সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) শীর্ষ সম্মেলনে আবারও চীনের আশায় বড় ধাক্কা দিয়েছে ভারত। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পকে ভারত সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। ভারত এসসিওর একমাত্র সদস্য যারা সরাসরি চীনের বিআরআই-এর বিরোধিতা করেছে এবং সমর্থন করতে অস্বীকার করেছে। যেখানে অন্য সব দেশ বিআরআইকে সমর্থন করেছে। ভারত একে সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি বলে অভিহিত করেছে।
মঙ্গলবার ভারত আবারও চিনের 'বেল্ট অ্যান্ড রোড' প্রকল্পকে (বিআরআই) সমর্থন করতে অস্বীকার করেছে। এর সঙ্গে সঙ্গে এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে ভারত একমাত্র দেশ হয়ে উঠেছে যারা প্রকল্পটিকে সমর্থন করেনি। পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্য দিয়ে যাওয়া চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (CPEC) নিয়ে ভারত তীব্র আপত্তি জানিয়ে আসছে।
রাশিয়া, পাকিস্তান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান এবং উজবেকিস্তান বিআরআই-এর প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। ভারত আয়োজিত ভার্চুয়াল এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে বিআরআই নিয়ে নিজেদের অবস্থান ফের একবার স্পষ্ট করেছে। চিনের সঙ্গে চলমান সীমান্ত বিরোধের প্রশ্নে মোদী বলেন, ‘একে অপরের প্রয়োজন এবং সংবেদনশীলতাকে বোঝা এবং আরও ভাল সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে সমস্ত চ্যালেঞ্জের সমাধান করা আমাদের সাধারণ দায়িত্ব’।
বিআরআই নিয়ে নিজের অবস্থানে অটল থেকে ভারত চিনকে তার নিজের ভাষায় উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। যদিও রাশিয়া, পাকিস্তান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান এবং উজবেকিস্তান এতে তাদের সমর্থন দেখিয়েছে, অন্যদিকে ভারত চিনের সামনে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। ভারত বিআরআই-এর বিরোধিতা এই প্রথম নয়। বহুবার ভারত এ বিষয়ে মতানৈক্য প্রকাশ করেছে। এই ভার্চুয়াল কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সমগ্র অঞ্চলের যোগাযোগ বাড়ানোর পক্ষে জোরালো সওয়াল করেন।
ভারত চিনের এমন কোন প্রকল্পকে সমর্থন করে না, যা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। ভারতের বিআরআইকে সমর্থন না করার সবচেয়ে বড় কারণ হল চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর, যা প্রকল্পের একটি অংশ। এই প্রকল্পটি সেই অবৈধভাবে পাকিস্তানের দখলকৃত অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে।
মোদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, তার রুশ প্রতিপক্ষ ভ্লাদিমির পুতিন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ এবং অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করা প্রয়োজন: মোদী
শীর্ষ সম্মেলনে তার উদ্বোধনী ভাষণে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সংযোগ প্রচারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন, কিন্তু জোর দিয়ে বলেন যে এই ধরনের প্রচেষ্টা অবশ্যই SCO সনদের মৌলিক নীতিগুলিকে সম্মান করতে হবে, বিশেষ করে সদস্য রাষ্ট্রগুলির সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সন্ত্রাসবাদকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তির জন্য বড় হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে একহাত নিয়েছেন। তিনি এদিনের শীর্ষ সম্মেলনের ভাষণে বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন এবং এ জাতীয় গুরুতর বিষয়ে সদস্য দেশগুলির ঐক্যমত নিয়ে কোন অবকাশ থাকা উচিত নয়’। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ‘আরও ভাল সংযোগ কেবল পারস্পরিক বাণিজ্য বাড়ায় না, পারস্পরিক আস্থাও বাড়ায়, তবে এই প্রচেষ্টাগুলিতে, এসসিও সনদের মূল নীতিগুলি, বিশেষ করে সদস্য রাষ্ট্রগুলির সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মান জানানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’। আফগানিস্তানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ‘বিগত দুই দশকে আমরা আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছি’।