যেতে হবে সুদূর হরিদ্বার। সেখানেই প্রিয়জনের অস্থি বিসর্জন করতে হবে। কিন্তু এখন? গোটা দেশ যে মুড়ে ফেলা হয়েছে লকডাউনের চাদরে। কয়েকশো কিলোমিটার দূরের হরিদ্বারে যাওয়া যাবে কীভাবে! তাই আপাতত অস্থি স্থান পেয়েছে শ্মশানের লকারেই। এমনই কাণ্ড লক্ষীবাগে।
গত ২৭ এপ্রিল দীর্ঘ রোগভোগের পর মৃত্য হয়েছিল দেরদুনের বছর ৮৬র এসএল গুলাটির। পারিবারিক রীতি অনুযায়ী, শ্মশানে মৃতদেহ দাহ করার পর অস্থি বিসর্জন করতে হয় হরিদ্বারের গঙ্গায়। লকডাউনের কারণে সেই রীতিনীতিতে বদল আনতে চাননা পরিবারের লোকজন। তাই অস্থি রেখে দেওয়া হয়েছে শ্মশানের লকারে। ১০০ টাকার বিনিময়ে। লকডাউন উঠলেই সেই অস্থি নিয়ে যাওয়া হবে হরিদ্বারে।
শুধু স্বর্গীয় গুলাটির পরিবারই নয়। শ্মশানের অস্থি-কক্ষের ২৬টি লকারই আপাতত ভর্তি এলাকার মৃত বাসিন্দাদের অস্থিতে। পরিজনরা প্রতীক্ষায় লকডাউন মেটার।
শ্মশানের দায়িত্বে থাকা সুরেশ পাসওয়ান বলছিলেন, "আমাদের ১৮টি লকার রয়েছে। প্রতিটাই আপাতত ভর্তি। বাকিদের অস্থি ব্যাগে সংরক্ষিত রয়েছে। পরিবারের লোকেরা লকডাউন উঠলেই হরিদ্বারে রওনা হবেন।"
শ্মশানে দাহ করার কাজে যুক্ত থাকেন পান্ডা চন্দন। তিনি বলেন, "সাধারণত লকার রুমে তাঁদের অস্থি রাখা হয়, যাদের পরিজনরা বিদেশ থেকে শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে আসেন।"
হিন্দুদের ধর্মীয় রীতিনীতি নিয়ে পণ্ডিত নীতিন শুক্লা জানান, "হরিদ্বারকে বলা হয় মুক্তির দ্বার। হিন্দু রীতি মেনে গোটা দেশ থেকে তো বটেই বিদেশ থেকেও সবাই আসেন পরিজনদের অস্থি বিসর্জন দিয়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে। বর্তমানে লকডাউনের কারণে সবাই আসতে পারছেন না। তাঁরা এখনকার পাণ্ডা ও পুরোহিতদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করছেন। শেষকৃত্য সম্পন্ন করার জন্য অনেকেই উদ্বিগ্ন।"
হরিদ্বারে হর কি পুরি-তে গঙ্গা আরতি যাঁরা আয়োজন করেন সেই গঙ্গা সভা সমিতির একজন সদস্য নীতিন শুক্লা। তিনি আরো বলছিলেন, "প্রতিদিন কমকরে ৪০টা ফোন আসে। আমি তাঁদের বাড়িতে শেষকৃত্য সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া বলে দিই। লকডাউন শেষের পরেই প্রত্যেককে এখানে আসতে বলেছি।"
পণ্ডিত ললিত শাস্ত্রী আবার বলছিলেন, "এখন ঘাটে গিয়ে প্রক্রিয়া করতে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। যাঁরা ফোনে যোগাযোগ করছেন, তাঁদের বলেছি জানেউ, মুন্ডন এর মত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে লকডাউনের পরে আসতে। যেহেতু এটি মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই বাড়িতে সাধারণভাবে শেষকৃত্যের প্রক্রিয়াও আমরা জানিয়ে দিচ্ছি।"
তিনি জানান, লকডাউনের কারণে বেনজির আর্থিক সমস্যায় পড়েছেন প্রায় ১৫ হাজার পাণ্ডা ও পুরোহিতরা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন