Bangladesh Protests: রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল বাংলাদেশ। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের। কুমিল্লা, বগুড়া, ঢাকা-সহ একাধিক জায়গায় সংঘর্ষের খবর মিলেছে। এদিকে সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৭০ ছাড়িয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনে অবস্থানে বসার জেরে আওয়ামি লিগ, ছাত্রলিগ ও যুবলিগের সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে ফের হিংসা শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা হাসিনার পদত্যাগের দাবি করছে, এর আগে জুলাই মাসে পড়ুয়ারা সরকারি চাকরির জন্য কোটা পদ্ধতির অবসানের আহ্বান জানিয়ে শুরু হওয়া বিক্ষোভের পর হিংসা পরিণত হয়েছিল যাতে ২০০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছিল।
হিংসা ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসিনা বলেছিলেন যে যাঁরা "নাশকতা" এবং বিক্ষোভের নামে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে তাঁরা আর ছাত্র নয়, অপরাধী এবং জনগণকে তাঁদের শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হবে। অশান্তির জেরে সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। আদালত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। রবিবার মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ছিল, যখন ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপ সহ মেসেজিং অ্যাপগুলি এমনকি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটেও ব্যবহারযোগ্য ছিল না।
সেদেশের সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে মুন্সিগঞ্জে বিক্ষোভকারী ও আওয়ামি লিগ নেতাদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত দুজন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়েছেন। ডেইলি স্টার পত্রিকার খবর অনুযায়ী, রবিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বেশ কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। একাধিক স্থানে পুলিশের গাড়ি ও সরকারি ভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। এদিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার বার্তা দিয়ে হাসিনা বলেছেন, “আমি কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসতে চাই। আমি শুনতে চাই তাঁরা কী বলে। আমি সংঘর্ষ চাই না।” আন্দোলনকারীদের তরফে হাসিনার সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়া হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন শেখ হাসিনা।
কী বলেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা?
বাংলাদেশে শান্তি ফেরাতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একপ্রস্থ আলোচনায় বসার ডাক দিলেও আন্দোলনকারীরা হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে অনড়। শনিবার ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে সংগঠনের কো-অর্ডিনেটর নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, সরকারের নির্দেশে গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে। অবিলম্বে এই স্বৈরাচারী সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড, রবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। তাতে বেশ কয়েকজন পড়ুয়া জখম হয়েছেন। এরইমধ্যে আজ রবিবার ও সোমবার একাধিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে হাসিনার দল আওয়ামি লিগ।
আরও পড়ুন - < Akhil Giri: মহিলা রেঞ্জারকে কুকথা! রেগে আগুন মমতা! অখিল গিরির মন্ত্রিত্ব যাওয়া প্রায় ‘পাকা’ >
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারী, পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষের সময় মুন্সিগঞ্জের কেন্দ্রীয় জেলায় কর্মস্থলে যাওয়ার পথে দুই নির্মাণ শ্রমিক নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়েছেন। জেলা হাসপাতালের সুপার আবু হেনা মহম্মদ জামাল বলেন, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাদের হাসপাতালে আনা হয়।
চট্টগ্রামে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবন এবং আওয়ামি লিগের সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর কার্যালয়ে হামলা হয়েছে।
আপাত প্রতিশোধ হিসেবে, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরি-সহ বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর বেশ কয়েকজন নেতার বাড়ি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা পাবনায় বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত ও ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনকারীরা অসহযোগ কর্মসূচি শুরু করায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে।
ঢাকার অধিকাংশ দোকানপাট এদিন বন্ধ ছিল। শত শত শিক্ষার্থী ও চাকুরিজীবী ঢাকার শাহবাগে জড়ো হয়ে চারদিকে যান চলাচল বন্ধ করে দেন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সাম্প্রতিক হিংসা নিহতদের বিচারের দাবিতে স্লোগান দেয়, BD News 24 নিউজ পোর্টাল জানিয়েছে।
অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনেও রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড়ে জড়ো হয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁরা সরকারবিরোধী স্লোগান দেন।
ডেইলি স্টার পত্রিকার খবরে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বেশ কয়েকটি গাড়িতে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা আগুন দিয়েছে। পত্রিকাটি বলেছে, লাঠিধারী লোকজনকে হাসপাতাল চত্বরে প্রাইভেট কার, অ্যাম্বুলেন্স, মোটরসাইকেল এবং বাস ভাঙচুর করতে দেখা গেছে, যা রোগী, তাঁদের সেবিকা, ডাক্তার এবং কর্মীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।
গত মাসে, বাংলাদেশে সরকারি চাকরির জন্য কোটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী ছাত্র গোষ্ঠীগুলির নেতৃত্বে বিক্ষোভে কমপক্ষে ২০০ জন নিহত, হাজার হাজার আহত এবং প্রায় ১০ হাজার জন গ্রেফতার হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট অধিকাংশ কোটা বাতিল করার পর বিক্ষোভ থামে, কিন্তু শিক্ষার্থীরা নিহতদের পরিবারের জন্য বিচারের দাবিতে গত সপ্তাহে বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভে সামিল হয়।