২৪ জুলাই, বিকেল পাঁচটা। হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ পেলাম আমরা। বক্তব্য এই: "দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সন্দীপ মণ্ডলের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিবাহিত মহিলার সঙ্গে সহবাস, পরে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ। ভবানী ভবনে সিআইডি-র কাছে অভিযোগপত্র জমা নির্যাতিতার।" পড়ে যত না অবাক হলাম, তার চেয়েও অবাক লাগল মেসেজের নীচে লেখা অভিযোগকারিণীর নাম, বাড়ির ঠিকানা এবং ফোন নম্বর দেখে। এভাবে সর্বসমক্ষে এই ধরনের মামলায় অভিযোগকারিণীর নামধাম নম্বর বিতরণ আমাদের অভিজ্ঞতায় নতুন।
মেসেজটি পেয়েছিলাম এক সহকর্মীর কাছ থেকে। পরে অন্য সহকর্মীদের কাছে শুনলাম, তাঁরাও মেসেজটি পেয়েছেন। হোয়াটসঅ্যাপে ওই মেসেজ পাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই মহিলার অভিযোগপত্রের প্রতিলিপিও আমরা পাই। সিআইডি ডিআইজি পিআর সুনীল চৌধুরীকে পাঠানো মহিলার সেই অভিযোগপত্র, যেখানে এএসপি সন্দীপ মণ্ডলের বিরুদ্ধে বিস্তারিত অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি।
যিনি নির্যাতনের শিকার, তাঁর নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর সমেত এমন মেসেজ হোয়াটসঅ্যাপে ঘুরছে! এও হয়? পেশার খাতিরেই ওই নম্বরে ফোন করেছিলাম আমরা। ফোনের ওপার থেকে ভেসে এল অভিযোগকারিণীর কন্ঠস্বর। অভিযোগ পুরোটা ফোনে জানালেন তিনি। কিন্তু তাঁর নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর উল্লেখ করে এমন মেসেজ কে ছড়ালেন হোয়াটসঅ্যাপে? এর জবাবে তিনি আমাদের জানালেন, "এ ব্যাপারে তো কিছু বলতে পারব না, কোনও আইডিয়া নেই। আমি তো এভাবে কাউকে জানাইনি।" তাঁর নামধাম প্রকাশ্যে আনার বিরুদ্ধে তো সর্বাগ্রে অভিযোগ দায়ের করা উচিৎ। এমন কাণ্ড কে ঘটালেন? ঘিরে রইল ধোঁয়াশা।
বারুইপুরের এএসপির বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ তুলেছেন কলকাতার রুবি এলাকার ওই মহিলা। এ খবর আপনারা সংবাদমাধ্যম মারফৎ পেয়েছেন। অভিযোগ সম্পর্কে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে মহিলা জানিয়েছেন, "চার বছর ধরে আমার সঙ্গে ওঁর সম্পর্ক ছিল। ২০১৪ সালে আমার প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছেদ হয়। প্রাক্তন স্বামীর বিরুদ্ধে ৪৯৮এ ধারায় মামলা করেছিলাম। সেসময় ফেসবুকে সন্দীপের সঙ্গে আলাপ। উনিই আমায় ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান। তারপর চ্যাটে আমাদের সম্পর্ক গাঢ় হয়। এরপর নম্বর দেয়ানেয়া হয়, হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলা শুরু হয়। উনি সবসময় মোটিভেট করতেন, পাশে থাকতেন।"
তাহলে কী এমন ঘটল যে সম্পর্ক তিক্ত হল? উত্তরে অভিযোগকারিণী বলেন, "আমি যখনই বিয়ের কথা বলতাম, উনি এড়িয়ে যেতেন। এ মাসের ১০ তারিখে উনি আমায় জানান, দুর্গাপুরের এক মহিলাকে উনি বিয়ে করছেন। এরপর খুব ঝগড়া হয়। ১২ তারিখ বারুইপুরে মায়ের সঙ্গে ওঁর অফিসে যাই। আমায় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়, এমন ধাক্কা মারা হয় যে, আমার নাক দিয়ে রক্ত বেরোয়। সেদিন থানার ওসি প্রণতি সাহাও ছিলেন।" এতেই শেষ নয়, নাকে আঘাত লাগার পর তাঁর চিকিৎসা করানো হয়নি বলেও অভিযোগ করেছেন ওই মহিলা। তিনি বলছেন, "ইঞ্জেকশন দিয়ে আমায় মেরে ফেলারও চক্রান্ত করা হয়। পুলিশ আমাদের পিছু নিয়েছিল।"
তবে এই প্রথমবার নয়, মাঝেমধ্যেই সন্দীপের সঙ্গে তাঁর ঝগড়া হত বলে দাবি অভিযোগকারিণীর। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "মাঝেমাঝেই ঝগড়া হত, আর উনি আমায় হোয়াটসঅ্যাপে ব্লক করে দিতেন। আবার পরে নিজে থেকে কথা বলা শুরু করতেন।"
যাঁর বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ, তিনি কী বলছেন? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে এএসপি সন্দীপ মণ্ডল বলেন, "সব অভিযোগ ভিত্তিহীন, পুরোটাই মিথ্যে, আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি।" এতেই শেষ নয়, তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই এমন চক্রান্ত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন সন্দীপবাবু।
জল আরও ঘোলা হয় যখন ঘটনার পর ফেসবুকে রুকসানা বেগম নামে এক মহিলার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পান অভিযোগকারিণী। যেখানে তাঁকে কুপ্রস্তাব দেওয়া হয় বলে দাবি করেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে আজ অভিযোগকারিনী বলেন, "গতকাল ফেসবুকে আমায় এক মহিলা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠান। চ্যাটে কুপ্রস্তাব দেন। এসব সন্দীপেরই কারসাজি।"
সন্দীপের বিরুদ্ধে সিআইডি ডিআইজি পিআরের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন ওই মহিলা। ডিআইজি পিআর তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু ১৫ দিনের মধ্যে কোনও সুরাহা না হলে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন অভিযোগকারিণী। সিআইডির কাছে অভিযোগ কেন? তাঁর মতে আপাত কারণ হলো, থানায় অভিযোগ করে লাভ হতো না।
ঘটনার জের কোনদিকে গড়ায় তা এখন বলা অসম্ভব। তবে ওই হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজটা নিয়ে ধন্দ রয়েই গেল।