বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি ২২ তলা বাড়িতে বৃহস্পতিবারের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের জেরে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই সংখ্যা ছিল ছয়। জখম হয়েছেন অন্তত ১০০ জন। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই রাজধানীতে আরেক অগ্নিকান্ডে মৃত্যু হয় অন্তত ৭০ জনের।
শুক্রবারের ঘটনায় মৃতদের মধ্যে রয়েছেন একজন শ্রীলঙ্কার নাগরিকও। ঢাকার অভিজাত বনানী এলাকায় এফআর টাওয়ার নামের ওই বহুতলে অনেকে আটকে পড়েন বলে জানায় ডেইলি স্টার ওয়েবসাইট।
বৃহস্পতিবার রাত্রি এগারোটা নাগাদ দমকল সূত্রে জানা যায়, বাড়ির ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১৯ জনের দেহ। এফআর টাওয়ারে আগুন লাগে বৃহস্পতিবার দুপুর একটা নাগাদ, জানান দমকল বাহিনীর মুখপাত্র আতাউর রহমান। বাহিনীর ডিউটি অফিসার মিজানুর রহমান জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বিকেল ৪.৪৫ নাগাদ।
"আগুন লাগার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি ছুটে বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে আসি," এএফপি সংবাদ সংস্থাকে জানান সৈকত রহমান। তিনি আরও বলেন, "আমার অনেক সহকর্মী এখনও ভেতরে আটকে আছেন।" ওই সহকর্মীদের চিৎকার চেঁচামেচিতে সচকিত হয়েই নিরাপদ দূরত্বে সরে যান রহমান, অল্পের জন্য রক্ষা পান আগুন এবং ধোঁয়ার হাত থেকে।
প্রাথমিকভাবে, ন'তলা থেকে আগুন ছড়ায় বলে জানা গেছে। জ্বলন্ত বহুতল থেকে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণরক্ষা করতে গিয়ে ছ'জনের মৃত্যু হয় ছ'জনের বলে জানায় এএফপি। ঘটনাস্থলে দেখা যায়, জানালা থেকে মুখ বের করে প্রাণভয়ে চিৎকার করছেন অনেকে।
এএফপি-কে ইউনাইটেড হসপিটালের মুখপাত্র সাজ্জাদুর রহমান শুভ জানান, "উঁচুতলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে সম্ভবত তিনজন মারা গিয়েছেন।" মৃতদের মাথায় গুরুতর আঘাত থাকলেও শরীরের কোথাও আগুনে পোড়ার চিহ্ন পাওয়া যায় নি। ওই হাসপাতালে আরও অন্তত আটজন চিকিৎসাধীন আছেন বলে খবর।
সামরিক মুখপাত্র আবদুল্লা ইবনে জইদ বলেন, সেনাবাহিনীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় এক শ্রীলঙ্কার নাগরিকের দেহ। আরও ৪৫ জনের চিকিৎসা চলছে সেখানে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকেও একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
জানালা দিয়ে গলগল করে বেরোনো ধোঁয়ার ফাঁকে ফাঁকে দেখা যায়, হেলিকপ্টার থেকে জল ঢালা হচ্ছে আগুনের শিখায়। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, ঘটনাস্থলে আছেন অসংখ্য দমকলকর্মী, যাঁদের সাহায্য করছেন নৌবাহিনী এবং বায়ুসেনার বিশেষজ্ঞরা।
দমকল বাহিনীর ডেপুটি ডিরেক্টর দিলীপ কুমার ঘোষ বলেন, প্রায় ৩০০ দমকল কর্মীর নিরলস চেষ্টায় ওই বহুতলের চারটি তলার বেশি ছড়াতে পারে নি আগুন। তাঁর কথায়, প্রাণভয়ে উঁচুতলা থেকে মানুষ ঝাঁপ দিয়ে পড়ায় মৃতের সংখ্যা আরও বেড়েছে। ডেপুটি ডিরেক্টর আরও বলেন, বাড়িটির সিঁড়িগুলি সরু হওয়ায়, এবং অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা না থাকায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রায় দশ বছর আগে এই বাড়িটিতেই আরও একবার আগুন লাগে বলে জানিয়েছে ডেইলি ট্রিবিউন সংবাদপত্র।