Advertisment

খালি পায়ে অরণ্য বাঁচিয়ে, ফল বিক্রির টাকায় স্কুল! পদ্মশ্রী দুই কীর্তিমানের, পড়ুন কাহিনী

সেই দিন থেকেই তাঁর সংকল্প, নিরক্ষর থেকে যে সমস্যায় এতদিন তিনি পড়েছেন, তাঁর গ্রামের কেউ যাতে সেই সমস্যায় না পড়ে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Padma Award, Karnataka, Environment

বাঁদিক থেকে হরেকলা হজব্বা এবং তুলসি গৌড়া।

Padma Award 2021: এবার পদ্ম পুরস্কার প্রাপকদের তালিকায় যে দুই নাগরিকের নাম রয়েছে, তাঁরা সমাজের প্রান্তিক মানুষ। একজনের নাম তুলসি গৌড়া, অপরজন হরেকলা হজব্বা। প্রথমজন ‘এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ফরেস্ট’ নামে পরিচিত। কর্নাটকের হালাক্কি আদিবাসী গোষ্ঠীর এই বৃদ্ধা খালি পায়ে দৌড়ে বেড়ান রাজ্যে এই জঙ্গল থেকে সেই জঙ্গল। হাতে পাতা টিপে কিংবা মাটির গন্ধ শুঁকে বলে দেন উদ্ভিদের প্রজাতি কিংবা সংরক্ষণ প্রক্রিয়া। তাই বন সংরক্ষণে অনবদ্য অবদান রাখার জন্য এবার পদ্মশ্রী পান তুলসী গৌড়া।

Advertisment

উত্তর কন্নড়ে ‘বন দেবী’ নামে বেশি পরিচিত এই বৃদ্ধা। সেই জেলার হন্নালি গ্রাম এযাবৎকাল তাঁর ঘর-সংসার। ১২ বছর বয়সে প্রথম বৃক্ষ রোপণ, তারপর থেকে শুরু করে এযাবৎকাল প্রায় হাজারের বেশি বৃক্ষ গোটা রাজ্যে পুঁতেছেন এই বৃদ্ধা। অনটনের সংসারে যখন দু’মুঠো ভাত জোগাড় লক্ষ্য, তখন সেভাবে পুঁথিগত বিদ্যার সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে ওঠেনি তাঁর। দুই বছর বয়সে পিতৃহারা হয়েছেন তুলসি দেবী। কিশোরী অবস্থায় বিয়ে হয়ে স্থানীয় এক নার্সারিতে দিন মজুরের কাজ শুরু করেন তিনি। সেই থেকে উদ্ভিদের প্রতি ভালবাসা তুলসি গৌড়ার। বন সংরক্ষণের দক্ষতাকে কুর্নিশ জানিয়ে রাজ্য বন দফতর তাঁকে স্থায়ী কাজে নিযুক্ত করেছে। উদ্ভিদ প্রতিপালন এবং সংরক্ষণই এখন তাঁর ঘর-সংসার।

এদিকে, তুলসি দেবীর সাফল্যে যখন নেট দুনিয়ায় হইচই, তখন ম্যাঙ্গালুরুর হরেকলা সমাজ গঠনে অনন্য নজির গড়ে পেয়েছেন পদ্মশ্রী। ম্যাঙ্গালুরু থেকে ২৫ কিমি দূরে অবস্থিত গঞ্জ হরেকলা। সেই এলাকার নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম হজব্বার। গ্রামে যেহেতু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চল ছিল না। তাই পুঁথিগত বিদ্যা জোটেনি তাঁর। আর্থিক অনটনের কারণে গ্রামের বাইরের স্কুলে গিয়ে পড়াশোনায় অপারগ ছিলেন বছর ৬৯-এর বৃদ্ধ। তাই কিশোর বয়স থেকে রুটি-রুজি জোগাড়ে পারিবারিক ফল বিক্রির ব্যবসায় নেমে পড়েন তিনি। এভাবেই ভালো চলছিল, কিন্তু একদিন বেজায় বিপাকে পড়েন হরেকলা। দুই বিদেশী তাঁকে ইংরাজিতে কমলালেবুর দাম জিজ্ঞাসা করলে, সেই কিছুতেই তাঁদের ভাষা বুঝতে পারে না। ফলে সেই গ্রাহক হারান এই বৃদ্ধ। সেই দিন থেকেই তাঁর সংকল্প, নিরক্ষর থেকে যে সমস্যায় এতদিন তিনি পড়েছেন, তাঁর গ্রামের কেউ যাতে সেই সমস্যায় না পড়ে।

তাই নিজের ফল বিক্রির পয়সার একটা অংশ জমাতে শুরু করেন স্কুল নির্মাণে। ২০০০ সালে তাঁর সেই স্বপ্নপূরণ হয়। প্রাথমিক ভাবে ২০ জন শিশুকে নিয়ে সেই স্কুল শুরু হয়। এরপর সমাজের প্রভাবশালী নানা অংশের সাহায্যপ্রার্থী হয়ে ধীরে ধীরেই বড় করতে থাকেন সেই স্কুল। রাজ্যের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশির হয় তাঁর কীর্তির কাহিনী। সমাজ গঠনে অনবদ্য অবদানের জন্য ৫ লক্ষ টাকা পুরস্কারও পান তিনি। এবার ভারত সরকারের অন্যতম সেরা নাগরিক সম্মান পদ্মশ্রী পেয়ে একটা বৃত্ত সম্পন্ন করলেন হরেকলা হজব্বা।   

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

environment karnataka padma-award Padma Shri Social Work
Advertisment