এনআরসি থেকে যাঁদের নাম বাদ পড়েছে, তাঁদের ভবিষ্যৎ স্থির হবে ফরেনার্স ট্রাইবুনালে। এদিকে সেই ট্রাইবুনালেই নোটশিটে প্রথমে ভারতীয় বলে দেখানো সত্ত্বেও পরে রায়ে বিদেশি বলে ঘোষণা করা হয়েছে। গৌহাটি হাইকোর্ট এ ধরনের ঘটনায় ফরেনার্স ট্রাইবুনালের কাজে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, এবং শুধু মরিগাঁও জেলায় ট্রাইবুনালের দেওয়া ৫৭টি নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করেছে।
হাইকোর্ট বলেছে, সাধারণভাবে এ ধরনের ঘটনায় শৃঙ্খলাজনিত বা অন্য ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ ব্যাপারে ট্রাইবুনালের এক প্রাক্তন সদস্যের দেওয়া নির্দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে আদালত।
১৯ লক্ষ মানুষ আসামের এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। তাঁদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য আাসামের বর্তমান ১০০টি ফরেনার্স ট্রাইবুনাল ছাড়াও আরও ২০০টি নতুন ট্রাইবুনাল চালু করা হতে চলেছে। এ ছাড়া আরও ২০০ ট্রাইবুনাল এ বছরের শেষে তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা।
১৯ সেপ্টেম্বরের রায়ে বিচারপতি মনোজিৎ ভুঁইয়া বলেছেন, "মরিগাঁওয়ের ৪ নং বিদেশি ট্রাইবুনালের দেওয়া উক্ত ৫৭টি নির্দেশ আইনের চোখে যথাযথ নয় এবং সেগুলি খারিজযোগ্য, ফলে তা খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। এই ৫৭টি আবেদনের শুনানি সংশ্লিষ্ট পর্যায় থেকে নতুন করে শুরু করতে হবে। ট্রাইবুনাল সদস্য এ ব্যাপারে নতুন তারিখ দিয়ে নতুন নোটিস দেবেন।"
আদালতের নির্দেশে আরও বলা হয়েছে, উক্ত ৫৭টি ক্ষেত্রে মরিগাঁওয়ের পুলিশ সুপার (সীমান্ত) বা ডেপুটি কমিশনারকে কোনও ব্যবস্থাগ্রহণ করতে হবে না।
মরিগাঁওয়ের পুলিশ সুপার স্বপ্ননীল ডেকার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নির্দেশের কপি হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন।
২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল মরিগাঁওয়ের ৪ নং ফরেনার্স ট্রাইবুনালের সদস্য মৌসুমী ডেকার একটি ই মেলের ভিত্তিতে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করে। আসাম সরকারের মুখ্যসচিব, রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরকে ওই মেল করা হয়েছিল। মেলের কপি পাঠানো হয়েছিল গৌহাটি হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার (বিচার বিভাগ)-কেও।
ওই মেলে তিনি জানান, তাঁর আগের সদস্য ২৮৮টি রেফারেন্সের কাজ শেষ করলেও এ ব্যাপারে স্বাক্ষর ও মতামত সংবলিত যে রেকর্ড থাকার কথা তা নেই।
পূর্বতন সদস্যের উল্লেখ করে হাইকোর্ট অসন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং তা অপ্রত্যাশিত বলে জানিয়েছে। ২৮৮টি মামলা খতিয়ে দেখে হাইকোর্ট জানিয়েছে, ৫৭টি মামলার রায়ে গরমিল পাওয়া গিয়েছে।
গরমিলগুলি এইরকম
-১১টি মামলার রেকর্ডে রায় পাওয়া যায়নি।
- ৬টি ক্ষেত্রে রায়ের কপি ও নির্দেশের কাগজের মধ্যে ফারাক রয়েছে। এর মধ্যে তিনিটি ক্ষেত্রে রিপোর্টে লেখা রয়েছে নোট শিটে ভারতীয় বলে ঘোষিত, কিন্তু মতামত দেবার সময়ে বিদেশি ঘোষিত।
৫টি ক্ষেত্রে দুরকম রায় পাওয়া গিয়েছে।
৩২টি ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিদেশি বলে ঘোষণা করে দেওয়ার পর, সে রায় খারিজ না করেই ফের তাঁদের ভারতীয় বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
দুটি মামলায় নামের গরমিল পাওয়া গিয়েছে।
একটি ক্ষেত্রে বিদেশি বলে সন্দেহভাজন ব্যক্তির মৃত্যু ঘটায় তা অসম্পূর্ণ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।