Advertisment

বনে ছাড়ার পরও খাওয়ানো হচ্ছে চিতাদের, পর্যবেক্ষণের অভাবে বিরাট ধাক্কা ‘প্রোজেক্ট চিতা’য়

কুনো কর্তৃপক্ষ কেন এত উদাসীন উঠেছে প্রশ্ন

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Express investigation, African cheetahs, cheetah, cheetah deaths at Kuno, Kuno National Park (KNP), Cheetah Action Plan 2022, cheetah deaths, cheetah dies, Kuno National Park, cheetah, madhya pradesh, Palpur East Forest Range, forest, forest officials, cheetah dies"

জঙ্গলে ছাড়ার পরও খাওয়ানো হচ্ছে চিতাদের, পর্যবেক্ষণের অভাবে বিরাট ধাক্কা ‘প্রোজেক্ট চিতা’য়

একের পর এক চিতার মৃত্যু নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নামিবিয়ার বিশেষজ্ঞরা চিতা প্রকল্পের পরিচালনার পদ্ধতি নিয়ে "গুরুতর উদ্বেগ" প্রকাশ করেছেন। জুলাইয়ের মাঝামাঝি দুটি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে সময়মত তাঁদের কিছু বিষয় সম্পর্কে জানানো হলে আটটির মধ্যে কয়েকটি চিতার মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হত। পাশাপাশি প্রকল্পে গোপনীয়তা, দক্ষতার অভাব এবং অব্যবস্থাপনার ছবিও সামনে এসেছে। গত সেপ্টেম্বরেই প্রোজেক্ট চিতার অধীনে ২০ টি চিতাকে নামিবিয়া ও আফ্রিকা থেকে আনা হয়।

Advertisment

‘প্রোজেক্ট চিতা’ নিয়ে শীর্ষ আদালতে গভীর উদ্বেগ ব্যক্ত করেছে আন্তর্জাতিক চিতা বিশেষজ্ঞদের একটি দল। সুপ্রিম কোর্টে চিঠি দিয়ে তারা জানিয়েছেন,‘‘প্রোজেক্ট চিতা নিয়ে আমাদের অন্ধকারে রাখা হয়েছিল”। সুপ্রিম কোর্টে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নামিবিয়ার চিতা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে ২০ টি চিতা ভারতে স্থানান্তরের বিষয়ে তাদের অন্ধকারে রাখা হয়েছিল। এই বিশেষজ্ঞরা প্রোজেক্ট চিতার স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য, যাদের তত্ত্বাবধানে ২০টি চিতা বিদেশ থেকে ভারতে আনা হয়েছিল। তারা সুপ্রিম কোর্টে একটি চিঠি লিখে প্রকল্পের পরিচালনার বিষয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

তারা সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছেন, “নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এবং সঠিক ও সময়মতো চিকিৎসা সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে চিতার মৃত্যু রোধ করা যেত। যদি সময়মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ডাকা হত এবং পরিস্থিতিকে ‘উপেক্ষা’ করা না হত”। নামিবিয়া থেকে আনা প্রোজেক্ট চিতার অধীনে আটটি চিতাকে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর মধ্যপ্রদেশের কুনো ন্যাশনাল পার্কে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি ১২ টি চিতা এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা হয়েছিল। ১১ মার্চ প্রথম দুটি চিতাকে বনে ছেড়ে দেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কুনো জাতীয় উদ্যানে পাঁচটি প্রাপ্তবয়স্ক চিতা এবং তিনটি চিতা শাবক মারা গেছে।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে, জাতীয় বাঘ সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ (এনটিসিএ) দ্বারা দায়ের করা একটি পিটিশনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট চিতা প্রকল্পের উপর ২০১৩ সালের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। তবে আদালত এখনও চিতা প্রকল্পের ওপর নজরদারি ফের শুরু করেছে। একই সময়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা দুটি চিতা, তেজস এবং সুরজ, যাদের মৃত্যুর কারণ রেডিও কলার থেকে সৃষ্ট ক্ষত, চিতা মৃত্যুর পর দক্ষিণ আফ্রিকার পশুচিকিৎসকও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ডাঃ আদ্রিয়ান টরডিফ তার সহকর্মীদের পক্ষে একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন এবং সেই চিঠি ভারতের সুপ্রিম কোর্টে ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে চিতা বিশেষজ্ঞ ভিনসেন্ট ভ্যান ডের মেরওয়ে, বন্যপ্রাণী পশু চিকিৎসক ডঃ অ্যান্ডি ফ্রেজার এবং ডাঃ মাইক টফটের স্বাক্ষর রয়েছে। চিঠিতে “বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আরও ভাল যোগাযোগ, চিতাদের আরও ভাল পর্যবেক্ষণ (মনিটরিং) এবং নিয়মিত রিপোর্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার মত একাধিক বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা চিতাদের মৃত্যুর পর্যালোচনা করেছেন এবং সুপ্রিম কোর্টকে বলেছেন কিভাবে চিতা প্রকল্পের বর্তমান ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ” ন্যুনতম কোন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনে চলা হচ্ছে না”, পাশাপাশি বলা হয়েছে বিশেষজ্ঞদের “মতামত” উপেক্ষা করা হচ্ছে। অবহেলার কারণে কি চিতা মারা গেছে? সুপ্রিম কোর্টে বিশেষজ্ঞদের লেখা চিঠিতে তারা এও জানিয়েছেন কীভাবে অবহেলা করা হয়েছে চিতাদের এবং এই অবহেলার পরিণতি কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে আজ তা প্রকাশ্যে।

