মাস পেরোলেই দুর্গাপুজো, তারপরই কালীপুজো, ছটের মতো নানা পার্বণ। উৎসবের মরশুম মানেই ঘরে ফেরা। রোজগারের টাকা আর সঙ্গে পরিজনদের জন্য উপহার নিয়ে ঘরে ফিরবেন ভেবেছিলেন তিনি। সেজন্য মোটা টাকা কামানোর আশায় জান লড়িয়ে পরিশ্রমেরও খামতি রাখেননি। কিন্তু শনিবার রাতের বিধ্বংসী আগুনে তাঁর সব আশা পুড়ে ছারখার হয়ে গেল। তাই নির্দিষ্ট সময়ে ঘরে ফেরার আগেই ঘরে ফেরার ডাক পৌঁছেছে তাঁর কাছে। বুধবার ঘড়ির কাঁটা তখন দুপুর তিনটের ঘরে। তখনও বাগরির ছ'তলা থেকে কালো ধোঁয়া বেরোচ্ছে। সেদিকে হতাশভাবে চেয়ে বিড়বিড় করে বললেন, "বহত নুকসান হো গয়া।"
নাম প্রদীপ, বিহারের বাসিন্দা। কলকাতার বাগরি মার্কেটে গত চার-পাঁচ বছর ধরে 'মুটিয়ার' কাজ করেন। মাথায় মালের বোঝা বয়ে দিনে কখনও ৪০০, কখনও ৫০০ টাকা পকেটে ঢুকত প্রদীপের। কিন্তু শনিবার রাতের আগুন সেই রুজিরুটির রাস্তাটাই এক নিমেষে বন্ধ করে দিল। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে প্রদীপ একরাশ হতাশা নিয়ে বললেন, "মুটিয়ার কাজ করে রোজ ৪০০-৫০০ টাকা পেতাম। আগুনে সব শেষ হয়ে গেল। কোথায় আর কাজ পাব জানি না। দেখা যাক, কাজ না জুটলে বাড়ি চলে যাব। বাড়ির লোক বলছে, ফিরে আসতে।" খানিকক্ষণ পর আবার বললেন, "এখন তো দোকানের সব বেঁচে যাওয়া সামগ্রী প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বয়ে দিচ্ছি। এতে ওই যা ৪০-৫০ টাকা করে মিলছে। এতে আর কী হবে!"
শুধু প্রদীপ নন, তাঁর মতো বাগরি মার্কেটের আরও অনেক মুটিয়ারই করুণ দশা। উৎসবের মরশুমের আগে ব্যাপক লোকসানের শিকার তাঁরা। প্রদীপের মতোই আরেক মুটিয়া (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বললেন, "কাজ তো চলে গেল। দেখি, আশপাশের মার্কেটে কাজ পাই কিনা, না হলে বাড়ি ফিরে যাব।" আগুনের গ্রাসে কাজ হারালেও বেশ আত্মবিশ্বাসের সুরে অন্য আরেক মুটিয়া বললেন, "কাজ ঠিক জুটে যাবেই।"
আরও পড়ুন, “এমন আগুন আগে কখনও দেখিনি”
বাগরির ভয়াবহ আগুন প্রদীপের মতো অনেক মুটিয়ারই রুজিরুটি কেড়ে নিয়েছে। তাই তাঁরা এখন অসহায়ভাবে পোড়া বাগরির বাইরে দাঁড়িয়ে, যদি আগুনের কবল থেকে বেঁচে যাওয়া সামগ্রী বয়ে দেওয়ার কাজ জোটে।
অন্যদিকে, গত সাড়ে চার দিন ধরে আগুন-ধোঁয়া সহ্য করতে করতে কার্যত ঝাঁঝরা বাগরি। তবে বুধবার আগুন-ধোঁয়া অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে দমকল বাহিনী। এ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে দমকল বাহিনীর ডিজি জগমোহন বলেন, "মোটামুটি আমরা ক্লিয়ার করে দিয়েছি। ২-৪ শতাংশ রয়েছে, সেটাও ক্লিয়ার করে দেওয়া হচ্ছে।"