বেলারুশ পুলিশ মার্কিন অর্থে পরিচালিত রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টির সঙ্গে যুক্ত একজন বিশিষ্ট সাংবাদিককে গ্রেফতার করেছে। এটি বিরোধী ব্যক্তিত্ব, স্বাধীন সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের ওপর একবছরব্যাপী ধরপাকড়ের সর্বশেষ পদক্ষেপ। বেলারুশিয়ান সাংবাদিকদের সংগঠন জানিয়েছে, সোমবার বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে ৫৫ বছর বয়সি ইহার কার্নেই নামে ওই সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তার অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালানো হয়েছিল। পুলিশ ফোন এবং কমপিউটার বাজেয়াপ্ত করেছে। এমনটা কার্নির মেয়ে পলিনা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ এই গ্রেফতারি এবং তল্লাশির কোনও ব্যাখ্যা দেয়নি। যাইহোক, বেলারুশে আরএফই/আরএলকে চরমপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে জানানো হয়েছে, এর সঙ্গে কাজ করা বা এর বিষয়বস্তু ছড়ালে সাত বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।
কার্নেই ২০০০ সাল থেকে আরএফই/আরএল-এর বেলারুশিয়ান এবং রাশিয়ান পরিষেবাগুলোর সঙ্গে কাজ করেছেন। কিন্তু, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাঁর বাইলাইন ব্যবহার করছেন না। বেলারুশের প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে বিশিষ্ট মানবাধিকার গোষ্ঠী, ভিয়াসনা জানিয়েছে যে কার্নেইকে আক্রেস্টিনা প্রি-ট্রায়াল ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আক্রেস্টিনা প্রি-ট্রায়াল ডিটেনশন সেন্টার বন্দিদের দুর্বিষহ অবস্থা তৈরি এবং বন্দি নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত।
ভিয়াসনার মতে, আইনজীবী বা পরিবারের সদস্যদের কারও কার্নেইতে প্রবেশাধিকার নেই। ২০২০ সালের আগস্টের ভোটের পর থেকে বেলারুশের সাংবাদিক ও কর্মীরা বড় আকারের দমন-পীড়নের মুখোমুখি হয়েছেন, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো ষষ্ঠ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এমনটা ঘটছে।
লুকাশেঙ্কোর নির্বাচনকে অবশ্য বিরোধী এবং পশ্চিমী দেশগুলো ভোটের নামে প্রহসন বলে অভিযোগ করেছে। একইসঙ্গে এই ফলাফলকে জনগণের মতামত নয় বলেই দাবি করেছে। কারণ, লুকাশেঙ্কোর ষষ্ঠ মেয়াদ নির্বাচিত হওয়া ঘিরে বেলারুশ ব্যাপক বিক্ষোভে ভেসে গিয়েছিল। যাতে লক্ষাধিক লোক জড়িয়ে পড়েছিলেন। সেসব সামাল দিতে
কর্তৃপক্ষ একটি নৃশংস ধরপাকড় চালায়। যে ধরপাকড়ের অঙ্গ হিসেবে ৩৫,০০০-এরও বেশি লোককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। হাজার হাজার লোককে হেফাজতে থাকা অবস্থায় পুলিশ মারধর করেছিল এবং কয়েক ডজন বেসরকারি সংস্থা ও স্বাধীন মিডিয়া সংস্থার কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বেলারুশে বর্তমানে মোট ৩৬ জন সাংবাদিক কারাগারের পিছনে রয়েছেন।
আরও পড়ুন- যৌন হয়রানি মামলা: কুস্তিগিরদের শতচেষ্টা যেন জলে, বিরাট স্বস্তি ব্রিজভূষণের
বিক্ষোভ কভার করার সময় কার্নেইকে বেশ কয়েকবার আটক করা হয়েছিল। তাঁর অনেক সহকর্মীর উলটো পথে হেঁটে ধরপাকড় সত্ত্বেও কার্নেই বেলারুশে থেকে গিয়েছেন। এসব নিয়ে বলতে গিয়ে ভায়াসনা সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে বলেছে, 'গ্রেফতার, তল্লাশি, আটক কেন্দ্রে নির্যাতন চলছে বেলারুশে। রাজনৈতিক বন্দিদের চাপ দেওয়া হচ্ছে। স্বাধীন সংবাদ সংস্থাগুলোকে চরমপন্থী বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে।'