/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/08/cow-759.jpg)
শিলচরের বিধায়ক দিলীপ কুমার পাল সম্প্রতি দাবি করেন, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মতো সুরে বাঁশি বাজাতে পারলে গরুরা বেশি দুধ দেয়। প্রতীকী ছবি।
একদিকে যখন এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশকে সামনে রেখে অসমের বাংলাভাষী সম্প্রদায় চিন্তিত এবং খানিকটা আতঙ্কিত, তখন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের আজব বৈজ্ঞানিক দাবি সাব্যস্ত করতেই ব্যস্ত। অসম বিধানসভার প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ তথা দু'বারের শিলচরের বিধায়ক দিলীপ কুমার পাল সম্প্রতি দাবি করেছেন, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মতো সুরে বাঁশি বাজাতে পারলে গরুরা বেশি দুধ দেয়। এসব নাকি বৈজ্ঞানিকরা পরীক্ষা করে সত্যতার প্রমাণ পেয়েছেন।
সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশের বিজেপি নেতা সাধ্বী প্রজ্ঞা দাবি করেন কংগ্রেসের কালোজাদুর ফলে বিজেপির বরিষ্ঠ নেতারা একের পর এক মারা যাচ্ছেন। এদিকে বিপ্লব দেব ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর একের পর এক অতি-বৈজ্ঞানিক দাবি করে গেছেন। এই তালিকায় এবার নাম লেখালেন অসম বিজেপির বরিষ্ঠ নেতা দিলীপ কুমার পাল। রবিবার সন্ধ্যায় শিলচরের জেলা গ্রন্থাগার প্রেক্ষাগৃহে লোকসংস্কৃতি উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়ে দিলীপ কুমার পাল বলেন, ‘‘আমাদের প্রাচীনকালের ভারতীয় সংস্কৃতির প্রত্যেকটি কাজ বিজ্ঞানসম্মত। আজ সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা এসব মেনে নিয়েছেন এবং তাঁরা একের পর এক বিষয় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। আমি বিজ্ঞানী না হলেও ভারতীয় সংস্কৃতির সম্পূর্ণ জ্ঞান রয়েছে আমার মধ্যে। তাই এটা বলতে পারি, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যে বিশেষ সুরে বাঁশি বাজাতেন, সেই বিশেষ সুরে বাঁশি বাজাতে পারলে এখনও গাভী সাধারণ পরিমাণ থেকে অনেক বেশি দুধ দেয়। সেই বিশেষ সুরে বাঁশি বাজালে গাভীর দুধ বৃদ্ধি পায় এটা বিজ্ঞানসম্মত’’।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/08/dilip-paul.jpg)
আরও পড়ুন:কর্মরত বিএসএফ জওয়ান আসামে বিদেশি ঘোষিত
২০১৪ সালে শিলচরের তৎকালীন বিধায়িকা সুস্মিতা দেব সাংসদ হিসেবে বিজয়ী হওয়ায় মধ্যবর্তী কারেন নির্বাচন হয় এবং সেখানে বিজয়ী হন বিজেপি প্রার্থী দিলীপ কুমার পাল। তার ১৭ মাস পরে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে আবার বিপুল ভোটে শিলচর থেকে জয়ী হন দিলীপ। তিনি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষ মোহন দেবের স্ত্রী এবং সুস্মিতা দেবের মা বিথীকা দেবকে প্রায় ৪০ হাজার ভোটে হারিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল দিলীপ কুমার পালকে অসম বিধানসভার উপাধ্যক্ষ হিসাবে নিযুক্ত করেন। অসম রাজ্যে বাঙালি বিধায়ক হিসেবে এটি অবশ্যই একটি বিশেষ প্রাপ্তি ছিল। তবে দু’বছরের মাথায় ২০১৮ সালের মে মাসে তিনি পদ থেকে সরে দাঁড়ান। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটির বরাক উপত্যকার সফরের ঠিক একদিন আগে ফেসবুকে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন দিলীপ কুমার পাল।
বরাক উপত্যকার তিন জেলায় প্রায় ৩৫ লক্ষ বাংলা ভাষাভাষী মানুষের বসবাস রয়েছে। অসম বিধানসভা ১২৬ টি আসনের মধ্যে ১৫টি বরাক উপত্যকার তিন জেলা থেকে রয়েছে। পনেরো জন বিধায়কের বেশির ভাগই বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর। গতবছর চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশের পর এই এলাকা থেকে প্রায় চার লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়েছিল। বলাই বাহুল্য এদের অধিকাংশ বাঙালি ছিলেন। তবে বাদপড়া মানুষের একাংশের অভিযোগ, উপত্যকার জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের পাশে এসে দাঁড়াননি অথবা তাঁদের হয়ে বিধানসভায় জোরালো আওয়াজ তোলেননি।
আরও পড়ুন:বিরোধীরা বাণ মারছে বলেই কি অসময়ে মারা যাচ্ছেন বিজেপি নেতারা?
