২২ সেকেন্ডেই ১২ রাউণ্ড গুলি! আতিক আহমেদ হত্যা মামলায় এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে আগের দিনই আতিককে খুনের ছক কষে তিন অভিযুক্ত। কিন্তু প্রয়াগরাজ আদালতে নিয়ে যাওয়ার পথে কড়া পুলিশি প্রহরায় তাদের সেই প্ল্যান বানচাল হয়। এরপরই আতিককে খুন করতে ‘প্ল্যান বি’র আশ্রয় নেয় আততায়ীরা।
এফআইআর অনুসারে, আতিক আহমেদ এবং আশরাফ মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে শুরু করার মুহুর্তেই এক বন্দুকধারী তার মাইক এবং ক্যামেরা ফেলে দেয় এবং হাতে পিস্তল তুলে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। খুনিদের মধ্যে একজন সানি সিং জেরায় জানিয়েছে, কোন এক গ্যাংস্টারের কাছ থেকে সানি ২০২১ সালে জিগানা পিস্তলটি পায়, তারপর সেই বছরই ডিসেম্বরে সেই গ্যাংস্টারের মৃত্যুর পর থেকে সেই জিগানা পিস্তলটি তার কাছেই ছিল। সূত্রের খবর, তদন্তকারীরা বিবৃতির সত্যতা পরীক্ষা করতে তিনজনের নারকো টেস্ট করাতে পারেন।
এফআইআর অনুসারে “হত্যার কারণ হিসাবে আসামি জানায়, আতিক ও আশরাফ গ্যাংকে ‘খতম’ করতে অনেকদিন আগে থেকে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে তিন অভিযুক্ত। সঠিক সময় ও সুযোগ খুঁজে না পাওয়াতেই সেদিন সাংবাদিক বেশে ভিড়ের মধ্যে অস্ত্র হাতে আতিক ও আশরাফের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা।” ‘মহারাজ’ ওরফে লাভলেশ ‘কোটি টাকার’ স্বপ্ন দেখতেন, লাভলেশের মা ঘটনা প্রসঙ্গে বলেছেন, “ভুল সঙ্গ ছেলেকে নষ্ট করেছে”, প্রতিক্রিয়ায় বাবা বলেন, “ছেলের সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই”। বান্দার বাসিন্দা লাভলেশ তিওয়ারি, হামিরপুরের বাসিন্দা সানি সিং এবং কাসগঞ্জের বাসিন্দা অরুণ মৌর্য আপাতত জেল হেফাজতে রয়েছে।
অন্যদিকে, সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে যে মাফিয়া থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা আতিক আহমেদের বিরুদ্ধে মোট ১০২টি মামলা রয়েছে, যেখানে তার ভাই আশরাফ আহমেদের বিরুদ্ধে ৫৪টি মামলা রয়েছে। যদিও তার স্ত্রী, ছেলে এবং তার পরিবারের অন্যান্য আত্মীয়দের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে। উমেশ পাল হত্যা মামলায় আতিকের স্ত্রী এখনও পলাতক।
মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে স্বামী-সন্তানকে হারিয়েছেন, তবুও তিনি পলাতক। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের খাতায় ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ অপরাধী হিসাবে পরিচিত আতিক পত্নী শায়িস্তা পারভীন। জল্পনা তিনি দেশ ছেড়েও পালিয়ে গিয়ে থাকতে পারেন। উমেশ পাল হত্যা মামলায় আতিকের সঙ্গে স্ত্রী শায়িস্তা’রও নাম জড়ায়। শায়িস্তার খোঁজে জোর তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
রাজ্য পুলিশ ইতিমধ্যেই শায়িস্তার সন্ধানে ৫০হাজার টাকা পুরষ্কার ঘোষণা করেছে। তাকে ধরতে ব্যাপক তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। পুলিশ পরিবারের মেয়ে শায়িস্তা। বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কনস্টেবল। শায়েস্তার দুই ভাইয়ের একজন মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল। আতিক আহমেদের তুলনায় অনেক বেশি শিক্ষিত তিনি। প্রয়াগরাজের হিম্মতগঞ্জের কিদওয়াই গার্লস ইন্টার কলেজে থেকে স্নাতক শেষ করেন শায়িস্তা। তিনি যে এভাবে হয়ে উঠবেন মোস্ট ওয়ান্টেড আসামী, তা তিনিও হয়তো নিজেও কল্পনা করতে পারেন নি।
১৯৯৬ সালে আতিকের সঙ্গে বিয়ে হয় শায়িস্তা পারভিনের। পুলিশ সূত্রে খবর শায়িস্তার কথামতোই বিভিন্ন সময় দল বদল করেছে আতিক। স্বামী সাংসদ হওয়ার পর তার মাফিয়া সাম্রাজ্যের দেখভাল করত শায়িস্তাই। শায়িস্তার বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত চারটি মামলা রয়েছে। শুধু শায়িস্তা ও আতিকই নয়, বড় ছেলে উমর ও দ্বিতীয় ছেলে আলিও খুন, তোলাবাজির মামলায় প্রয়াগরাজের নৈনি জেলে বন্দী।
২০২১ সালে আসাদউদ্দিন ওয়াইসির এআইএমআইএম-এ যোগ দিয়েছিলেন আতিক পত্নী। চলতি বছরের জানুয়ারিতে, তিনি প্রয়াগরাজ মেয়র পদে নিজের টিকিট পাকা করতে বিএসপিতে যোগ দেন। কিন্তু উমেশ পালের স্ত্রী জয়া পাল এই হত্যা মামলায় শায়িস্তার বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনেন। এফআইআর দায়ের করার পর থেকে শায়িস্তার সঙ্গে দূরত্ব বাড়ায় দল। বিএসপি প্রধান মায়াবতী পরবর্তীকালে ঘোষণা করেছিলেন যে শায়িস্তার সঙ্গে দল কোন প্রকার যোগাযোগ রাখছে না। মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার টিকিট পাবেন না আতিক পত্নী।