রামায়ণে আছে পুষ্পকরথের কথা। যে পুষ্পকরথে চেপে সীতাকে নিয়ে লঙ্কায় চম্পট দিয়েছিলেন রাবণ। তাঁকে হত্যার পর সেই রথে চেপেই সদলবলে লঙ্কা থেকে অযোধ্যায় ফিরেছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। এই পুষ্পকরথই নাকি বিশ্বের প্রথম বিমান। এমনই দাবি হিন্দুত্ববাদীদের। ইতিমধ্যে রামজন্মভূমিতে মন্দির তৈরির ঐতিহাসিক হিন্দুত্ববাদী আন্দোলন সফল হয়েছে। তবে, অতটুকুতে খুশি থাকতে নারাজ আধুনিক হিন্দুত্বের পোস্টার বয় যোগী আদিত্যনাথ। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি উত্তরপ্রদেশ সরকারের অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছেন অযোধ্যায় বিমানবন্দর তৈরিরও।
সঙ্গে, রীতিমতো সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। রামমন্দির আর বিমানবন্দর যেন একইসঙ্গে তৈরি হয়ে যায়, সেকথা অফিসারদের পইপই করে বুঝিয়ে দিয়েছেন। একদিকে উন্নয়ন। আবার, যেন রামলালার যাতায়াতের সুবিধা, দুটোই হবে। প্রকাশ্যে অবশ্য যোগীর কথায় আধুনিকতার ছোঁয়া। তাঁর দাবি, এই বিমানবন্দর তৈরি হলেই, অযোধ্যা বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর শহর হয়ে উঠবে। মন্দিরের সঙ্গে বিমান যোগাযোগের মধ্যে দিয়ে ঘটবে পুরাণ আর আধুনিকতার মিশ্রণ।
অবশ্য বুদ্ধিটা নেহাত মন্দ না। রামমন্দির নিয়ে যেভাবে হাইপ তুলেছে সংঘ পরিবার, তা থেকে যেন আর্থিক লাভের এটাই সময়। বিমানবন্দর থাকলে, ধনী হিন্দুত্ববাদী, রামভক্তরা কারণে-অকারণে অযোধ্যায় সহজে যাতায়াত করতে পারবেন। তাতে, পর্যটন শিল্প থেকে উত্তরপ্রদেশ সরকারের আর্থিক লাভ একধাক্কায় কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। আর, এসব মাথায় রেখে তড়িঘড়ি অযোধ্যার ৩১৮ একর জমি এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়াকে লিজে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকারের অসামরিক পরিবহণ দফতর। বিমানবন্দরের নামও ঠিক হয়ে গেছে। রাখা হচ্ছে রামলালার নামেই- 'মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট'।
তাঁর মাথায় যে পুষ্পকরথ থেকেই অযোধ্যা বিমানবন্দর তৈরির আইডিয়াটা এসেছে, বলতে গিয়ে কার্যত তা স্পষ্টই করে দিয়েছেন আদিত্যনাথ। তাঁর কথায়, 'যখন ভগবান রাম শ্রীলঙ্কা থেকে ফিরেছিলেন, তখন তিনি পুষ্পক বিমানে চেপেই এসেছিলেন। আগামী বছরের মধ্যেই অযোধ্যা বিমানবন্দরের নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সেই সময় রামমন্দির তৈরির কাজও প্রায় শেষ হয়ে যাবে।'
বিদেশি রামভক্তদের কথা মাথায় রেখে অযোধ্যা বিমানবন্দরের জন্য তিনি যে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মর্যাদা চান, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। ধর্মের সঙ্গে উন্নয়নকে মিশিয়ে যোগী জানিয়েছেন, শীঘ্রই দেশের সবচেয়ে বেশি বিমানবন্দর দিয়ে সাজানো রাজ্য হবে উত্তরপ্রদেশ। অযোধ্যা-সহ উত্তরপ্রদেশে থাকবে পাঁচটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। শুধু তাই নয়, এশিয়ার বৃহত্তম বিমানবন্দরও থাকবে উত্তরপ্রদেশে।
Read story in English