রাণা প্লাজা দুর্ঘটনার ৫ বছর, ঢাকা প্রেস ক্লাবের সামনে (ছবি নারায়ণন পি এম)
পাঁচ বছর কাটল রাণা প্লাজা দুর্ঘটনার। বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের হাল-হকিকৎ খুব বেশি বদলাল না আজও। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের বস্ত্র কারখানা রাণা প্লাজা ভেঙে পড়ে প্রাণ হারান ১১৩৫ জন শ্রমিক। আটতলা ওই বাড়ি ভেঙে আহত হন ২০০০-এরও বেশি শ্রমিক।
Advertisment
এই দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের সরকার কারখানার নিরাপত্তা বিষয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ করার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়। সরকার ছাড়াও এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয় বিভিন্ন কোম্পানি ব্র্যান্ড এবং ইউনিয়ন। এসব সত্ত্বেও পাঁচ বছর পর পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি বলে গবেষণা থেকে জানা গেছে। নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে, বাণিজ্যক্ষেত্রে বেশ কিছু ব্র্য়ান্ড যথেষ্ট উন্নতি করেছে বটে, কিন্তু বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পে কর্মরত শ্রমিকরা আজও ভয়ংকর অবস্থার মধ্যে কাজ করছেন। আরও পড়ুন, কুমারীধর্ষণের চরম শাস্তিতে সক্রিয় সরকারঃ একটি প্রতিক্রিয়া
নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টার্ন সেন্টার ফর বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাবকনট্র্যাক্টে যেসব কারখানায় কাজ হয়, সেসব কারখানায় বহু অল্পবয়সী মেয়েরা যে পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করেন, তা একেবারেই মেনে নেওয়ার মত নয়। এই বিবৃতিটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে “Five Years After Rana Plaza: The Way Forward”- শীর্ষক একটি রিপোর্টে।
Advertisment
রিপোর্টে বলা হয়েছে, কারখানাগুলিতে ৩০০০ এর মত শ্রমিক বস্ত্র রফতানিতে কাজের চাপ কমানোর জন্য সাব কনট্র্যাক্টে কাজ করে থাকেন। আরও পড়ুন, রমনার বটমূল কেঁপে উঠেছিল বিস্ফোরণে
পোশাকের ক্রমহ্রাসমান দাম এবং ফ্যাশনের দ্রুত বদলের জন্যই ঝুঁকির তোয়াক্কা না করেই সাবকন্ট্র্যাক্টের উপর নির্ভরতা বাড়ছে বলে ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে। রিপোর্ট অনুসারে, তুলনামূলক ছোট কারখানাগুলি এখনও বিপজ্জনক বাড়ি ব্যবহার করে চলেছে, যে সব বাড়িতে না রয়েছে ফায়ার অ্যালার্ম, না রয়েছে ফায়ার একজিট।
বাংলাদেশের বস্ত্র কারখানাগুলিকে ডিজিট্যাল মানচিত্রে আনার একটি প্রকল্প রয়েছে। সেই প্রকল্পের প্রধান পরভিন হুডা বলছিলেন, হাজার শ্রমিকের মৃত্যু নিষ্ফলা হয়নি। শ্রমিকদের ভয়ংকর অবস্থার ব্যাপারে তা সকলের চোখ খুলে দিয়েছে, শুধু শ্রমিকদের নিরাপত্তা নয়, কাজ চলছে তাদের অধিকার সুনিশ্চিত করার।
২০১৩র রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর রেডিমেড বস্ত্রশিল্পের নিরাপত্তার বিষয় সুনিশ্চিত করতে যে পদক্ষেপগুলি গৃহীত হয়, তার মধ্য়ে অন্যতম ছিল বাংলাদেশ অ্যাকর্ড। সেই বাংলাদেশ অ্যাকর্ডের তরফে দাবি করা হয়েছে সচেতনতা ক্রমশ বাড়ছে। আরও পড়ুন, মোদি শুধু নিজের পদ নিয়েই ব্যস্ত, ফের প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা রাহুলের
নিরাপত্তার ব্যাপারে বেশ কিছুদূর এগোনো গেলেও শ্রমিকদের মজুরির অবস্থা এখনও ভয়াবহ। বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পের শ্রমিকরা এখনও পারিশ্রমিকের ব্যাপারে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছেন। গত পাঁচ বছরে নিরাপত্তা ও বাইরের অবস্থা কিছুটা বদলালেও মজুরির হাল যে এখনও একই জায়গায়, সে কথা জানাচ্ছেন বাংলাদেশ ইন্স্টিট্যুট অফ লেবার স্টাডিজের সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ।
“Five Years After Rana Plaza: The Way Forward” রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে উৎপাদিত সস্তা পোশাকের সবচেয়ে বড় খরিদ্দার পশ্চিমি ব্র্যান্ডগুলি। তাদের এবং পশ্চিমি সরকারগুলির উচিত বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পের পরিস্থিতি উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করা।