Advertisment

আসাম গণহত্যা: আপন হারিয়ে এখনও শোকে বিহ্বল ওঁরা

সেদিনের হামলা প্রত্যক্ষ করেছেন নিহত অবিনাশ বিশ্বাসের স্ত্রী উর্মিলা, ছোট ভাই সুশেন, ও জুনমনি সোনওয়াল নায়েক নামে এক তরুণী, যিনি বিশ্বাস বাড়িতে এসেছিলেন সেদিন। এঁদের স্মৃতিচারণায় ফিরল সেই সন্ধের কাহিনী।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
assam, আসাম

শোকে বিহ্বল পরিজনরা।

পাঁচ বাংলাভাষীকে হত্যার ঘটনায় এখনও থমখমে আসাম। আশির দশকের সেই আতঙ্ক যেন আবার জায়গা করে নিয়েছে আসামবাসীদের মনে। বৃহস্পতিবার সন্ধেয় তিনসুকিয়ার ঢোলা এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ডেকে নিয়ে গিয়ে পাঁচজন বাংলাভাষীকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছে। সেদিনের সেই হামলা থেকে প্রায় অলৌকিকভাবে প্রাণ ফিরে পেয়েছেন সহদেব নমশূদ্র। সেদিনের সেই অভিশপ্ত ঘটনার যাঁরা প্রত্যক্ষদর্শী, তাঁদের একরাশ আতঙ্ক গ্রাস করে রয়েছে। সহদেবের পাশাপাশি, সে নিধনযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করেছেন নিহত অবিনাশ বিশ্বাসের স্ত্রী উর্মিলা (২১), অবিনাশের ছোট ভাই সুশেন (২২) ও জুনমনি সোনওয়াল নায়েক নামে বছর কুড়ির এক তরুণী, যিনি বিশ্বাস বাড়িতে এসেছিলেন সেদিন। এঁদের স্মৃতিচারণায় ফিরল সেই সন্ধের কাহিনী।

Advertisment

সেদিনের সেই সন্ধের বর্ণনা দিতে গিয়ে জুনমনি সোনওয়াল নায়েক জানিয়েছেন, চারজন লোক বাড়িতে ঢুকে অনন্ত ও সহদেবকে তাদের সঙ্গে যেতে বলে। বাড়ির মধ্যেই একটি ঘরে তাঁদের মোবাইল রিচার্জের দোকান ছিল, সেখানে ছিলেন অনন্ত ও সহদেব। নায়েক বলেন, "ওরা অসমিয়া ভাষায় কথা বলছিল। বলেছিল, ওদের কিছু কথা আছে, হয়ে গেলে অনন্ত, সহদেবকে ফেরত পাঠানো হবে।"

সেদিনের হামলায় নিহত অবিনাশ বিশ্বাস সেই ভয়াবহ ঘটনার ঠিক আগে দু'বছরের মেয়ে তানিশার সঙ্গে ছিলেন। জলপাই রঙের পোশাক পরা ওই লোকেরা অবিনাশকেও যেতে বলে। এ প্রসঙ্গে অবিনাশের স্ত্রী উর্মিলা জানিয়েছেন, "মেয়েকে আমার কাছে দিয়ে আমার স্বামী ওদের সঙ্গে যান। ওদের পোশাক দেখে সবাই ভেবেছিল ওরা সেনাবাহিনীর লোক।"

আরও পড়ুন: অসমে খুন ৫ বাংলাভাষী দিনমজুর, ক্ষুব্ধ মমতার প্রশ্নের মুখে এনআরসি

তাও ওই হামলাকারীদের পিছন পিছন দৌড় লাগিয়েছিলেন উর্মিলা, সুশেন, নায়েকরা। নায়েক বলেন, "ওরা বন্দুক উঁচিয়ে আমাদের ভয় দেখাচ্ছিল...আমাদের ফিরে যেতে বলেছিল। আমরা খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তাই ঘরের মধ্যে চলে আসি।" হামলাকারীদের আগমনে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল অবিনাশ ও অনন্তের বাবা মোহনলালের। বৃদ্ধ বলেন, "টর্চ নিয়ে দরজার দিকে এগিয়েছিলাম কিন্তু কাউকে দেখতে পাইনি। ওরা তখন মনে হয় ব্রিজে চলে গিয়েছিল। কয়েক মিনিট বাদে বিকট শব্দ শুনতে পেলাম, বাজি ফাটার মতো শব্দ।"

গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, মুদির দোকান থেকে শ্যামলাল বিশ্বাসকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল হামলাকারীরা। বিশ্বাস বাড়ির অদূরেই ছিল শ্যামলালের মুদিখানা। অন্যদিকে, সুবল দাস ও ধনঞ্জয় নমশূদ্রকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। মোহনলাল আরও জানান, "কয়েকজন গ্রামবাসী জড়ো হয়েছিলেন, ওঁরা ব্রিজের দিকে হাঁটা দেন। আমরা তিনজনকে মৃত অবস্থায় পাই। শ্যামলাল আর সুবল রক্তাক্ত অবস্থায়, আর সহদেব খালের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল।"

এ ঘটনার পিছনে ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম বা উলফার হাত রয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ। যদিও এ ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই বলে জানিয়েছে উলফা। সাদিয়ার পুলিশ সুপার পি এস চাংমাই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, "কমপক্ষে ৩৮টি খালি এ কে-৪৭ রাইফেলের কার্তুজ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।" ছ'জনকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল হামলাকারীরা, যাঁদের মধ্যে প্রাণে বেঁচেছে ১৭ বছরের সহদেব। নিহত হয়েছেন শ্যামলাল বিশ্বাস (৬০), অনন্ত বিশ্বাস (১৮), অবিনাশ বিশ্বাস (২৫), সুবল দাস (৬০) ও ধনঞ্জয় নমশূদ্র (২৩)। নিহত পাঁচজনই মূলত কৃষক ছিলেন। যদিও শ্যামলালের একটা মুদির দোকান ছিল, এবং অবিনাশ মোবাইল রিচার্জের দোকান চালাতেন। গতকালই ময়নাতদন্তের পর পাঁচজনের দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। শুক্রবার রাজ্য ডিজিপি কুলধর সইকিয়া সহ আসাম পুলিশের তিন শীর্ষ আধিকারিক নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন।

এদিকে, বাংলাভাষীদের উপর হামলার ঘটনায় সোচ্চার হয়েছে অল আসাম বেঙ্গলি ইয়ুথ স্টুডেন্ট ফেডারেশন। সংগঠনের সম্পাদক বিজয় চন্দ বলেছেন, "বাঙালীদের বিরুদ্ধে ঘৃণার ফল। গরিবদেরকেই মূল্য দিতে হচ্ছে। হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার দাবি অস্বীকার করেছে উলফা। তাহলে প্রশ্ন উঠছে, এর পিছনে কী কারণ? হামলাকারীদের সঙ্গে রাইফেল ছিল কী করে?"

অন্যদিকে, এ ঘটনার পরই তৎপর হয়েছে পুলিশ। বন্দুকধারীদের ধরতে তল্লাশি অভিযান শুরু করা হয়েছে। শুক্রবার জীতেন দত্ত ও মৃণাল হাজারিকা নামের দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Read the full story in English

Assam national news
Advertisment