ভ্রাতৃদ্বিতীয়ায় বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারতের সেমিফাইনাল ম্যাচের দিনই ওয়াংখেড়েতে মহিলাদের সমতা এবং নারী ক্ষমতায়নের পক্ষে সুর চড়ালেন ইংল্যান্ডের বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটার ডেভিড বেকহ্যাম। মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ভারত-নিউজিল্যান্ডের সেমিফাইনাল ম্যাচ দেখার সময় সকলেই লক্ষ্য করেছেন, ইংলিশ ফুটবল তারকা মাঠে ক্রিকেটারদের প্রশংসা করছেন।
স্টেডিয়ামে আসার আগে, তিনি গুজরাতের শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে দেখা করেন। সেই সব শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে, যাঁরা তাঁদের সম্প্রদায়ে পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন। উদ্ভাবন শক্তিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। দেখা করেছেন রিংকু প্রবিভাইয়ের মত যুবতী মহিলাদের সঙ্গেও, যাঁরা তাঁদের স্বপ্নকে অনুসরণ করার জন্য বাধা অতিক্রম করেছেন।
বেকহ্যাম ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত। তিনি ভারতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সঙ্গে ইউনিসেফের অংশীদারিত্ব উদযাপন করতে এসেছেন। সেই বেকহ্যাম বলেন, 'একজন অল্পবয়সি মেয়ের বাবা হিসেবে আমি রিংকু এবং অন্যান্য অল্পবয়সি মেয়েদের সঙ্গে দেখা করতে পেরে রীতিমতো অনুপ্রাণিত হয়েছি। তাঁরা পরিবর্তনের জন্য লড়াই করছে। তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলছে।'
২১ বছর বয়সি রিংকু প্রবিভাই ছয় বছর আগে তাঁর বিয়ে স্থগিত করেছিলেন। তাঁর পরিবার তাঁকে স্কুল ছেড়ে বিয়ে করার জন্য চাপ দিচ্ছিল। ইউনিসেফ-সমর্থিত 'যুবতী মেয়েদের' গ্রুপ থেকে বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর পরিণতি সম্পর্কে জানার পর, রিংকু একজন সমাজকর্মীর কাছে তাঁর দুর্দশার কথা জানান। তাঁর বিয়ে বন্ধ করে দেন। আজ, রিংকু গুজরাটের বনসকণ্ঠ জেলায় নার্সের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। বেকহ্যাম বলেন, 'রিঙ্কু সেই সব মেয়েদের কাছে রোল মডেল, যাঁরা তাঁদের শিক্ষা শেষ করতে চায়, তাঁদের সম্ভাবনা পূরণ করতে চায়।'
স্টেডিয়ামে বেকহ্যাম দক্ষিণ এশিয়ায় ইউনিসেফের আঞ্চলিক রাষ্ট্রদূত কিংবদন্তি ক্রিকেটার শচীন তেণ্ডুলকার এবং বিভিন্ন শিশুদের সঙ্গে 'Be A Champion' প্রচারে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি দর্শকদের কাছে ছেলে-মেয়েদেরকে খেলাধূলা এবং জীবনের নানাক্ষেত্রে সমান সুযোগ দেওয়ার জন্য আবেদন জানান। বেকহ্যাম জানান, খেলাধূলা জীবনের নানাক্ষেত্রে অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করে। লিঙ্গ সম্পর্কে ধারণাগুলো ভেঙে দেয়। এই মহান ফুটবলার বলেন, 'মেয়েদের স্বপ্নপূরণে খেলাধূলা একটি উপায়। ছেলেমেয়ে নির্বিশিষে শিশুদের জন্য খেলার মাঠ সমানভাবে উন্মুক্ত করার ক্ষেত্রে আমি সবসময়ই বিশ্বাসী।'
