তাজমহল, বিশ্বের অন্যতম আশ্চর্য। যার প্রতিটি ইঞ্চিতে জড়িয়ে আছে রহস্য। ঐতিহাসিক দিক থেকে তাজমহলের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাজমহল দেখতে ছুটে আসেন অসংখ্য মানুষ। ইতিহাস এতদিন জানিয়ে এসেছে, মোগল সম্রাট শাহজাহান তাঁর প্রিয়তমা পত্নী মমতাজের স্মৃতিতে এই তাজমহল নির্মাণ করিয়েছিলেন। যার সৌন্দর্য গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। বিশ্বের কাছে তাজমহল জীবন্ত হয়ে থেকেছে প্রেমের প্রতীক হিসেবে। তবে, এর গড়ে ওঠার পিছনে অভিযোগও অবশ্য কম ওঠেনি।
অভিযোগ উঠেছে, যাঁরা তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন, তাঁদের হত্যা করিয়েছিলেন মোগল সম্রাট শাহজাহান। লক্ষ্য ছিল, যাতে এমন অপরূপ নিদর্শন আর গড়ে উঠতে না-পারে। শুধু কি তাই? হিন্দু সম্প্রদায়ের একাংশের অভিযোগ, এই তাজমহল আসলে হিন্দু মন্দির। যাকে জোর করে সমাধিস্তম্ভে বদলে দিয়েছেন মোগল সম্রাট। জয়পুরের রাজপরিবারের বর্তমান উত্তরসূরিদের অভিযোগ, তাজমহলের জমি আসলে তাঁদের। মানে, রাজপুত রাজাদের। সেই জমিই জোর করে দখল করে পত্নী মমতাজের সমাধিস্তম্ভ গড়িয়েছিলেন মোগল সম্রাট শাহজাহান।
ইতিমধ্যে এনিয়ে আদালতের দরজায় কড়া নেড়েছেন হিন্দুত্ববাদীরা। অভিযোগ উঠেছে, তাজমহলে বন্ধু কুঠুরি আছে। সেখানে বন্ধ অবস্থায় রয়েছেন হিন্দু দেবতারা। আগে তাজমহলের নাম ছিল ' তেজো মহালয়া'। সেই সময় তাজমহল ছিল শিবমন্দির। মুসলিম মৌলবাদীরা অবশ্য তাজমহলকে প্রেমের প্রতীক মানতে নারাজ। তাদের দাবি, তাজমহল আসলে মসজিদ। সেখানে ধর্মীয় আচরণও অনুশীলন করেন মুসলিম সম্প্রদায়ের একাংশ। কিন্তু, হিন্দুত্ববাদীরা ইতিহাসবিদ পিএন ওকের দেওয়া তথ্য তুলে ধরেছেন। ইতিহাসবিদ ওক নানা তথ্য দিয়ে দাবি করেছেন, তাজমহল আসলে হিন্দু মন্দির। এখানকার বন্ধ কুঠুরিগুলোয় বন্দি আছে ভগবান শিবের মূর্তি।
আরও পড়ুন- আশঙ্কাই সত্যি! জ্ঞানবাপী মসজিদে উদ্ধার ‘শিবলিঙ্গ’, তড়িঘড়ি জায়গাটা সিল করতে নির্দেশ আদালতের
শেষপর্যন্ত পুরাতত্ত্ব বিভাগ তাজমহলের বন্ধ কুঠুরির ছবি প্রকাশ করল। মোট ২২টি কুঠুরির ছবি প্রকাশ করেছে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, কুঠুরিগুলো বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। তবে, পুরাতত্ত্ব বিভাগের দাবি, ওই সব বন্ধ কুঠুরিতে কিছু নেই। এগুলো স্রেফ তাজমহলের স্থাপত্যের অংশ। পালটা হিন্দুত্ববাদীরা প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে কুঠুরিগুলো বন্ধ কেন? পুরাতত্ত্ব বিভাগ কি কুঠুরির বন্ধ দরজা খুলেছে? না-খুলেই কীভাবে জানছে যে, তার ভিতরে কিছু নেই? সেসব প্রশ্নের অবশ্য কোনও উত্তর নেই পুরাতত্ত্ব বিভাগের কাছে। তবে, প্রশাসন অশান্তি চায় না। এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চও শান্তি বজায় রাখতে ইতিমধ্যে তাজমহল নিয়ে তদন্তের অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে।
তাহলে আচমকা তাজমহলের বন্ধু কুঠুরির কয়েকটির ছবি প্রকাশ করল কেন ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ? এই প্রসঙ্গে পুরাতত্ত্ব বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, 'আমরা শুধু তাজমহলই না। জামা মসজিদ, ইতমাদ-উদ-দৌল্লা, আগ্রা ফোর্ট, হুমায়ুনের স্মৃতিসৌধ- সবেরই সংরক্ষণের কাজ করি। তার ছবিও প্রকাশ করি। এর মধ্যে অন্য কিছু নেই।' কিন্তু তারপরও অনেক হিন্দুত্ববাদী প্রশ্ন তুলছেন, আসল সত্যিটা কী?
Read full story in English