এনআরসি প্রক্রিয়া চালু করার পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের আসল নাগরিকদের তালিকাভুক্ত করা এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বিদেশিদের শনাক্ত করা। এখন এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর বিজেপি নেতারা হঠাৎ করে এর মধ্যে ধর্মীয় মেরুকরণ খোঁজার চেষ্টা করেছেন। যদি এনআরসির সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলা কোনও ভুল কাজ করে থাকেন তাহলে সরকার পক্ষ সুপ্রিম কোর্টে তাঁর বিরুদ্ধে কেন নালিশ করছে না? স্থানীয় পত্রিকায় একের পর এক মন্তব্য দিয়ে বাহবা কুড়ানোর চেষ্টা করছে বিজেপি, এমনটাই অভিযোগ শিলচরের প্রাক্তন সাংসদ তথা মহিলা কংগ্রেসের জাতীয় সভানেত্রী সুস্মিতা দেবের।
আরও পড়ুন- ত্রুটিপূর্ণ এনআরসি বানিয়েছেন হাজেলা, সরকারকে এটা বদলাতে হবে: কবীন্দ্র
শনিবার এনআরসির অতিরিক্ত তালিকা প্রকাশের পর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার প্রতিনিধির সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন সুস্মিতা। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার এসেছে এবং দু'বছর পর ২০১৬ সালে অসমেও তাঁরা সরকার গঠন করে। তাঁদের নেতৃত্বের এনআরসির প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে অথচ এখন তাঁরা প্রতীক হাজেলার ঘাড়ে বন্দুক রেখে নিজেদের দোষ ঢাকতে চাইছে। বিজেপির সরকার থাকাকালীন গতবার চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশ পেয়েছে এবং এতে ৪১লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়ে। তখন তাঁদের মনে হয়নি যে হিন্দুদের নাম বাদ যাচ্ছে এবং মুসলমানদের নাম তালিকাভুক্ত হয়ে যাচ্ছে। এখন তালিকা প্রকাশের পর তাঁরা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য রাখছেন যে হিন্দুরা বাদ পড়ে গেছেন। এনআরসি কখনোই হিন্দু-মুসলমানের ভিত্তিতে বানানোর কথা ছিল না। দেশের সব ধর্মের, সব ভাষার এবং সব সংস্কৃতির নাগরিকের অধিকার সম্পন্ন করতে এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতে জনগণের এত টাকা খরচ করা হয়েছে। অথচ তালিকা প্রকাশ কে সামনে রেখে বিজেপির নেতারা হঠাৎ করে মায়াকান্না শুরু করেছেন।
আরও পড়ুন- তালিকাছুট ১৯ লক্ষের পরিচয় কী, তাঁদের কী হতে চলেছে?
ধরুন মেনে নিলাম হাজেলা ভুল করেছেন এবং অবৈধভাবে মুসলমানদের নাম তালিকা ঢুকিয়ে দিয়েছেন এবং হিন্দুদের বাদ দিয়েছেন। আপনাদের সরকার রয়েছে এবং ক্ষমতা আছে, আপনারা প্রতীক হাজেলার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিন, প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টে তার বিরুদ্ধে মামলা করুন। এর চেয়ে প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে সুপ্রিম কোর্টে তত্ত্বাবধানে হওয়ার কথা ছিল এবং হাজেলা তার দায়িত্ব পালন করেছেন। আপনাদের যদি সমস্যা থাকে তাহলে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টকে জানানো উচিত এভাবে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের চিৎকার-চেঁচামেচি করে লোক ঠকানোর কোন মানে হয়না।
আরও পড়ুন- ‘মুসলিমদের নিশানা করার বৃহত্তর নীতির অঙ্গ’, এনআরসি নিয়ে টুইট ইমরানের
গতবার চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশের পর আমরা দেখতে পেয়েছিলাম বেশকিছু ভারতীয় নাগরিকের নাম তালিকায় নেই। আমরা ভেবেছিলাম চূড়ান্ত তালিকায় এই ভুলত্রুটি হবে না। তবে আজ দেখছি যাদের ছোটবেলা থেকে দেখে বড় হয়েছি তাঁদের নাম এনআরসিতে নেই। কাটিগড়া বিধানসভা সমষ্টির দু'বার-এর বিধায়ক তথা বরিষ্ঠ রাজনীতিবিদ আতাউর রহমান লস্কর এবং তাঁর বয়স্ক মায়ের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। সরকারি তরফে বলা হয়েছে চার মাসের মধ্যে নাম সংযুক্ত করার জন্য আবার আবেদন করা যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে একজন প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক কেন বারবার নিজেকে প্রমাণ করবে এবং কেনই বা এনআরসি আধিকারিকরা একই ভুল বারবার করে যাবেন? এর উত্তর কেউ দিতে চায় না।
আরও পড়ুন- বিজেপি খুশি নয়, আসাম এনআরসি থেকে কেন এত কম মানুষ বাদ পড়লেন, প্রশ্ন বিশ্বশর্মার
১৯ লক্ষ মানুষ চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন, তবে আমার বিশ্বাস তাদের বেশিরভাগই নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে সমর্থ হবেন। তাদের পর্যাপ্ত নথিপত্র রয়েছে শুধুমাত্র এনআরসি আধিকারিকদের ভুলের মাশুল তাঁরা গুনছেন।
বিজেপি নেতারা প্রায়ই বলেন, এনআরসি কংগ্রেস সরকারের আমলে শুরু হয়েছিল এবং এই হেনস্থা জন্য কংগ্রেস সরকারই দায়ী। আমি বারবার তাদের বলেছি আপনারা কেন্দ্র এবং রাজ্য সফরে থাকা সত্ত্বেও কেন এইটুকু ভুল শুধরে নিতে পারছেন না? এটা আমাকে বারবার আশ্চর্য করে। যদি সদিচ্ছা থাকতো তাহলে আপনারা প্রত্যেক হিন্দুকে নাগরিকত্ব প্রদান করতেন। বিজেপির সেই ক্ষমতা নেই এবং সদিচ্ছাও নেই, তাই একের পর এক ভাওতাবাজি দিয়ে যাচ্ছে এবং সাধারণ মানুষ এর খেসারত দিচ্ছেন।
আমি বরাক উপত্যকার প্রত্যেক সাধারণ মানুষকে বলব আপনারা ভয়ে ভীত হবেন না। যদি আইনি প্রক্রিয়া হয় তাহলে আইনের মাধ্যমে এটির সমাধান সম্ভব। জেলা কংগ্রেসের তরফে আমরা প্রত্যেক দুস্থ পরিবারের মানুষকে বিনামূল্যে আইনি পরিষেবা দেওয়ার চিন্তা করছি। আগামীতে সাধারণ মানুষের পাশে আমরা থাকবো এবং প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার পাওনাটুকু এনে দেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করবো। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে বিজেপির মুখোশ এবং আমাদের কাছে একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ব্যাপার।