এবছর ফেব্রুয়ারি মাসে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে শিলচরে এসে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী কথা দিয়েছিলেন, অসম রাজ্যে আসাম চুক্তির ৬-নম্বর ধারা বাস্তবায়ন হবে। এই ধারায় বলা হয়েছে, অসমিয়া জনগণের সাংস্কৃতিক, সামাজিক, ভাষিক ঐতিহ্য ও পরম্পরার সুরক্ষা, সংরক্ষণ এবং বিকাশের জন্য প্রয়োজন অনুসারে সাংবিধানিক, আইনগত ও প্রশাসনিক সুরক্ষা প্রদান করা হবে। এটি বাস্তবায়নের জন্য নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সম্প্রতি রাজ্য সরকারের তরফে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এব্যাপারে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক খিলঞ্জিয়া জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে পরামর্শও চাওয়া হয়েছে। তবে রাজ্যের এত বড় একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে হিন্দু বাঙালির কোনও প্রতিনিধিত্ব রাখা হয়নি, এমনটাই অভিযোগ সারা আসাম হিন্দু বাঙালি অ্যাসোসিয়েশন (আভা)'র সদস্যদের। তাঁদের অভিযোগ, বরাক উপত্যকার জনপ্রতিনিধিরা এই সময় দাঁড়িয়ে বাঙালি জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে আওয়াজ তুলছেন না। অথচ অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে আবোল তাবোল বক্তব্য রাখতে জনপ্রতিনিধিরা তৎপর।
আরও পড়ুন: এনআরসি আসছে, ভয়ে কাঁপছে বিজেপি
গত বছর দিল্লিতে মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী হিসেবে সুস্মিতা দেব এক প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন। সে সময় পুলিশের মুখোমুখি হওয়ার জন্য দলের এক পুরুষ সমর্থকের ঘাড়ে চড়েছিলেন সুস্মিতা। সেই ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয় এবং দিলীপ কুমার পাল বেশ কয়েকবার সুস্মিতা দেবকে নিয়ে কটুক্তি করেন। তিনি সুস্মিতাকে 'শিলচরের কলঙ্ক' বলে আখ্যা দিয়েছিলেন এবং 'পঞ্চাশ বছরের অবিবাহিতা মহিলা' বলেও ব্যঙ্গ করেছিলেন।
দিলীপ কুমার পালের সুরেই উত্তর প্রদেশ থেকে আসা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা উমেশ পাড়োয়াল সম্প্রতি দাবি করেন, গরু নাকি একমাত্র প্রাণী যা জন্মের পর থেকেই নিজের মাকে 'মা' বলে সম্বোধন করে। তিনি এও বলেন, গরুই সারা বিশ্বের মানুষকে 'মা' ডাকটি শিখিয়েছে তাই প্রাণীটির প্রতি সবার কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তরফে এবার বরাক উপত্যকায় বিরাট ভাবে জন্মাষ্টমী অনুষ্ঠান উদযাপন করা হয়েছিল। এতে যোগ দিতে এসেই পরিষদের নেতা তথা স্বঘোষিত গো-রক্ষক কথাটি বলেন।