নিয়ন্ত্রণরেখায় উত্তেজনার আবহেই গত বৃহস্পতিবারই মস্কোয় ভারত-চিন বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয়েছিল। সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমণে দ্রুত সেনা সরানো সহ পাঁচটি বিষয়ে একমত হন রাজনাথ সিং ও ওয়াং ই। কিন্তু, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপেস জানতে পেরেছে, এই বৈঠকের আগেই প্যাংগংয়ের উত্তর প্রান্তে ভারত ও চিনা সেনারা একে অপরকে লক্ষ্য করে শূন্যে গুলি ছুঁড়েছিল। প্রায় ১০০-২০০ রাউন্ড গুলি চলে। অবশ্য একে অন্যকে সতর্ক করার জন্যই এই গুলি চালানো হয়েছিল বলে খবর। ? যদিও এর ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়।
চুশুল সাব সেক্টরের ভারত ও চিনা সেনাবাহিনী একে অপরের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ তোলে। প্যাংগং উত্তরের ঘটনা অবশ্য তার চেয়েও অনেক গম্ভীর ছিল বলে জানা গিয়েছে।
ভারতীয় সেনার উচ্চপদস্থ কর্তারা অবশ্য এই গুলি চালানোর ঘটনা সম্পর্কে অবহিত। প্যাংগংয়ের উত্তর প্রান্তের দখল ঘিরেই এই ঘটনা বলে সেনা সূত্রে খবর। এক সিনিয়ান সেনা অফিসারের মতে, '৩ এবং ৪ নম্বর ফিঙ্গারের সংযোগস্থল- যেখান থেকে আরও উত্তরে অগ্রসর হওয়া যায় সেখানেই দুই বাহিনী একে অপরকে নিশানা করে শূন্যে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছিল।'
চুশুলের পর গুলি চালনার এই ঘটনা নিয়ে এখনও পর্যন্ত ভারত বা চিন- কোনও পক্ষই সরকারিভাবে মুখ খোলেনি।
তবে, ১০ সেপ্টেম্বর মস্কোয় দুই দেশের বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পর পরিস্থিতি কিছুটা প্রশমিত হয়েছে বলে সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্যাংগংজুড়ে উত্তেজনা ছিল পাহাড় প্রমাণ। বাহিনী ও সামারিক সরঞ্জামের মজুতদারি বেড়েছিল। বেশ কয়েকবার গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। যদিও ভারতীয় সেনা এই ধরনের ঘটনাকে তেমন গুরুত্ব দিতে চায়নি বলেই দাবি বাহিনীর সিনিয়ার অফিসারের।
পূর্ব লাদাখের প্যাংগং লেক, গালওয়ান-সহ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় বিপুল সেনা মোতায়েন করে আগ্রাসন শুরু করেছিল চিন। তার জেরে গালওয়ান উপত্যকায় ঘটে গিয়েছিল রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। সাম্প্রতিক উত্তেজনার সূত্রপাত গত ২৯-৩০ অগস্ট রাতে। চুক্তি অনুযায়ী লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় রাতে কোনও অভিযান চালানো যায় না। কিন্তু, ভারতীয় সেনা সূত্রে খবর, ওই রাতে চিনা বাহিনী সেই সে সবের তোয়াক্কা না করে স্থিতাবস্থা নষ্ট করার চেষ্টা করে। প্যাংগং লেকের দক্ষিণ পাড়ে বিপুল সেনা মোতায়েন করে বেজিং। রাতে ওই বাহিনী পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে এবং এলাকা দখলের চেষ্টা করে। তবে ভারতীয় সেনা তা রুখে দিয়েছিল।
এর পরই ৩১ অগস্ট দিনের বেলা ফের অভিযান শুরু করে লালফৌজ। ভারতের দখলে থাকা একাধিক পাহাড়ের চূড়া থেকে ভারতীয় বাহিনীকে সরিয়ে নিজেদের দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে বেজিং। ভারতীয় সেনা জওয়ানদের চিনা বাহিনী ঘিরে ফেলে বলেও অভিযোগ। তবে সেই সময় ব্রিগেডিয়ার পর্যায়ের সেনা অফিসারদের হস্তক্ষেপে বিষয়টি মিটেও গিয়েছিল।
পরবর্তীকালে প্যাংগং লেকের উত্তরপ্রান্তে নিজেদের অবস্থান পুনর্বিন্যাস করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এদিকে চিনা সেনা ফিঙ্গার ৪-এ অবস্থান করছে। ফিঙ্গার ৪ থেকে ৮ পর্যন্ত ভারতীয় ভূখণ্ড হলেও দীর্ঘদিন ধরেই চিনা সেনা এই চারটি ফিঙ্গার পয়েন্ট দখল করে রেখেছে। আর যে এলাকায় গুলি চলেছে, সেখানে দু’পক্ষের সেনার মধ্যে দূরত্ব ৫০০ মিটারের মতো, জানিয়েছেন ওই আধিকারিক। এই পরিস্থিতিতে উত্তেজনা দেখা দেয়। তখনই শূন্যে প্রায় ১০০-২০০ রাউন্ড গুলি চলে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন