তিন বছর ধরে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য আইনি লড়াই চলছিল। মঙ্গলবার আত্মঘাতী হলেন অসমের এক বৃদ্ধ। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণ করা আর হল না। বোরখাল গ্রামের বাসিন্দা মানিক দাস নামে ওই বৃদ্ধ পেশায় ছিলেন একজন শুঁটকি মাছের বিক্রেতা।
২০১৯ সালে এনআরসি থেকে নাম বাদ যাওয়ার পর ওই বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে আইনি লড়াই শুরু করেন ৬০ বছরের বৃদ্ধ। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে শুনানি চলছিল তাঁর মামলার। তাঁর পরিবারের দাবি, মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন বৃদ্ধ। তাঁর ছেলে কার্তিক দাস দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, "বাবা-সহ পরিবারের সবার নাম এনআরসিতে ছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বাবা একটি নোটিস পান, যে তাঁকে নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "আমার বাবা প্রত্যেক শুনানিতে হাজিরা দিতেন। কিন্তু আইনি জটে পড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তার উপর অর্থের জোগানও ছিল না। শুঁটকি মাছ বিক্রি করে তেমন রোজগার হত না। সংসার চালানো দায় ছিল।" হাটে বিক্রি করতে যেতেন মানিক দাস। কার্তিকের কথায়, এই মৃত্যুশোক হয়তো কেটে যাবে, কিন্তু আর্থিক যে ক্ষতি হয়েছে পরিবারের তা ঠিক হওয়ার নয়।
ছেলে বলেছেন, "মামলা-মোকদ্দমায় লাখ খানেক টাকা খসেছে। গ্রামের সবার কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন বাবা। সব কাগজপত্র ঠিক ছিল। কিন্তু বাবা চিন্তায় থাকতেন, বলতেন, কী ভাবে বাঁচব! সবাই জানতাম মানসিক ভাবে প্রভাব পড়েছে বাবার উপর। কিন্তু এমন চরম পদক্ষেপ করবেন সেটা আশা করিনি। আমরা শোকাহত।" ৩৫ বছরের কার্তিক পেশায় ছুতোর মিস্ত্রি।
আরও পড়ুন তাঁর আমলেই অর্থনীতিতে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে উত্তর প্রদেশ, দাবি যোগীর
মানিক দাসের আইনজীবী দীপক বিশ্বাস বলেছেন, "মক্কেলের পরিচয়পত্র-সহ সব জরুরি কাগজপত্র ছিল। প্যান থেকে শুরু করে আধার, জমির দলিল সব। কিছু কাগজপত্র তাঁর মায়ের নামে সংযুক্ত ছিল। শুনানিতে নিয়ম করে হাজিরা দিতেন। মাস খানেক আগে শুনানি ছিল। ট্রাইব্যুনালে নিজের উত্তর জানিয়েছিলেন আমার মক্কেল। এর পর সাক্ষী পেশ করার কথা ছিল পরের শুনানিতে।" আইনজীবীর আশা, ট্রাইব্যুনালে নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারতেন মানিক দাস।
সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের খবর অনুযায়ী, গত রবিবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন ওই বৃদ্ধ। মঙ্গলবার সন্ধেয় বাড়ির কাছে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, আত্মহত্যা করেছেন মানিক দাস।