Advertisment

বাংলাদেশে এবারের নির্বাচনী ইস্যু: সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা

বাংলাদেশের ১৬ কোটি নাগরিকের মধ্যে আন্দাজ দশ শতাংশ সংখ্যালঘু, যাঁদের মধ্যে ৮-৯ শতাংশ হিন্দু, ০.৫ শতাংশ খ্রিস্টান, এবং বাদবাকি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
sheikh hasina

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি- ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

আর পাঁচদিন বাকি। ভোটের দামামা বেজে উঠেছে বাংলাদেশ জুড়ে। যুযুধান দুই পক্ষ আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী মহাজোট রণসাজে সজ্জিত। অনুষঙ্গ হিসেবে রয়েছে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক হিংসার এবং ভোটের প্রচার সভার অনুমতি খারিজ হওয়ার ঘটনা।

Advertisment

মঙ্গলবার বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসেও রেগেমেগে বেরিয়ে যান বিরোধীপক্ষের প্রতিনিধিরা, এবং পরে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেন প্যানেলের বিরুদ্ধে। ২৭ ডিসেম্বর ঢাকায় নির্বাচনী জনসভার অনুমতি না পাওয়াতেও ক্ষুব্ধ বিরোধীরা। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে যে দলের কর্মীদের উপর হামলা চালাচ্ছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টি (বিএনপি)।

দেশের ইতিহাসে এটি একাদশ সংসদীয় নির্বাচন, এবং এবার কড়া মোকাবিলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধীপক্ষ জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের মধ্যে, যার প্রধান কাণ্ডারী বিএনপি, যে দলের নেত্রী খালেদা জিয়া আপাতত দুর্নীতির অভিযোগে কারাবন্দী। বর্ষীয়ান বিএনপি নেতা রুহুল কবীর রিজভীর বক্তব্য, "সোমবার সবচেয়ে বেশি হিংসার ঘটনা ঘটেছে। বিরোধীদের জনসভা এবং প্রচার অভিযানের ওপর হামলা চালায় পুলিশ ও শাসক দলের কর্মীরা।"

এই অভিযোগ তীব্রভাবে খণ্ডন করে আওয়ামী লীগ। "আমরা নিজেরাই জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট এবং বিএনপি-জামাতের বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়েছি, কারণ তাদের কর্মীরা সারা দেশে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের আক্রমণ করছে," বলেন আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান।

আবহাওয়া শান্ত রাখতে ইতিমধ্যে মোতায়েন হয়েছে সেনাবাহিনী। এবারের নির্বাচনের একটি মূল ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি, যার "সংবেদনশীল" দিকটা ক্রমশই ঢাকার কূটনৈতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। বাংলাদেশের ১৬ কোটি নাগরিকের মধ্যে আন্দাজ দশ শতাংশ সংখ্যালঘু, যাঁদের মধ্যে ৮-৯ শতাংশ হিন্দু, ০.৫ শতাংশ খ্রিস্টান, এবং বাদবাকি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ।

বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, "আমরা জানি, অতীতে সংখ্যালঘু মানুষজন বিপদের মুখে পড়েছেন। বর্তমান সরকার পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে, এদিকে আমরাও দেখছি যাতে সাম্প্রদায়িক কোনো শক্তি আমাদের ভোট না পায়। কেন্দ্রে পক্ষপাতহীন এবং ধর্মনিরপেক্ষ সরকার থাকা জরুরি।" রোজারিওর আরও বক্তব্য, ১৯৯১ সালের পর "প্রায় এক মাস ধরে সংখ্যালঘুদের অত্যাচার ও নিপীড়ন সহ্য করতে হয়", এবং তাঁর মতে, এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বর্তমানে জেলবন্দী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া।

এই ধরনের সবচেয়ে বড় হামলা হয় ২০০১ সালে, যখন বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসার পর সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে হিন্দুদের, আওয়ামী লীগকে সমর্থন করার দায়ে নিগৃহীত হতে হয়। কোর্টের নির্দেশ মেনে ২০০৯ সালে একটি বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করে শেখ হাসিনার অধীনে আওয়ামী লীগ সরকার। উদ্দেশ্য, প্রায় ৫,০০০ খুন, ধর্ষণ এবং অন্যান্য ঘটনার তদন্ত করা। এছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, যাঁদের মধ্যে ছিলেন বিএনপি-জামাত জোটের ২৫ জন মন্ত্রী ও সাংসদ।

কিন্তু কমিশনের রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয় নি। এবং আওয়ামী লীগের দশ বছরের শাসনকালে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপও নেওয়া হয় নি। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় হিন্দু নেতা রাণা দাশগুপ্ত ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, "এবার আমরা অনেক বেশি সজাগ...বাংলাদেশে অনেকসময়ই দেখা গেছে, ভোটের পরপরই হিংসার ঘটনা বৃদ্ধি পায়, যেমন ২০০১ সালে হয়েছিল।" অনেকটা এই আশঙ্কা বশত বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচন কমিশনের কাছে তাদের নিরাপত্তা রক্ষার আবেদন জানিয়েছে।

কমিশনের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "জাতি, ধর্ম, রাজনৈতিক মতবাদ, লিঙ্গ নির্বিশেষে যে কোনো ধর্মীয় বা জাতিগতভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ভোট দিতে পারবেন এবং তারপর নিরাপদে তাঁদের গৃহে থাকতে পারবেন।"

প্রতিটি বড়ো রাজনৈতিক দলও এই সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ককে আশ্বস্ত করতে তৎপর, ফলত এই নির্বাচনে দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু সংখ্যালঘু প্রার্থী: আওয়ামী লীগের ১৮ জন, বিএনপির সাতজন, এবং এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টির তিনজন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছে যে সংখ্যালঘুদের জন্য একটি জাতীয় কমিশন গঠিত হবে। "ধর্মীয় এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সমস্ত আইন এবং প্রক্রিয়া বাতিল করা হবে, কোনোরকম ভেদাভেদ থাকবে না।"

বিএনপি-ও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তারা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য একটি আলাদা মন্ত্রক গঠন করবে। "পাহাড় ও সমতলের সমস্ত ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জীবন, সম্পত্তি, এবং সামাজিক মর্যাদার অধিকার সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত থাকবে," বলছে তাদের নির্বাচনী ইশতেহার।

মঙ্গলবার বড়দিন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অন্যান্য শীর্ষ নেতৃবৃন্দ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়াও এর একটি আলাদা দিক রয়েছে। ঢাকার অগ্রণী ব্যাঙ্কের কর্মী উত্তম কুমার সাহা বলেন, বাংলাদেশ "দাহ্য খড়কুটো রাখার বাক্স" হয়ে উঠলে বিপদ। "আমাদেরও বিপদ, ভারতেরও।"

ঢাকায় ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে সেজে উঠেছে একটি জমকালো সাদা বাড়ি, দেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বাসভবনের ঠিক সামনে। সাদা বাড়িটির নাম সেন্ট মেরিজ ক্যাথিড্রাল, রমনার কাঁকরাইল রোডের ওপর অবস্থিত। সুসজ্জিত গির্জার গেটে একটি কমলা রঙের পোস্টার, তাতে বাংলায় লেখা: "শুভ বড়দিন।"

Sheikh Hasina Bangladesh
Advertisment