প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বহু প্রতীক্ষিত অটল সেতুর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অটল সেতু ভারতের দীর্ঘতম সেতু এবং এটি দেশের দীর্ঘতম সমুদ্র সেতুও।
এই সেতুটি প্রায় ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ ছয় লেনের সেতু, যার দৈর্ঘ্য সমুদ্রে প্রায় ১৬.৫ কিলোমিটার এবং স্থলভাগে প্রায় ৫.৫ কিলোমিটার। এটি মুম্বই থেকে পুনে, গোয়া এবং দক্ষিণ ভারতে ভ্রমণের সময়ও অনেকটাই কমিয়ে দেবে।
এই সেতুতে শুধুমাত্র চার চাকার গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে। এর জন্য একদিকে ২৫০ টাকা টোল ট্যাক্স নেওয়া হবে। এর মাধ্যমে মাত্র ১৫ মিনিটেই দুই ঘণ্টার দূরত্ব অতিক্রম করা সম্ভব হবে
শনিবার সকালে যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে অটল সেতু। এর আগে, মুম্বই ট্র্যাফিক পুলিশ সোশ্যাল মিডিয়া সাইট এক্স-এ সেই যানবাহনের তালিকা শেয়ার করেছে যেগুলি সেতুতে চলতে দেওয়া হবে না।
মুম্বই ট্রাফিক পুলিশ যে গাড়িগুলিকে এই সেতুতে চলাচলের অনুমতি দেয়নি। এর মধ্যে রয়েছে মোটরসাইকেল, মোপেড, থ্রি-হুইলার টেম্পো, অটোরিকশা, ট্রাক্টর, ধীরগতির যানবাহন।
আজ ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অটল সেতুর উদ্বোধন করেন। মুম্বইয়ের সেওরি থেকে রায়গড়ের নাভা সেভা পর্যন্ত যাবে এই সেতু।
মুম্বই থেকে নভি মুম্বইয়ের সংযোগকারী এই সেতুটি দেশের বৃহত্তম সমুদ্র সেতু যা ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মাধ্যমে দক্ষিণ মুম্বই থেকে নভি মুম্বইয়ের দূরত্ব অনেকটাই কমে যাবে। এই সেতুর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এর নিচ দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কার্গো জাহাজ অনায়াসেই চলাচল। এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন ৭০ হাজার যানবাহন চলাচল করবে বলে জানা গিয়েছে। ৪০০টি এআই প্রযুক্তির ক্যামেরার সাহায্যে ২৪ ঘণ্টা চালানো হবে এই সেতুতে। ১৭,৮৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ লেনের অটল সেতু তৈরি করা হয়েছে। প্রায় ২২ কিলোমিটারের এই পুরো অংশের মধ্যে ১৬.৫০ কিলোমিটার সম্পূর্ণ সমুদ্রের উপরে থাকবে।
জেনে নিন সেতুটির বিশেষত্ব কী
মুম্বই ট্রান্স হারবার লিঙ্কে (MTHL) চার চাকার গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা হবে ১০০ কিমি প্রতি ঘণ্টা, মুম্বই পুলিশ বুধবার এতথ্য জানিয়েছে। এই সেতুর মাধ্যমে মুম্বই এবং নভি মুম্বইয়ের মধ্যেকার দূরত্ব মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে দূরত্ব কভার করা সম্ভব হবে। যেটা অতিক্রম করতে বর্তমান ২ ঘন্টা সময় লাগে।
সেতুইয়ে উঠা এবং নামার সময় যান বাহনের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে বলেই প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। গাড়ি, ট্যাক্সি, হালকা মোটর যান, মিনিবাস এবং টু-এক্সেল বাসের মতো যানবাহনের গতিবেগ নির্ধারত করা হয়েছে প্রতি ঘন্টায় ১০০ কিলোমিটার। সমুদ্র সেতুতে মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ও ট্রাক্টর চলাচল করতে পারবে না।
সেতুটিতে ৪০০টি এআইসিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এই সেতু থেকে ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রের (বিআরসি) কোনো ছবি বা ভিডিও যাতে তোলা না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য একটি ভিউ ব্যারিয়ার স্থাপন করা হয়েছে। এমনভাবে লাইট বসানো হয়েছে যে সেগুলি শুধুমাত্র সেতুর উপর পড়ে এবং সামুদ্রিক প্রাণীদের ক্ষতি করে না।
সেতুর টোল ট্যাক্স ধার্য করা হয়েছে ২৫০ টাকা। এই সেতু ব্যবহার করে প্রতি বছর এক কোটি লিটার জ্বালানি সাশ্রয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, দূষণের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি প্রায় ২৫,৬৮০ মেট্রিক টন CO2 নির্গমন কম হবে।
MMRDA নথিতে বলা হয়েছে যে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন গড়ে মোট ৫,৪০৩ জন কর্মী এবং ইঞ্জিনিয়ার প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করার জন্য কাজ করেছেন। প্রকল্পটি নির্মাণ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন সাত শ্রমিক। শ্রমিকদের অধিকাংশই বিহার, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব এবং মহারাষ্ট্রের। ২০১৮ সালে এই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এটি সাড়ে চার বছরে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও কোভিড -১৯ এর কারণে সেতুর নির্মাণ আট মাস বিলম্বিত হয়েছিল।
অটল সেতু নির্মাণের ফলে মুম্বই এবং পুনে এক্সপ্রেসওয়ে এবং গোয়া হাইওয়ের মধ্যে দূরত্বও কমে গিয়েছে। এটি একটি ৬ লেনের আধুনিক সেতু। প্রতিটি লেন ৩.৫ মিটার চওড়া। এই সেতু নির্মাণে প্রায় ১৭৭,৯০৩ মেট্রিক টন ইস্পাত এবং ৫০৪,২৫৩ মেট্রিক টন সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। এই পুরো প্রকল্প তৈরিতে খরচ হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর নামানুসারে,এই সেতুর নামকরণ করা হয়েছে অটল সেতু। এই সেতুটি মুম্বই বন্দর এবং জওহরলাল নেহেরু বন্দরের মধ্যে সংযোগও উন্নত করবে।