মাত্র দশ বছর বয়সেই কিডনির জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যাঙ্গালুরুর ধানুশ এম পূজারি। প্রথম পর্যায়ে ডাক্তারদের রোগটি ধরতে কিছু সময় লাগলেও পড়ে দেখা গেল ধানুশ কঠিন এবং জটিল কিডনির রোগে আক্রান্ত। ব্যাঙ্গালুরুর একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা গত বছর ২৩ অক্টোবর, সফলভাবে একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করেন। তবে, অস্ত্রোপচার সফল বলে ঘোষণা করার আগে তারা মা ও ছেলের সম্পূর্ণ সুস্থতার জন্য মা এবং ছেলেকে বেশ কিছুদিন পর্যবেক্ষণে রেখেছিলেন।
পরবর্তী পর্যায়ে দেখা যায় মা এবং ছেলে দুজনেই সুস্থ রয়েছেন। অস্ত্রোপচারটির দায়িত্বে ছিলেন ডাঃ গোবর্ধন রেড্ডি, লিড কনসালট্যান্ট (ইউরোলজি) এবং ডাঃ বিদ্যাশঙ্কর পি, লিড কনসালট্যান্ট (নেফ্রোলজি)। তাঁদের কথায়, রোগী শেষ পর্যায়ের রেনাল ডিজিজে (ESRD) ভুগছিলেন। সেই সঙ্গে এই অস্ত্রোপচার করাও যথেষ্ট ঝুঁকির কারণ ছিল। কারণ রোগীর শারীরিক অবস্থা ভাল ছিল না। সেই সঙ্গে চিকিৎসকরা বলেন, প্রথমে এই রোগ শনাক্ত হতেই বেশ কিছুদিন সময় চলে যায়। সেই সঙ্গে পূজারি উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে ক্লান্তি, বমি বমি ভাব, খিদে কমে যাওয়া, পেশীতে ক্র্যাম্প এবং বমির মতো ইউরেমিক লক্ষণ ধরা পড়ে।
পেডিয়াট্রিক কিডনি প্রতিস্থাপনের বিষয়ে, ডাঃ বিদ্যাশঙ্কর বলেন, “শিশুদের দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ (CKD) একটি প্রধান উদ্বেগের কারণ। CKD দ্বারা আক্রান্তদের মধ্যে দুই থেকে তিন শতাংশ শিশু কিডনি রোগের শেষ পর্যায়ে পৌঁছায়। পেডিয়াট্রিক রেনাল ট্রান্সপ্লান্টেশন এই ধরণের শিশুদের জন্য একটি জীবন রক্ষাকারী পদ্ধতি। ডায়ালাইসিস শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই, প্রতিস্থাপনই একমাত্র উপায় যা প্রায়-স্বাভাবিক শৈশবের পথ খুলে দেয়। পেডিয়াট্রিক ট্রান্সপ্লান্টেশনের সাফল্যের হার প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই”
সার্জারির বিষয়ে তিনি বলেন “আমরা মা-বাবাকে পরামর্শ দিয়েছিলাম এবং তাদের জানিয়েছিলাম যে বাচ্চাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট দরকার। কিডনি দান করতে এগিয়ে আসেন তার মা। তারপরে তাকে বিস্তারিতভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছিল এবং সেটি উপযুক্ত বলে প্রমাণিত হয়েছিল। ছেলেকে বাঁচাতে তিনি স্বেচ্ছায় তার কিডনি দান করেছেন। ট্রান্সপ্লান্টের আগে এবং পরে ধানুশকে ইমিউনোসপ্রেসেন্ট ওষুধ দেওয়া হয়েছিল এবং এক সপ্তাহ পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।”
মা জয়লক্ষ্মী বলেন, “মা হিসেবে আমার ছেলেকে এমন অবস্থায় দেখতে পারা খুবই কঠিন। ও স্কুলে যেতে পারত না বা তার সমবয়সীদের সঙ্গে খেলা ধুলাও করতে পারত না। সবসময় ও আমাদের জিজ্ঞাসা করত কবে সুস্থ হব । সন্তানকে বাঁচাতে আমি আমার কিডনি দান করেছি। আমরা দুজনেই সুস্থ রয়েছি ।”