রাম মন্দিরের হাত ধরেই ভোলবদল অযোধ্যার, শহরের তাক লাগানো রূপান্তর চমকে দিতে বাধ্য। ঝাঁ চকচকে রেল স্টেশন, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সংস্কার করা চওড়া রাস্তা, হোটেল দেখে যে কেউ চমকে যাবেন। এ কোন অযোধ্যা? রাম মন্দির উদ্বোধনের আগেই অযোধ্যার ভোলবদল যে কাউকেই চমকে দিতে পারে। আগামী ২২ জানুয়ারি বহু প্রতীক্ষিত রাম মন্দিরের উদ্বোধন। তার আগে চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতি চলছে। একসময় জরাজীর্ণ ভবন এবং পুরানো মন্দিরের শহর ছিল এই অযোধ্যা। রাতারাতি গায়েব হয়ে গিয়েছে সেই চেনা অযোধ্যা। রাম নগরী এখন আরও রঙিন ঝাঁ চকচকে।
২২ জানুয়ারি রাম মন্দির উদ্বোধনের আর মাত্র ২ সপ্তাহ বাকি, শহরটি তার আগের চেনা চিত্র থেকে একেবারেই অচেনা। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরের সেই দিনটিতে, যখন শ'য়ে শ'য়ে করসেবক বাবড়ি মসজিদটি ভেঙে দিয়েছিল, ভারত এবং এর রাজনীতিকে বদলে দিয়েছিল, তখন অযোধ্যা ব্যারিকেডের দুর্গে পরিণত হয়েছিল, মন্দিরগুলিতে প্রবেশ এমনকি এর বাসিন্দাদের জন্যও সীমাবদ্ধ ছিল।
বিজেপি সরকারের সবচেয়ে মেগা প্রজেক্টের অন্যতম ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে রাম মন্দিরের উদ্বোধন। জরাজীর্ণ ভবন, সরু গলি, পুরানো মন্দির এবং ধর্মশালাগুলি প্রায় উধাও। এখন ৩৫ টি নতুন হোটেল এবং ৬০০টি হোম স্টে, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঝাঁ চকচকে রেলওয়ে স্টেশন, প্রশস্ত রাস্তা এবং সজ্জিত ভবনগুলির একটি শহর অযোধ্যা।
অযোধ্যা ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (ADA) ভাইস চেয়ারম্যান বিশাল সিং বলেছেন, গত এক বছরে হোম স্টে'র ৬০০ টি আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে, যার মধ্যে ৩০০ টিরও বেশি মাত্র দুই মাসে প্রক্রিয়া করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ ৩৫ টি হোটেলের জন্য অনুমোদন দিয়েছে।
কর্তৃপক্ষ ২৯,৬০৪ কোটি টাকা মূল্যের ১৭৮ টি প্রকল্পের দৈনিক মনিটরিং করছে - রাস্তা, রেলপথ, সৌন্দর্যায়ন, পার্কিং, ঘাট সংস্কার ইত্যাদি - যা কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য উভয় সরকারের ৩৭টি সংস্থার তরফে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে ২৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত, তিন তলা রেল স্টেশনটিতে রয়েছে এসকেলেটর, লিফট, ফুড প্লাজা, ওয়েটিং হল, টয়লেট, পানীয় জলের ব্যবস্থা।
পুরনো স্টেশনে দিনে মাত্র ২৫ টি ট্রেন এবং ১০ হাজার জন যাত্রী যাতায়াত করতে পারত, নতুন স্টেশন, যা নির্মাণাধীন রাম মন্দির থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে, প্রতিদিন ৫০ হাজারের বেশি যাত্রী সামাল দেওয়ার মত দক্ষতার সঙ্গে গড়ে তোলা হয়েছে।
নতুন স্টেশন সংলগ্ন পুরানো রেলস্টেশনের দিকে যাওয়ার রাস্তায় সিঙ্গারা বিক্রি করেন, বছর-৫৩-এর শিব শঙ্কর বলেন, “আমাদের বলা হয়েছে যে এই রাস্তাটিও প্রসারিত করা যেতে পারে। তাই আমরা এখন আমাদের দোকানগুলো সংস্কার করছি না।”
ধীরেন্দ্র সিং, যিনি দিল্লি থেকে অযোধ্যা সফরে এসেছেন তিনি নতুন এই অযোধ্যাকে দেখে বলেছেন, “আমি এখানে ১০ বছর পর এসেছি। শুধু অযোধ্যার রাস্তাই নয়, পুরো শহরটাই বদলে গেছে। শেষবার যখন এসেছিলাম, স্টেশনের প্ল্যাটফর্মও ভেঙে গিয়েছিল; এখন রেল স্টেশন পুরো বিমানবন্দরের মতো।"
মন্দির চত্বরের চারপাশের চারটি রাস্তার আমূল সংস্কার করা হয়েছে। মোদী ৩০ নভেম্বর রাম পথ, ধর্ম পথ, শ্রী রাম জন্ম ভূমি পথ এবং ভক্তি পথ -চারটি রাস্তার উদ্বোধন করেন। যদিও রাস্তাগুলি খুব বেশি লম্বা ছিল না। আগে, রাম মন্দিরের দিকে যাওয়ার সরু এবং যানজটপূর্ণ গলি ছিল, কিন্তু এখন তা অনেক প্রসারিত এবং সুন্দর করা হয়েছে এবং নতুন নাম দেওয়া হয়েছে।
রামপথে তার বেকারির বাইরে দাঁড়িয়ে, ADA কর্মীদের তার দোকানের বাইরের দেয়াল আঁকা দেখে, ৫০ বছর বয়সী রবি কুমার বলেছেন 'যে গত বছর পর্যন্ত, তিনি যে দোকানটি চলছে তার জন্য মাসিক ১ হাজার টাকা ভাড়া দিতেন। এখন ভাড়া বেড়েছে ১০ গুণ। জানুয়ারিতে মন্দির খুলে গেলে আমাকে ১০ হাজার টাকা করে ভাড়া দিতে হবে"।
স্থানীয় মনোজ কুমার তিওয়ারি যিনি রাম মন্দির নির্মাণ সাইটে সুপার ভাইজার হিসাবে কাজ করেন বলেছেন, “আমি মন্দিরের সাইটে তিন মাস ধরে কাজ করছি। এর আগে আমি সৌদি আরবে কাজ করতাম কিন্তু ছুটিতে এখানে আসার পর মন্দিরের সাইটে এই শূন্যপদ সম্পর্কে জানতে পেরে আবেদন করি। আমি আশা করি এই মন্দিরের মাধ্যমে আমাদের তরুণরা আরও চাকরি পাবে,” ।
মন্দির থেকে প্রায় ১৩ কিমি দূরে মহর্ষি বাল্মীকি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ইতিমধ্যেই এয়ার ইন্ডিয়া এবং ইন্ডিগোর কার্যক্রম শুরু হয়ে গিয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, বোয়িং ৭৮৭ এবং ৭৭৭-এর মতো বড় বিমানের জন্য রানওয়েকে আরও ৩,৭০০ মিটারে প্রসারিত করার পরিকল্পনা রয়েছে।