আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে গচ্ছিত টাকা কি আদৌ সুরক্ষিত? এ প্রশ্ন আরও একবার উসকে দিল শহর কলকাতায় একাধিক ব্যাঙ্ক প্রতারণার ঘটনা। এটিএমের পিন নম্বর জেনে টাকা হাতানেোর ঘটনা তো নতুন কিছু নয়। ফোন করে ব্যাঙ্ককর্মী পরিচয় দিয়ে এটিএম সংক্রান্ত সব তথ্য জেনে হাজার হাজার টাকা খোয়ানোর ঘটনা তো এখন রোজনামচা হয়ে গিয়েছে। এবার ব্যাঙ্ক প্রতারকদের আরেক মহান কীর্তি সামনে এল। যে কীর্তিতে এ শহরের এক গ্রাহক হাজার হাজার টাকা খুইয়েছেন।
কার্ড স্কিমার (skimmer) নামে এক প্রকার ডিভাইসের কথাই মাথায় খেলছে পুলিশের। এই ডিভাইসের সাহায্যে গ্রাহকের অজান্তে চুপি চুপি অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু এই কার্ড স্কিমিং আদপে কী? ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরি করার জন্য একটা ছোটো ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। যখন একটা স্কিমারের মাধ্যমে কার্ড সোয়াইপ করা হয়, তখন কার্ডের চুম্বকীয় অংশে থাকা সব তথ্য ওই ডিভাইস মারফৎ জানা যায়। ক্রেডিট কার্ডের তথ্য হাতাতে অনেক সময় এই ডিভাইসকেই কাজে লাগায় প্রতারকরা।
ঠিক কী হয়েছিল? গতকাল দুপুরে একটা মোবাইলে মেসেজ পান প্রশান্ত কুমার নামের এক ব্যক্তি। প্রথম মেসেজে তিনি দেখেন, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এরপর আরও তিনটি মেসেজ ঢোকে প্রশান্তবাবুর ফোনে। দেখা যায়, চার দফায় ওই ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট থেকে ৪০ হাজার টাকা তোলা হয়েছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে প্রশান্তবাবু জানান, "এটিএম সংক্রান্ত তথ্য জানতে চেয়ে আমার কাছে কোনও ফোন বা মেসেজ আসেনি। আচমকাই পরপর মেসেজ ঢুকতে থাকে ফোনে। মেসেজ দেখতে গিয়ে দেখি চারদফায় ১০ হাজার টাকা করে মোট ৪০ হাজার টাকা তোলা হয়েছে।"
এ ঘটনার পরই তিনি কানাড়া ব্যাঙ্কের গড়িয়াহাট শাখায় যান। ওই শাখাতেই তাঁর অ্যাকাউন্ট ছিল। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে গোটা বিষয়টা জানানোর পাশাপাশি গড়িয়াহাট থানাতেও অভিযোগ জানান তিনি। পরে লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে যে, কানাড়া ব্যাঙ্কের শাখায় এ ঘটনাতে প্রতারকরা কার্ড স্কিমার ব্যবহার করে থাকতে পারে, যার সাহায্যে গ্রাহকের অজান্তেই তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতানো যায়।
শুধু কানাড়া ব্যাঙ্কই নয়। পুলিশের নজরে আরও দুই ব্যাঙ্ক এই মুহূর্তে চিন্তা বাড়িয়েছে। পিএনবি ও ইউবিআই ব্যাঙ্কের দুই গ্রাহকও প্রতারণার শিকার হয়েছেন এ শহরে। গত ২৮ জুলাই বেনিয়াপুকুর থানায় ওয়াজিদ আলি নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ জানান যে, তাঁর ইউবিআই অ্যাকাউন্ট থেকে ৫০ হাজার টাকা তোলা হয়েছে। অন্যদিকে পিএনবি-র এটিএম থেকে ৩০ হাজার টাকা তোলা হয়েছে বলে তিলজলা থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন অজয় চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি।
আরও পড়ুন, প্রেসিডেন্সিতে ছাত্র আন্দোলন, ফের নতি স্বীকার কর্তৃপক্ষের
ইতিমধ্যেই এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। কে বা কারা টাকা তুলল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। কানাড়া ব্যাঙ্কে প্রতারণার ঘটনায় এদিন গড়িয়াহাট শাখায় যায় স্থানীয় থানার পুলিশ। ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের সঙ্গে এ নিয়ে কথাও বলে।