বেলজিয়াম সরকার বুধবার জানিয়েছে যে তারা আশ্রয়প্রার্থী একক পুরুষদের আশ্রয় দেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই ব্যাপারে বেলজিয়াম সরকারের যুক্তি যে তাদের অভ্যর্থনা ক্ষমতা অপর্যাপ্ত। তাই প্রথমে পরিবার, মহিলা এবং শিশুদের আশ্রয় দেওয়ার দায়িত্ব তারা নিতে পারবে না। এই সিদ্ধান্তের পর আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো বেলজিয়াম সরকারের পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করেছে। এই ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর অভিযোগ, বেলজিয়াম সরকারের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের শামিল।
বেলজিয়াম দীর্ঘদিন ধরেই সাহায্যপ্রার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে সমালোচনার মুখে পড়েছে। কারণ, তারা ইতিমধ্যেই হাজার হাজার মানুষকে বাড়ি ফিরে নিপীড়নের শিকার হওয়া থেকে সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত আশ্রয় দিতে ব্যর্থ হয়েছে। রাজধানী ব্রাসেলসের প্রধান প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রের বাইরে রাস্তায় এমন সাহায্যপ্রার্থীদের তাঁবুর দীর্ঘ লাইন। যা বেলজিয়ামের খ্যাতিতে কালি লাগিয়ে দিয়েছে। সমালোচনার মুখে সাফাই দিতে গিয়ে বেলজিয়ামের অ্যাসাইলাম স্টেট সেক্রেটারি নিকোল ডি মুর বলেছেন, আগামী দিনগুলোতে আশ্রয়প্রার্থীদের চাপ আরও বাড়তে চলেছে। শিশুদের যাতে রাস্তায় মরে যেতে না-হয়, সেকথা মাথায় রেখেই তাঁরা সমস্যাটিকে এক্কেবারে এড়ানোর রাস্তা নিয়েছেন।
মুর জানান, অবিবাহিত পুরুষদের নিজেদেরকেই রক্ষা করতে হবে। তাঁদের এই পদক্ষেপ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। একথা মনে করিয়ে দিলে মুর বলেন, 'আমরা ভেবেছিলাম সব সামলে নিতে পারব। কিন্তু, এখন দেখছি পারব না।' আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বেলজিয়ামের কর্তা ফিলিপ হেনসম্যানস বলেছেন যে, বেলজিয়াম সরকার শুধু মানবাধিকারকেই লঙ্ঘন করেনি। অবিবাহিত পুরুষ আশ্রয়প্রার্থীদের অভ্যর্থনা স্থগিত করে কার্যত তাঁদের সমাধিস্থ করেছে।
ডি মুরের পালটা অভিযোগ, গত দুই বছরে ১১.৫ মিলিয়ন বাসিন্দার দেশে আশ্রয়প্রার্থীদের আগমনের ফলে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর ধারণক্ষমতা শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন সেখানে আশ্রিত ৩৩,৫০০ জন। শুধু গত বছরই সুরক্ষা চেয়ে বেলজিয়ামে থাকার জন্য প্রায় ৩৭,০০০ আবেদন জমা পড়েছিল বলেই সেদেশের সংস্থা ফেদাসিল জানিয়েছে। আশ্রয়প্রার্থীদের শীর্ষে, বেলজিয়াম তাদের দেশে রাশিয়ার যুদ্ধের জেরে পালিয়ে আসা প্রায় ৬২,০০০ ইউক্রেনীয় শরণার্থীকে সহায়তা দিচ্ছে। শুধুমাত্র গত বছরই বেলজিয়ামের শ্রম আদালত ফেদাসিলকে উপযুক্ত আশ্রয় প্রদানে ব্যর্থতার জন্য ৫,০০০ বার দোষী সাব্যস্ত করেছে।
আরও পড়ুন- জোর জল্পনা! চাঁদের রং-আকার রাখি পূর্ণিমায় কতটা বদলাবে?
তারপরও ডি মুর বলেছেন, 'আমাদের দেশ ইতিমধ্যে দীর্ঘ সময়ের জন্য তার অংশের চেয়ে বেশি কাজ করেছে।' বেলজিয়ামের ওপর আশ্রয়দানের চাপ বাড়ানোর বদলে কিছু অন্যান্য ইউরোপীয় দেশকে বেলজিয়াম সাহায্য দেওয়ার চেষ্টা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। গত ডিসেম্বরে, ইউরোপের শীর্ষ মানবাধিকার সংস্থা বেলজিয়াম কর্তৃপক্ষকে আশ্রয়প্রার্থীদের আরও ভালো সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু, বাস্তবে দেখা গিয়েছে যে ব্রাসেলসের রাস্তায় শত শত মানুষ চরম ঠান্ডার মধ্যেই ঘুমোতে বাধ্য হয়েছেন। এই ব্যাপারে মানবাধিকার কাউন্সিল অফ ইউরোপের কমিশনার বলেছেন যে বেলজিয়ামের অভ্যর্থনা কেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য মৌলিক চাহিদাগুলো অভাব আশ্রয়প্রার্থীদের অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করেছে।