আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে আসামের জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) প্রক্রিয়ায় সাহায্য করতে যে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্যে মোতায়েন ছিল, তা তুলে নিতে চেয়ে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের রোষের মুখে পড়ল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কড়া ভাষায় মন্ত্রকের সমালোচনা করে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বলেন, কেন্দ্র নাগরিক পঞ্জি প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিতে বদ্ধপরিকর। "দেখেশুনে মনে হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চায় না যে এনআরসি প্রক্রিয়া চলুক, এবং এখন সবরকম ভাবে প্রক্রিয়া ধ্বংস করার চেষ্টা করছে," বলেন বিচারপতি গগৈ।
আসাম সরকারের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন যে ভোটের আগে মনোনয়ন পত্র তুলে নেওয়ার শেষ দিন থেকে শুরু করে ভোটদানের দিন পর্যন্ত গোটা এনআরসি প্রক্রিয়াটিই বন্ধ রাখতে হতে পারে। কেন্দ্রের তরফে ভারতের অ্যাটর্নি জেনারেল কে.কে. বেণুগোপাল বলেন যে আসাম থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী তুলে নিয়ে ফের মোতায়েন করতে হলে এনআরসি প্রক্রিয়ার সময়সীমা দু'সপ্তাহ বাড়িয়ে দিতে হতে পারে। দু'পক্ষেরই বক্তব্য খারিজ করে দিয়ে বিচারপতি গগৈ বলেন, আসাম এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের সময়সীমা ৩১ জুলাইয়ের বেশি আর বাড়ানো সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন: আসামে এনআরসি-র জন্য জমা পড়ল ৩০ লক্ষ আবেদন
অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বিচারপতি গগৈ বলেন, সরকার এনআরসি প্রক্রিয়া চালাতে কোনোরকম সহযোগিতা করছে না। তাঁর কথায়, "চাইলে এনআরসি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার ১০০১ রকম উপায় আছে। আপনারা কি চান যে আমরা স্বরাষ্ট্র সচিবকে তলব করি?"
এই শুনানির কয়েক ঘন্টার মধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিং জোর দিয়ে বলেন যে সরকার আসাম এনআরসি প্রক্রিয়া সময়সীমার মধ্যে সম্পন্ন করতে দায়বদ্ধ, এবং এও নিশ্চিত করতে দায়বদ্ধ যে কোনো বিদেশী তালিকায় থাকবেন না, আবার কোনো ভারতীয় বাদ পড়বেন না।
তিনি আরও বলেন যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চায় যে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি, যা মূলত আসামের নাগরিকদের তালিকা, স্বচ্ছভাবে সম্পূর্ণ হোক, যে কারণে রাজ্য সরকারকে সবরকম সাহায্য করা হয়েছে, আর্থিক সহায়তাও প্রদান করা হয়েছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে তিনি জানান, "আমাদের সরকার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এনআরসি সম্পূর্ণ করতে দায়বদ্ধ, যাতে কোনো বিদেশী তালিকাভুক্ত না হন, বা কোনো ভারতীয় বাদ না পড়েন।"
আরও পড়ুন: আসাম এনআরসি আপডেটের সময়সীমা বাড়ল
উল্লেখ্য, ৫০ হাজারেরও বেশি রাজ্য সরকারি কর্মচারী যেহেতু ইতিমধ্যেই এনআরসি কর্মকাণ্ডে নিযুক্ত রয়েছেন, এনআরসি তালিকা তৈরি করার পাশাপাশি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা প্রশাসনের কাছে আতঙ্কের বিষয় হয়ে ওঠার সম্ভাবনা।
এই সমস্যার কথা মাথায় রেখেই শীর্ষ আদালত নির্বাচন কমিশনের কাছে জানতে চেয়েছে, কিছু রাজ্য সরকারি কর্মচারীকে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া যায় কিনা, যাতে এনআরসি প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে চালানো যায়।
এই মামলার শেষবারের শুনানির দিন রাজ্য এনআরসি সমন্বয়কারী প্রতীক হাজেলা আদালতকে জানিয়েছিলেন যে, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ তারিখের মধ্যে এনআরসি সংক্রান্ত সমস্ত আবেদন এবং আপত্তি নথিভুক্ত করা হয়, এবং "প্রায় ৩৬.২ লক্ষ আবেদন ও দু লক্ষ আপত্তি" জমা পড়ে। হাজেলা আরও জানান, সমস্ত আবেদন সংক্রান্ত শুনানি শুরু হবে ১৫ ফেব্রুয়ারি, এবং আবেদনকারীদের ১৫ দিনের নোটিশ দেওয়া হবে।
Read the full story in English