চিঠিতে বিশেষজ্ঞরা বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে কুনোর কর্মীরা আহত পুরুষ চিতাটিকে সময়মত চিকিৎসা না মহিলা চিতাটিকে খুঁজে বের করার সিদ্ধান্ত নেয় কুনো কর্তৃপক্ষ সেও আহত হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য। এ সময় পুরুষ চিতার অবস্থার অবনতি হয় এবং কার্যত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয় পুরুষ চিতার।” বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন, ‘পরদিন সকালে কুনো জাতীয় উদ্যান থেকে চিতার মৃতদেহ দেখতে পেয়ে তারা চিতার মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারেন’। তারা আদালতকে জানিয়েছেন, ‘চিতার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এবং কিছু ফটোগ্রাফ পাঠানো হয়েছিল তাদের কাছে। যদি তাদের আগে আহত চিতার ছবি দেখানো হত এবং তাদের ক্ষত সম্পর্কে জানানো হতো তাহলে তারা কর্তৃপক্ষকে সেই ঝুঁকি সম্পর্কে আগেই কুনো কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করতেন।”

ভারতে আসার কয়েক সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইনে কাটানোর পরে চিতাগুলিকে বড় ঘেরে স্থানান্তরিত করা হয়। চিতা নিয়মিত শিকার শুরু করার পরে, সেগুলিকে বনে ছেড়ে দেওয়া হয়। কুনোর একটি সূত্র দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছে যে প্রকল্পের দল চিতাদের বনে ছেড়ে দেওয়ার পরেও তাদের খাওয়াতে থাকে।

প্রকল্প দলের সদস্য এপ্রসঙ্গে বলেছেন, “আমরা প্রতি চতুর্থ দিনে কমপক্ষে দেড় কুইন্টাল (১৫০কেজি) - মুরগি, ছাগল এবং বাছুরের মাংস কিনি। প্রতিটি চিতার জন্য মাংস প্রায় ৫ কেজি মাংস বরাদ্দ থাকে। এর ফলে চিতার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি নষ্ট হয়েছে বলেই মনে করছেন চিতা বিশেষজ্ঞরা।  

একটি উদাহরণে, দুই প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছে, একটি মহিলা চিতা পার্কের সীমানার কাছে একটি বাছুরকে হত্যা করার পর সবে তাকে খেতে শুরু করেছে। তারপরে একটি গাড়ি তার খাবার (মাংস) নিয়ে আসে এবং সে শিকার ছেড়ে চলে যায়," ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন এর ফলে চিতা শিকার করতে "নিরুৎসাহিত" হয়ে পড়ে। চিতাদের বনে ছেড়ে দেওয়ার পরে তাদের খাওয়ানো বনায়ন প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করে। তারা জানাচ্ছেন একবার বনে ছেড়ে দেওয়া হলে, একেবারে প্রয়োজনীয় না হলে, এমন কোনও সম্পূরক খাওয়ানো উচিত নয়। এর  ফলে চিতার আচরণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে”।  

চিতার মৃত্যু নিয়ে চিতা গবেষণা প্রকল্পের একজন গবেষক ডক্টর বেটিনা ওয়াচটার বলেন, ‘নামিবিয়ায়, চিতা যে স্থানে ছিল সেই স্থান ছিল অনেকটা বড় এবং শিকারের ঘনত্ব কম, পূর্ব আফ্রিকার অঞ্চলগুলি ছোট এবং শিকারের ঘনত্ব বেশি কুনোতে পুনঃপ্রবর্তন পরিকল্পনার জন্য, এই দূরত্বগুলি উপেক্ষা করা হয়েছিল,” তিনি আরও বলেন, ‘চিতার ঘনত্ব শুধুমাত্র খাবারের প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে না’। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত দুজন বিশেষজ্ঞ দাবি করেছেন যে কুনো কর্মীদের বৈজ্ঞানিক প্রশিক্ষণ-এর অভাব, মনিটরিং স্টাফরা অনভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষণে শিথিলতা চিতার মৃত্যুর জন্য দায়ি। এবিষয়ে মতব্য করতে গিয়ে এক বিশেষজ্ঞ দাবি করেছেন, “মনিটরিং স্টাফরা তারা তাদের জীপে বসে থাএন এবং সক্রিয় রেডিও সংকেত পেয়েই সন্তুষ্ট থাকেন। গুরুতর ক্ষত বেড়ে ওঠার আগেই তাদের কাছে যাওয়া উচিত ছিল এবং প্রাণীদের ঘনিষ্ঠভাবে পরীক্ষা করা উচিত ছিল যা করা হয়নি”।

সুপ্রিম কোর্টে রিপোর্ট জমা দেওয়ার সময়ও দক্ষিণ আফ্রিকান এবং নামিবিয়ার বিশেষজ্ঞরা এই প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞতার অভাবকে চিতা মৃত্যুর কারণ হিসাবে উল্লেখ করে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন।  

Kuno National Park
Advertisment