ভারতে তাঁর চার দিনের সফরে বেকহ্যাম লক্ষ্য করেছেন কীভাবে ভারত সরকারের অংশীদারিত্বে ইউনিসেফ-সমর্থিত কর্মসূচিগুলো মেয়েদের জীবনে আলোর দিশা দেখাচ্ছে। তিনি এই সমস্ত কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া কর্মী, সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। জানতে পেরেছেন, কীভাবে নাবালিকা এবং মহিলারা বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রমকে না-বলে, শিশুদের স্কুলে পঠনপাঠন চালিয়ে যেতে সাহায্য করছেন।
ইউনিসেফের ভারতের প্রতিনিধি সিনথিয়া ম্যাকক্যাফ্রে এই প্রসঙ্গে বলেন, 'বেকহ্যামের ভারত সফর প্রতিটি শিশুর জন্য সমান সুযোগ এবং অধিকারের গুরুত্বের বার্তাটিকে তুলে ধরেছে। তাঁর সফর সকলের, বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষমতায়ন, সমান সুযোগের পক্ষে ইউনিসেফের কর্মসূচিকে শক্তিশালী করেছে। যাতে প্রতিটি শিশু বেঁচে থাকতে পারে, উন্নতি করতে পারে এবং তাদের স্বপ্ন অনুসরণ করতে পারে, সেই ব্যাপারে ভারত সরকারকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে ইউনিসেফ গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। লিঙ্গ সমতাই ভারতে ইউনিসেফের সমস্ত কাজের মূলে।'
বেকহ্যাম গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্রম সারাভাই চিলড্রেন ইনোভেশন সেন্টারে তরুণ উদ্ভাবক এবং উদ্যোক্তাদের সঙ্গেও দেখা করেছেন। ভারতে শিশু এবং যুবকদের বিকাশে, নারীর উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে এই কেন্দ্র সহায়তা করছে। এই কেন্দ্রের সদস্য ২৭ বছর বয়সী শিখা শাহ। তিনি AltMat স্থাপন করেছেন। এটি একটি বস্তুগত বিজ্ঞান সংস্থা। যা কৃষির পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করছে। টেক্সটাইল এবং ফ্যাশনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিকে সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতায় তুলে ধরতে চেষ্টা চালাচ্ছে।
ইউনিসেফ মেয়েদের শিক্ষাদান এবং সুযোগের ক্ষেত্রে ভারত সরকারের সঙ্গে কাজ করছে। আত্মবিশ্বাস এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করছে। পরবর্তী প্রজন্মের উদ্যোক্তা এবং নেতা হতে সাহায্য করছে। আহমেদাবাদে বেকহ্যাম গুজরাট ইয়ুথ ফোরামের শিশুদের সঙ্গে দেখা করেছেন। দুই বছর আগে, এলিক্সির এবং ইউনিসেফ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই ফোরাম তরুণদের পরিবর্তনে অনুপ্রাণিত করতে কাজ করছে।
বেকহ্যাম ১২ বছর বয়সি তরুণ ক্রিকেটার প্রাথা ভানার সঙ্গেও কথা বলেছেন। প্রথা ছয় বছর বয়সে ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিল। প্রথা এখন অনেক বালিকার কাছেই আদর্শ। বেকহ্যাম ১৪ বছর বয়সি লেখক আর্য চাভদার সাথেও দেখা করেছেন। আর্য তাঁর বই এবং শিল্পের থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে সুবিধাবঞ্চিত ক্যানসার রোগীদের সাহায্য করেন।
আরও পড়ুন- মর্মান্তিক! নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৩০০ ফুট খাদে পড়ে গেল বাস, মৃত্যুমিছিল-হাহাকার, শোক প্রকাশ মোদীর
কোভিড-১৯ অতিমারি দক্ষিণ এশিয়ায় লিঙ্গ বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। গার্হস্থ্য সহিংসতা বৃদ্ধি করেছে। বাল্যবিবাহ বাড়িয়েছে। বেতনভুক কাজ আর কর্মসংস্থানেরও ক্ষতি করেছে। মেয়ে এবং নারীদের প্রভাবিত করেছে। বিশেষ করে তাঁদের, যারা এই উপমহাদেশে দীর্ঘমেয়াদি আর্থ-সামাজিক ধাক্কা সহ্য করে চলেছেন।