ট্রপতির অনুমোদনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছে, জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন ২০১৯ হলো "অসাংবিধানিক, অকার্যকর, এবং নিস্ফল"। শুক্রবার সন্ধ্যায় এই বিলে সম্মতি জানান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, যার ফলে চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর থেকেই দুটি নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে পথচলা শুরু করবে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ।
অন্যদিকে কাশ্মীর উপত্যকা এখনও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি বিবৃতি দিয়েছে এডিটর্স গিল্ড, যার সারমর্ম হলো, এভাবে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে, এবং পরিস্থিতির সঠিক তথা নিরপেক্ষ বিবরণ বাইরের দুনিয়ার কাছে পৌঁছতে পারছে না। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "মিডিয়ায় স্বচ্ছতা বরাবরের মতোই ভারতের শক্তি হওয়া উচিত, ভয়ের কারণ নয়।" স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রেড্ডি অবশ্য দাবি করেছেন, উপত্যকার বেশ কিছু এলাকায় স্বাভাবিক করা হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।