বিতর্কিত রাফালে চুক্তি সংক্রান্ত নথি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দফতর থেকে চুরি হয়ে গেছে, তাঁর এহেন দাবিকে কেন্দ্র করে দেশময় রাজনৈতিক আলোড়ন সৃষ্টি হওয়ার পর শুক্রবার অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে জানালেন, "ফাইল চুরি গেছে, এই মন্তব্য একেবারেই ভুল।"
বুধবার সরকারের তরফ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়, যে দেশের দুটি সংবাদ মাধ্যম ও একজন উকিলের বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের আওতায় "ফৌজদারি পদক্ষেপ" নেওয়া হবে, কারণ তারা আদালতে পেশ করা নথির ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, এবং বিচারপতি এস কে কাউল ও কে এম জোসেফকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চের সামনে এই মর্মে আর্জি জানান বেণুগোপাল। প্রথমে সংবাদ মাধ্যম দুটির নাম না করলেও পরে তিনি বলেন "দ্য হিন্দু এবং এএনআই-এর কাছে যা যা নথি আছে, সেগুলি চুরি করা নথি"।
আরও পড়ুন: রাফাল তথ্য চুরি প্রসঙ্গে সরকারি হুমকির বিরুদ্ধে সংবাদ মহলের গর্জন
তাঁর মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে দেশের বিভিন্ন প্রেস সংগঠন। তাদের মতে, তাঁর বক্তব্য "নিন্দনীয়… হুমকি"-র পর্যায়ে পড়ে, "যার ফলে মিডিয়ার সকলের কাছে হাড় হিম করা বার্তা পৌঁছনোর সম্ভাবনা রয়েছে"।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই বেণুগোপালকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, "আমি শুনলাম বিরোধীরা নাকি দাবি করেছেন যে সুপ্রিম কোর্টকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক থেকে ফাইল চুরি যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ অসত্য। ফাইল চুরি হয়ে গেছে, এই মন্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য।" অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে আদালতে তাঁর নিবেদনে তিনি স্রেফ এটুকুই বলতে চেয়েছিলেন যে আবেদনকারীরা এই মামলায় যেসব নথি পেশ করেছেন, সেগুলি এমন কিছু "মূল নথির ফোটোকপি" যেগুলি সরকারের হিসেবে গোপনীয়।
এর ফলে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে পুনরায় সরব হয়ে ওঠে কংগ্রেস, এবং দলের সভাপতি রাহুল গান্ধী ঘটনার ফৌজদারি তদন্তের দাবি করেন।
বেণুগোপালের বক্তব্য ছিল, যশবন্ত সিনহা, অরুণ শৌরি, এবং উকিল প্রশান্ত ভূষণ রাফালে চুক্তির তদন্তের আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর এই রায়ের পুনর্বিবেচনা চেয়ে যে আর্জি পেশ করেন, তার সঙ্গে তিনটি ফোটোকপি করা নথি সংযুক্ত করা হয়। এই গোটা ঘটনায় বেণুগোপাল পাশে পেয়েছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারমনকে, যিনি টুইট করে এই বক্তব্যকে সমর্থন করেন।
1.Learned AG KK Venugopal told @PTI_News the Rafale documents were not stolen from the Defence Ministry & what he meant in his submission before the Supreme Court was that petitioners in the application used "photocopies of the original" papers, deemed secret by the government.
— Nirmala Sitharaman (@nsitharaman) March 8, 2019
আবেদনকারীরা আর্জি জানিয়েছিলেন, ফ্রান্স এবং ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত রাফালে চুক্তিতে সম্ভাব্য দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সমস্ত জনস্বার্থ মামলা ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮-তে খারিজ করে যে রায় ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট, তার পুনর্বিবেচনা হোক। আবেদনকারীরা আদালতে মিথ্যাচারের অভিযোগ আনার অনুমতিও চেয়েছেন, কারণ তাঁদের মতে, সুপ্রিম কোর্ট জনস্বার্থ মামলাগুলি খারিজ করার সময় গুরুতর তথ্য গোপন করে কেন্দ্র।
এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে 'দ্য হিন্দু' ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে জারি করা "প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সূচনা" উদ্ধৃত করে জানায়, যে রাফালে চুক্তির ব্যাপারে "ফরাসি তরফের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে 'সমান্তরাল আলোচনা' চালানোর বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তি জানায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক"। ওই একই সূচনা প্রকাশ করে এএনআই, কিছু অতিরিক্ত তথ্য সমেত। বেণুগোপাল জানিয়েছিলেন, চুরির তদন্ত চলছে।