পরিযায়ী শ্রমিকরা বাড়ি ফিরে গেলে রাজ্যের নির্মাণ ও উৎপাদন শিল্প ব্যহত হবে। রাজ্যের অর্থনীতির ক্ষতি হতে পারে। এই ভিত্তিতে কর্ণাটক সরকার সেরাজ্যে আটক পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার 'শ্রমিক স্পেশাল' ট্রেন বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পায়ে হেঁটে বেঙ্গালুরু ছেড়ে বেরোতে শুরু করেন দলে দলে শ্রমিক। ব্যাতারায়ানপুরার বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণ বাইরগৌড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় বুধবার একটি ভিডিও পোস্ট করেন, যাতে দেখা যায়, অন্তত ৩০০ মানুষ বেঙ্গালুরুর হেব্বল ফ্লাইওভার এবং দেবনহাল্লির মধ্যবর্তী রাস্তায় হাঁটছেন।
কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদুরাপ্পার উদ্দেশে এক টুইটার বার্তায় ওই বিধায়ক যা লেখেন তার মর্মার্থ, "রাজ্য সরকার ট্রেন বাতিল করল। হাজারে হাজারে মানুষ স্রেফ পায়ে হেঁটে উত্তরপ্রদেশ যাবেন বলে বেরিয়েছেন! এ তো অমানবিক! তাঁরা এতটাই অস্থির যে পেয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরবেন, দয়া করে জোর করবেন না। কেউ কেউ মারাও যেতে পারেন। সরকার 'রিয়েল এস্টেট লবি'র দালাল হতে পারে না। ভালোভাবে এঁদের ফেরত পাঠান যাতে তাঁরা হেঁটে ফিরে আসতে চান।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বাইরগৌড়া বলেন, "এটি মানবিকতার ট্র্যাজেডি। আমি বিকেল চারটে নাগাদ এঁদের বেল্লারি রোডে দেখতে পাই। জেনে স্তম্ভিত হয়ে যাই যে তাঁরা উত্তরপ্রদেশ এবং ঝাড়খণ্ডে তাঁদের বাড়ির দিকে হেঁটে রওনা দিয়েছেন, যেহেতু আর কোনও পরিবহণ পান নি।" তাঁর মতে, যাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁদের অধিকাংশেরই বয়স ২০ বা ৩০-এর কোঠায়। তিনি বলেন, "কর্ণাটক সরকারের ট্রেন বাতিল করার অমানবিক সিদ্ধান্তে তাঁরা খুব বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছেন।"
প্রাক্তন মন্ত্রী আরও বলেন, যেসব শ্রমিকদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন, তাঁরা অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক, এবং অনেকেই নির্মাণের কাজে যুক্ত ছিলেন। ভিডিওতে শোনা যাচ্ছে তিনি শ্রমিকদের বলছেন যে হেঁটে বাড়ি ফেরার চেষ্টা "মূর্খতার সামিল", যার উত্তরে শ্রমিকরা বলছেন তাঁদের আরও কোনও উপায় নেই, যেহেতু কর্তৃপক্ষ তাঁদের অভিযোগ শুনছেন না। বাইরগৌড়া বলেন, "সূর্য ডুবে যাওয়ার পর বৃষ্টি শুরু হওয়ার পরেও তাঁরা হেঁটে বাড়ি ফিরতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমাকে তাঁরা বলেছেন, বেতন নেই, খাবার নেই, এই অবস্থায় তাঁরা তাঁদের পরিবারের কাছ থেকে কতটা বিচ্ছিন্ন বোধ করছেন।"
তিনি আরও বলেন যে বাস অথবা ট্রেন পাওয়া পর্যন্ত শ্রমিকদের অপেক্ষা করতে অনুরোধ করেন তিনি। "উত্তরে তাঁরা বলেন যে তাঁদের পরিবারের জন্য তাঁরা চিন্তিত, এবং শহরে থাকার মতো টাকা এবং আর যা কিছু জরুরি, তা ফুরিয়ে এসেছে। কোনও কথাই তাঁরা শুনতে রাজি হন নি, এবং বলেন যে সরকারের ওপর আর কোনও ভরসা নেই তাঁদের। আমি এটা পর্যন্ত বলি যে বাস অথবা ট্রেন চালু হওয়া পর্যন্ত আমি তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেব, কিন্তু তাঁরা সম্মত হন নি।"
শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন বাতিলের সিদ্ধান্তকে "ভীতিজনক" আখ্যা দিয়ে বাইরগৌড়া বলেন সরকারের বোঝা উচিত যে "গরীবের জীবনেরও দাম আছে, স্রেফ বিদেশ থেকে যাঁরা ফেরার চেষ্টা করছেন তাঁদের নয়"।
এর আগে বিজেপি'র নেতৃত্বাধীন সরকারের সমালোচনা করে বিরোধীপক্ষ অভিযোগ করে যে সরকার "বলপূর্বক শ্রম" সমর্থন করছে এবং "মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন" করছে।
একাধিক টুইটার বার্তায় কংগ্রেস নেতা সিদ্দারামাইয়া লেখেন, "পরিযায়ীদের জন্য ট্রেন বাতিল করার মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত শুধু অমানবিক নয়, মৌলিক অধিকারেরও লঙ্ঘন। মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি, যে পরিযায়ীরা ফিরে গেলে নির্মাণ কাজ আটকে যাবে, স্রেফ বিএস ইয়েদুরাপ্পার মানসিকতার পরিচয়। অদৃশ্য হাতের ইশারা মেনে তিনি অসহায় শ্রমিকদের জীবনের বলিদান দিতেও রাজি।"
বিরোধীপক্ষের বক্তব্য, বাড়ি ফিরে যাওয়া বা না যাওয়ার সিদ্ধান্ত শ্রমিকদের হওয়া উচিত ছিল, সরকারের নয়। সিদ্দারামাইয়া আরও লেখেন, "অপ্রীতিকর কিছু হয়ে গেলে কে দায়িত্ব নেবে? আমরা কি এখনও বলপূর্বক শ্রম প্রথা মেনে চলছি?"
The decision to go back or to stay back should be with the labourers & not with the government. Labourers are free to choose health or work. Who will take responsibility if something goes wrong?
Are we still practicing bonded labour?
For me #MigrantLivesMatter!!
3/4
— Siddaramaiah (@siddaramaiah) May 6, 2020
কর্ণাটক প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি ডিকে শিবকুমার মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পার কাছে আবেদন জানান, তিনি যেন বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনের আহ্বান করেন, যাতে রাজ্য বাজেট পুনর্গঠন, এবং অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন সংক্রান্ত আলোচনা করা যায়।
বাইরগৌড়া বলেন যে অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার, এবং উন্নয়নের কাজ পুনরায় চালু করার, সরকারি প্রয়াসকে তাঁরা সমর্থন করেন। "কিন্তু তাঁদের (শ্রমিকদের) কার্যত বন্দী করে রেখে তাঁদের কাছ থেকে কাজ এবং স্বাস্থ্যের মধ্যে বেছে নেওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়া অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং অমানবিক," বলেন তিনি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন