ছেলের পর গুলিতে ঝাঁঝরা গ্যাংস্টার আতিক আহমেদ ও তার ভাই। শনিবার গভীর রাতে উত্তরপ্রদেশে কারাগারে থাকা গ্যাংস্টার থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা আতিক আহমেদ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের হাতে তার ছেলে ১৯ বছর বয়সি আসাদ আহমেদ নিহত হওয়ার মাত্র একদিন পরে এই ঘটনা ঘটল।
টেলিভিশনের ছবিতে দেখা গিয়েছে, আতিক আহমেদ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। সেই সময় কমপক্ষে দু’জন ব্যক্তি পিস্তল উঁচিয়ে তাদের ওপর পরপর গুলি চালায়। ঘটনাস্থল থেকেই তিন আততায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একইসঙ্গে এই আতিক হত্যা মামলায় এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ। খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত লাভলেশ তিওয়ারি, সানি সিং এবং অরুণ মৌর্যের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। এফআইআরে তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ৩০২, ৩০৭ ধারা, সহ অস্ত্র আইনের একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
এফআইআর অনুসারে "হত্যার কারণ হিসাবে আসামি জানায়, আতিক ও আশরাফ গ্যাংকে ‘খতম’ করতে অনেকদিন আগে থেকে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে তিন অভিযুক্ত। সঠিক সময় ও সুযোগ খুঁজে না পাওয়াতেই সেদিন সাংবাদিক বেশে ভিড়ের মধ্যে অস্ত্র হাতে আতিক ও আশরাফের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা।" 'মহারাজ' ওরফে লাভলেশ 'কোটি টাকার' স্বপ্ন দেখতেন, লাভলেশের মা ঘটনা প্রসঙ্গে বলেছেন, “ভুল সঙ্গ ছেলেকে নষ্ট করেছে”, প্রতিক্রিয়ায় বাবা বলেন, “ছেলের সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই”। বান্দার বাসিন্দা লাভলেশ তিওয়ারি, হামিরপুরের বাসিন্দা সানি সিং এবং কাসগঞ্জের বাসিন্দা অরুণ মৌর্য আপাতত জেল হেফাজতে রয়েছে।
অন্যদিকে, সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে যে মাফিয়া থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা আতিক আহমেদের বিরুদ্ধে মোট ১০২টি মামলা রয়েছে, যেখানে তার ভাই আশরাফ আহমেদের বিরুদ্ধে ৫৪টি মামলা রয়েছে। যদিও তার স্ত্রী, ছেলে এবং তার পরিবারের অন্যান্য আত্মীয়দের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে। উমেশ পাল হত্যা মামলায় আতিকের স্ত্রী এখনও পলাতক।
শনিবার রাতে আতিক আহমেদ এবং তার ভাই আশরাফকে হত্যার তিন অভিযুক্ত লাভলেশ তিওয়ারি, সানি সিং এবং অরুণ মৌর্যকে রবিবার আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তিন অভিযুক্তকে ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে নৈনি জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। সংবাদ সংস্থা এএনআই-জানিয়েছে এখন তিনজনকেই নৈনি জেল থেকে প্রতাপগড় জেলে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, প্রয়াগরাজের নৈনি সেন্ট্রাল জেলেই রয়েছে আতিক আহমেদের ছেলে আলী আহমেদও। তাই জেলা প্রশাসন কোন রমক ঝুঁকি নিতে চায়নি।
কে এই লাভলেশ তিওয়ারি
লাভলেশ তিওয়ারি উত্তরপ্রদেশের বান্দা জেলার কোতোয়ালির বাসিন্দা। তিওয়ারির ফেসবুক প্রোফাইলে নিজেকে বান্দা ইউনিটের বজরং দলের সদস্য হিসাবে বর্ণনা করেছেন। যদিও বজরং দলের জেলা শাখার সভাপতি অঙ্কিত পান্ডে জানিয়েছেন ‘লাভলেশ তিওয়ারি সঙ্গে সংগঠনের কোন সম্পর্ক নেই”। তিনি আরও বলেন, ‘লাভলেশ কোনও দিনই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না এবং বজরং দল তার এই ধরণের কাজ কে কোন ভাবেই সমর্থন করে না,"।
এদিকে লাভলেশ তিওয়ারির মা ছেলের সম্পর্কে বলেন, ছেলে লাভলেশ একেবারে “ধার্মিক" প্রকৃতির ছিল। জানি না ওর ভাগ্যে কি লেখা আছে। নিয়মিত মন্দিরে যেতেন”। লাভলেশ তিওয়ারির বাবা যজ্ঞ তিওয়ারি বলেছেন, তার ছেলে "মাদকে আসক্ত ছিল"। “ও কীভাবে সেখানে পৌঁছেছে সে সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনও তথ্য নেই এবং ও একজন মাদকাসক্ত। আমরা তার সম্পর্কে কিছুই জানি না”।
সানি সিং
২৩ বছর বয়সী সানি সিংয়ের বিরুদ্ধে প্রায় ১৭টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। ২০১৬ সালে, সানি একটি চুরির ঘটনাতেও জড়িত ছিল বলেই জানা গিয়েছে। সানির ভাই পিন্টু সিং সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন,
“এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানো ছাড়া ও সেভাবে কোন কাজ করত না। আমরা আলাদা থাকি, আমাদের সঙ্গে ওর সেভাবে কোন সম্পর্ক নেই। কীভাবে ও এই ধরণের ঘটনা ঘটাল তা আমাদের জানা নেই”।
অরুণ মৌর্য
১৮ বছর বয়সী অরুণ মৌর্য কাসগঞ্জের কাদারওয়ালি গ্রামের বাসিন্দা। বেশ কয়েকটি মিডিয়া রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে অরুণ মৌর্য যখন ছোট ছিলেন তখনই তার বাবা-মা মারা যান। ১০-১১ বছর বয়সে তিনি গ্রাম ছেড়েছিলেন বলে জানা গেছে। গ্রামে মৌর্যের মামা বলেন, “আমি জানি না অরুণ কোথায়! বাবার মৃত্যুর পর থেকে ওর সঙ্গে আর কোন যোগাযোগ নেই, গ্রামেও আসত না। খুনের ঘটনা সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না”।
এফআইআর-এ যা বলেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ
উত্তরপ্রদেশ পুলিশ অস্ত্র আইনে খুন ও খুনের চেষ্টার অভিযোগে তিনজনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে। ঘটনাস্থল থেকে অন্তত দুটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এফআইআর অনুসারে, অভিযুক্তরা পুলিশকে বলেছিল, যে তারা আতিক আহমেদের গ্যাংকে নির্মূল করে নিজেদের জন্য এবং অপরাধ জগতে হাত পাকাতেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, যে তিন হামলাকারী সাংবাদিক পরিচয়ে আতিক ও আশারফের একেবারে কাছে পৌঁছায় এবং তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়”।