ব্রিজ বিপর্যয়ের ভয়ঙ্কর স্মৃতি এখনও টাটকা। কিন্তু জীবন তো থেমে থাকে না। তাই, দু'নয়নে ভয় আর মনে সংশয় নিয়েই মাঝেরহাটের ভাঙা সেতুর পাশ দিয়ে পায়ে পায়ে চলতে চলতে তৈরি হয়েছে বিকল্প পথ, যদিও সেই পথ নেহাতই মেঠো। বরং মাঝেরহাটের ভেঙে পড়া সেতুর আপাতত নির্ভরযোগ্য বিকল্প হিসাবে গড়ে তোলা হয়েছে 'বেলি (bailey) ব্রিজ'। দুর্গাপুজোর পঞ্চমীর মধ্যেই চালু হয়ে যাবে এই ব্রিজ। জানা যাচ্ছে, ব্রিজটি উদ্বোধন করবেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভেঙে পড়া মাঝেরহাট ব্রিজের ১০০ মিটারের মধ্যেই তৈরি হয়েছে নতুন 'বেলি ব্রিজ'। মাঝেরহাট রেল স্টেশনের অদূরে শিয়ালদহ-বজবজ শাখার রেল লাইন সংলগ্ন খালের উপর মূলত ইস্পাতের কাঠামো দিয়ে তৈরি হয়েছে ব্রিজ। এই নতুন ব্রিজে যান চলাচলের জন্য থাকছে দু'টি লেন। ব্রিজের নীচের অংশে রয়েছে ধাতব পাত। রাজ্য পূর্ত দফতরের তরফে এই বেলি ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়রের কথায়, কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। যান চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত করতে তাঁদের তরফে দিন তিনেকের বেশি সময় লাগবে না।
বেলি ব্রিজ ও রেল লাইনের মাঝে থাকছে একটি লেভেল ক্রসিং। নতুন লেভেল ক্রসিং তৈরির কাজও চলছে পুরোদমে। চলতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে ওই ক্রসিং-এর কাজ শেষ হবে এবং তা হস্তান্তর করা হবে রেলের পক্ষ থেকে। পুলিশ সূত্রে খবর, এই বেলি ব্রিজ দিয়ে আপাতত হালকা গাড়িই চলাচল করবে। ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সব গাড়ি যে পথ ব্যবহার করছে, বেলি ব্রিজ চালু হওয়ার পর সেই পথেই চলবে ভারী যানগুলি। এই ব্রিজে যাতে বেশি উচ্চতার ভারী গাড়ি না উঠতে পারে সেই ব্যবস্থাও থাকবে বলে জানা যাচ্ছে।
কী এই বেলি ব্রিজ?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনাদের ব্যবহারের জন্য এই প্রযুক্তির ব্রিজ ব্যবহার করত ব্রিটিশরা। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সিভিল ইঞ্জিনিয়র ডোনাল্ড বেলি এই ব্রিজের নকশা তৈরি করেছিলেন। পরবর্তীকালে এই ধরনের ব্রিজ রীতিমতো জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সেনা কার্যকলাপের জন্য এই ব্রিজ ব্যবহার করতে শুরু করে। বিভিন্ন যন্ত্রাংশ যোগ করে এই ব্রিজ তৈরি হয়। এরপর ব্রিজের একেকটি অংশ নিয়ে এসে শুধু বসিয়ে দেওয়া হয় ও পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়। ফলে, বেলি ব্রিজ তৈরির পদ্ধতি বেশ সরল এবং নির্ঝঞ্ঝাট।
কী অবস্থায় রয়েছে ভেঙে পড়া ব্রিজ?
৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বিকেল ৪.৪৫ নাগাদ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে মাঝেরহাট ব্রিজ। ওই দুর্ঘটনায় দু'জনের মৃত্যু হলেও, আহতের সংখ্যা ২৫ ছুঁয়েছিল। এই মুহূর্তে ভেঙে পড়া ব্রিজ নতুন করে তৈরি করতে আন্তর্জাতিক টেন্ডার ডেকেছে রাজ্য সরকার। এদিকে ব্রিজ সংস্কারের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে রাজ্য পূর্ত দফতর। পূর্ত দফতরের তরফে বিশ্বরূপ মণ্ডল জানিয়েছেন, সোমবার 'সাব গেট' তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এই মুহূর্তে 'হিয়ুম পাইপ' বসানোর কাজ চলছে।
উল্লেখ্য, প্রাথমিকভাবে ব্রিজ বিপর্যয়ের দায় নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। স্বয়ং রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে রাজ্য পূর্ত দফতরের গাফিলতির দিকেই ইঙ্গিত করেছিলেন। অন্যদিকে, প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এই বিপর্যয়ের জন্য জোকা-বিবাদিবাগ মেট্রো রেলের কাজকেই দুষেছিলেন।
ব্রিজ বিপর্যয়ের দায় কার, এ নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও বিশেষ মাথা ঘামাতে চাইছেন না এলাকাবাসী। শহরের ওই ব্যস্ততম এলাকার নিত্যযাত্রীদের শুধু একটাই কথা, যে ব্যবস্থাই নেওয়া হোক, তা যেন নিরাপদ হয়। কিন্তু, এ যে সামান্য দাবি নয়, বরং সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। সেই নিশ্চয়তা দেবে কে?