এবার মহরমের শোভাযাত্রায় যাতে কোনও অস্ত্র না থাকে তার জন্য় আবেদন জানিয়েছে বেঙ্গল ইমামস অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের চেয়ারম্য়ান মহম্মদ ইয়াহিয়া এক লিখিত বিবৃতিতে এই আবেদন জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য়, “মহরমের দিন লাঠি ও তলোয়ার নিয়ে খেলা শিয়া ও সুন্নি সব সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রেই ইসলাম বিরোধী। পাশাপাশি অন্য সংগঠনগুলো যাতে এই অস্ত্র মিছিল নিয়ে কোনও ইস্যু করতে না পারে তার জন্য় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ দীর্ঘ দিন ধরেই এই রাজ্য়ে সশস্ত্র মহরমের শোভাযাত্রা হয়ে আসছে। এমনকী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো তা নিয়ে পাল্টা প্রচার করে এসেছে। রামনবমীসহ নানা শোভাযাত্রায় তরোয়াল, লাঠি দেখা গিয়েছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে ইমাম সংগঠনের এই নির্দেশ অত্য়ন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বেঙ্গল ইমামস অ্য়াসোসিয়েশনের চেয়ারম্য়ান মহম্মদ ইয়াহিয়া বলেন, “পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেক কিছু পাল্টে যায়। লাঠি ও তলোয়ার খেলা কোনওদিনই ইসলামের অংশ ছিল না। কিছু লোক নিজের মত করে করত। ইসলামিক বলে কেউ কখনও ফতোয়াও দেননি। কিন্তু কখনও এসব নিয়ে ভারতের কোথাও অশান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি হয়নি। বর্তমানে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এটাকে ইস্য়ু করে আরও একটা গোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক মানসিকতা নিয়ে অস্ত্রের ব্য়বহার শুরু করেছে। স্বাভাবিক কারণে আমাদের মনে হয়েছে যেটা প্রয়োজনীয় নয়, ইসলামিক নয়, তা নিয়ে অন্য়রা ইস্যু বানাক তা কাম্য় নয়। রাজনৈতিক স্তরে যাওয়ার পরই সমস্য়া দেখা দিয়েছে। এটা ভয় দেখানোর জন্য় করা হত না।’’
তাঁর দাবি, “গত তিন বছর থেকেই এই প্রচেষ্টা চলছে। গতবারেও অস্ত্র নিয়ে মিছিল কম ছিল। আরও কমবে। এবার হয়ত সবটা হবে না। তবে আমাদের প্রচেষ্টা জারি থাকবে। ইসলামিক নয় অথচ সেটা নিয়ে অন্য়রা জনমানসে বিভ্রান্তি করুক সেটা একেবারেই কাম্য় নয়। এটা আমাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত।’’ আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মহরম। অন্য়ান্য় বছরের মত ওই দিন রাজ্য় জুড়ে শোভাযাত্রা বের হবে। অস্ত্র মিছিল না করতে এই সংগঠন নানা ভাবে প্রচার করছে। সংগঠনের চেয়ারম্য়ান বলেন, “ফেসবুক, হোয়াট্স অ্য়াপ, টুইটারেও এই নিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। সাংগঠনিক স্তরেও সার্কুলেট করা চলছে।’’
শুক্রবার বেঙ্গল ইমামস অ্য়াসোসিয়েশন এক লিখিত বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আগামী ২১ সেপ্টম্বর, শুক্রবার মহরমের ১০ তারিখ বা আশুরার দিন নামে খ্য়াত। ঘটনাচক্রে ওই দিন রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র রক্ষার্থে অসম লড়াইয়ে মহানবী হযরত মোহাম্মদ(সঃ)-র প্রিয়তম নাতি হোসাইন(রাঃ) কারবালায় শহীদ হন। ওই শাহাদাত-এর নৃশংসতাকে ভুলতে না পেরে কিছু মুসলিম ব্য়ক্তি শোক পালনের নামে মিছিল করেন। লাঠি, তরোয়াল খেলেন, যা শিয়া ও সুন্নি সব সম্প্রদায়ের ইসলাম বিরোধী। হযরত মোহাম্মদ(সঃ) শান্তির বার্তা বাহক ও প্রচারক। তিনি কখনওই এটা চাননি।’’
ওই আবদনে ইমাম সংগঠন স্পষ্ট বলেছে, “অস্ত্রসহ কোনও মিছিল একেবারেই কাম্য় নয়। আর শিশুদের হাতে কোনও অস্ত্রসহ মিছিল, অস্ত্র খেলা শরীয়ত এবং ভারতীয় আইনে বিরোধী।’’ কোনও প্ররোচনায় পা না দিতেই আবেদন করেছে ওই সংগঠন।