১৮ মাসের ছেলের খাবারের জন্য় লাইনে দাঁড়িয়েছেন সাহিবা। ক্য়ান্সার আক্রান্ত একরত্তি শিশুর শরীরে যাতে কোনওভাবেই ভাইরাস থাবা বসাতে না পারে, সে নিয়েই দুশ্চিন্তার শেষ নেই সাহিবার। ছেলের চিকিৎসার জন্য় মুম্বইয়ে এসেছেন ২৩ বছরের সাহিবা। কিন্তু করোনার হানায় সবকিছু ওলটপালট করে দিয়েছে। ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে ক্য়ান্সার আক্রান্ত রোগীদের আপাতত ঠাঁই হয়েছে অস্থায়ী শিবিরে। মুম্বইয়ের বান্দ্রার একটা হল ঘরেই আপাতত দিনযাপন হচ্ছে তাঁদের।
সাহিবার ১৮ মাসের ছেলে নূর আলির কেমোথেরাপি চলছিল টাটা মেমোরিয়্য়াল হাসপাতালে। করোনার জেরে হাসপাতালের ক্য়ান্সার আক্রান্ত রোগীদের অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তবে শুধু নূর আলিই নয়, হাসপাতালের প্রায় ১৭ জন রোগীকে অস্থায়ী শিবিরে সরানো হয়েছে। তবে এর আগে তাঁদের ঠাঁই হয়েছিল হাসপাতালের বাইরের ফুটপাথে।
তবে মুম্বইয়ের বান্দ্রার ওই অস্থায়ী শিবিরে জায়গার অভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় কার্যত নৈব নৈব চ। আর এটাই চিন্তা বাড়িয়েছে সাহিবাদের। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ''খুবই দুশ্চিন্তায় রয়েছি। একজনের ঠান্ডা লাগলে, সকলের ঠান্ডা লাগছে। সকলে বলছেন, এভাবেই নাকি ভাইরাস ছড়ায়''।
গত শুক্রবার ওই অস্থায়ী শিবির ঘুরে দেখেছিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। সেখানে ১০১ জনের থাকার ব্য়বস্থা রয়েছে। একটাই শৌচাগার রয়েছে। সাহিবার স্বামী জাফরের কথায়, ''এর থেকে হাসপাতালের বাইরে রাস্তার উপর আশ্রয়ই শ্রেয় ছিল। সেখানে অনেকটা জায়গা ছিল''।
তিনি আরও বললেন, ''ছেলের চিকিৎসার জন্য় মধ্য়প্রদেশ থেকে এখানে এসেছি। মুম্বইয়ে বাড়ি ভাড়া নেওয়ার মতো সামর্থ্য় নেই। তাই হাসপাতালের বাইরে রাস্তার উপরই আশ্রয় নিয়েছিলাম''।
সাহিবার মতোই একই হাল উত্তরপ্রদেশের কেশরী পরিবারের। ঊষাদেবী কেশরীর স্বামী সুরেন্দ্রও ক্য়ান্সারে আক্রান্ত। তাঁরাও ওই অস্থায়ী শিবিরের বাসিন্দা এখন। তাঁর কথায়, ''আমার শাশুড়ি মা গ্রামে ফিরে যেতে বলছেন। কিন্তু কীভাবে যাব! ওর এখনও চিকিৎসা চলছে''।
লকডাউন ঘোষণার আগে মধ্য়প্রদেশ থেকে মুম্বইয়ে এসেছিলেন সঞ্জয় কুমার ও তাঁর পরিবার। তাঁর পা ব্য়ান্ডেজ করা। কিন্তু এখনও ডাক্তাররা তাঁর দেখভাল করেননি বলে দাবি করেছেন সঞ্জয়ের ভাই বিজয় কুমার। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ''ইমার্জেন্সি হলে অন্য় কোথাও দেখান''।
করোনায় লকডাউন পরিস্থিতিতে আটকে পড়েছেন বেগুসরাইয়ের বাসিন্দা মহম্মদ তনবীর ও বিহারের কিরণ মণ্ডলও। তনবীরের কথায়, ''এর থেকে টাটা হাসপাতালের বাইরে থাকা ভাল ছিল''।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন