রাশিয়া ইউক্রেনের সংকট কেটে গিয়েছে ১৫ দিন। একের পর এক শহরে হামলা জারী রেখেছে রুশ সেনা। ইতিমধ্যেই অপারেশন গঙ্গার অধীনে প্রায় ১৮ হাজার ভারতীয়কে ইতিমধ্যেই দেশে ফেরানো হয়েছে। সেই সঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে পাকিস্তানি এবং বাংলাদেশের পড়ুয়াদেরও। ইউক্রেনের ভারতীয় দূতাবাস ২ মার্চ রাশিয়ার আক্রমণের মধ্যে নাগরিকদের পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেয়। ততক্ষণে, নিকটতম রেলওয়ে স্টেশনগুলিতে হাজার হাজার মানুষ আটকে পড়েছিল। যার মধ্যে ভারতীয় মেডিকেল পড়ুয়ারাও ছিলেন।
ইউক্রেন ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার মরিয়া চেষ্টা তখন ভারতীর পড়ুয়াদের। তাঁদের পাশে এসে প্রথম সাহায্যের হাত হাত বাড়িয়ে দেন ইউক্রেনে বসবাসকারী ভারতীয় এজেন্টরাই। যারা ভারতীয় ছাত্রদের সেদেশে পড়ুয়াদের পড়াশুনার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এমনই এক এজেন্টের কথায়, “সেদিন ভারতীয় দূতাবাস জানায়নি শিক্ষার্থীরা কোথায় রাত কাটাবে। তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির নিচে। আমি আমার স্থানীয় পরিচিতিকে কাজে লাগাতে বাধ্য হয়েছি। এছাড়া আমার কাছে আর কোন উপায় ছিলনা'। বব-ট্রেড এডুকেশন গ্রুপের মালিক হরদীপ সিং ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে জানান, “যেদিন তারা পিসোচিনে পৌঁছেছিল, ছাত্ররা ক্ষুধার্ত ছিল, অনেকেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। পরের দিন, আমি তাদের স্যুপ এবং রুটি খেতে দিই। আমি দূতাবাসকে বাসের ব্যবস্থা করতে সাহায্য করেছি। প্রায় ৩০০ পড়ুয়ার কাছে কোন টাকা ছিল না। আমি অর্থ টাকা দিয়ে তাদের সাহায্য করেছি। দূতাবাস আমাকে আশ্বাস দিয়েছে যে তারা সেই টাকা আমাকে পরিশোধ করবে,”।
ডিএসএ গ্লোবাল এজেন্সির কর্ণধার, শুভম গৌতম জানান, "তাঁর উদ্বেগ আরও বাড়তে শুরু করেছিল কারণ ভারতীয় ছাত্ররা শূন্যের নীচে তাপমাত্রায় পোল্যান্ডের দিকে রওনা দিয়েছিল। ড্যানিলো হ্যালিটস্কি লভিভ ন্যাশনাল মেডিকেল ইউনিভার্সিটির এমবিবিএস চতুর্থ বর্ষের ছাত্র অভিষেক সিং বলেন, আমরা যখন তাঁদের কল করেছি, তারা সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিলেন। কখনও একটুও বিরক্ত হতে দেখিনি"। গৌতম বলেছিলেন যে, যার ইউক্রেনে প্রায় ছ'জন কর্মী রয়েছে্ন, ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে সমন্বয় করে অন্তত ৭০০ ছাত্রের জন্য বাসের ব্যবস্থা করেন। সেই সঙ্গে তিনি বলেন,“দূতাবাসে গ্রাউন্ড স্টাফের অভাব রয়েছে। সত্যি কথা বলতে কি, কোনো দূতাবাসে এই ধরনের অসাধারণ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য পর্যাপ্ত গ্রাউন্ড স্টাফ মজুত থাকে না। তাই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি এবং বাস, অস্থায়ী বাসস্থান, খাবার এবং জলের ব্যবস্থা করতে আমরা আমাদের স্থানীয় যোগাযোগকে কাজে লাগিয়েছি"।
সঙ্কটের সময়, দিল্লির কন্সাল্ট্যান্ট এবং শিক্ষাবিদ সীমা গান্ধীও ভারতীয় দূতাবাস, খারকিভে আটকে পড়া পড়ুয়া এবং ভারতে তাদের উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের মধ্যে যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছিলেন। নিরাপত্তা সংক্রান্ত একাধিক বিষয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের তিনি সঠিক গাইড করেন। তিনি বলেন, “২ মার্চ, দূতাবাস ছাত্রদের তিন ঘণ্টার মধ্যে খারকিভ ছেড়ে চলে যেতে বলে, অনেক অভিভাবক আমাকে উদ্বেগে ফোন করতে শুরু করেন। আমার কাজ ছিল ছাত্র এবং তাদের অভিভাবকদের দূতাবাসের পরামর্শ সম্পর্কে ক্রমাগত আপডেট রাখা এবং তাদের পক্ষ থেকে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং সরিয়ে নেওয়ার জন্য তাদের সাহায্য করা'। , রেনিশ জোসেফ, সুমিতে আটকে থাকা প্রায় ৬০০ ভারতীয় ছাত্রদের জন্য একই ভূমিকা পালন করেছিলেন। ডাঃ প্রিয়াঙ্কা আহের, তাঁর বোন ময়ূরী সুমিতে আটকে পড়া পড়ুয়াদের মধ্যে একজন ছিলেন, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন: " রেনিশ পড়ুয়াদের অনেক সাহায্য করেছিল। । তিনি খাবার, জল এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে সমন্বয় সাধন এবং শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন।”