গর্ভবতী হওয়ার চেষ্টায় প্রথম জরায়ু প্রতিস্থাপন করালেন কোনো ভারতীয় মহিলা। মীনাক্ষি ভালান্দ (২৭) ভর্তি আছেন পুনের গ্যালাক্সি কেয়ার হাসপাতালের রুম নম্বর ৪০৬-তে। তাঁর গর্ভসঞ্চারের পর কেটে গিয়েছে ২০ সপ্তাহ। এখন প্রতিদিন ভ্রূণের হৃদস্পন্দন অনুভব করেন তিনি।
চিকিৎসার জল গড়িয়েছে অনেক দূর। সহজে সম্ভব হয় নি। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তিনি জানান, "আমি শুধু শিশুটিকে চেয়েছি, এখন আর মাত্র কটা মাসের অপেক্ষা। তাকে পেতে আমি আমার শেষ সুযোগটি ছাড়তে পারব না।"
গত বছর মে মাসের ১৮-১৯ তারিখে প্রথমবার মহারাষ্ট্রের সোলাপুর থেকে শিবম্মা চালগারি এবং মীনাক্ষি জরায়ু প্রতিস্থাপনের মধ্যে দিয়ে যান। বিবাহিত জীবনের নয় বছরের মধ্যে দুবার গর্ভবতী হন তিনি। কিন্তু দুবারই পূর্ণ গর্ভাবস্থায় ভ্রূণ নষ্ট হয়ে যায়। ইউটেরাসে সমস্যার জন্য চারবার গর্ভপাত করতে হয়। নাতনির কষ্টে আঁচ পৌঁছেছিল ঠাকুমার কাছেও। তিনি গোটা দিন থাকতে চেয়েছেন নাতনির কাছে। এবং পছন্দের খাবার বানিয়ে নিয়ে এসেছেন হাসপাতালে।
"আমার ডায়েট চার্ট আছে, হাসপাতালের এই রুম ছেড়ে বেরোনো মানা, তবে পরিবারের একজনকে আমার সঙ্গে থাকার অনুমতি দিয়েছে হাসপাতাল। খাওয়ার পর দিনে একবার হাঁটার অনুমতি রয়েছে। দিনের বাকি সময়টা বই পড়ে এবং টিভি দেখেই কাটাই," বললেন মীনাক্ষি।
হাসপাতালের পরিচালক শৈলেশ পুতমবেকার জানিয়েছেন, ডেলিভারি হওয়ার দিন ঠিক করা হয়েছে ডিসেম্বর মাসে। এদিকে ডায়াবেটিস ও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য কোনো রকম ঝুঁকি নিতে নারাজ চিকিৎসকরা। নভেম্বর মাসের গোড়ার দিকে সি-সেকশন চালু করতে সক্ষম হওয়া উচিত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক মিলিণ্ড টেলং। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ তেজশ্রী বাকরে এবং রভিরাজ তিরুকে দৈনিক দেখভাল করছেন মীনাক্ষির। নিয়মিত মাপা হচ্ছে রক্তচাপ। গর্ভবতী অবস্থায় জরায়ুকে সুগঠিত রাখার জন্য এবং প্রতি সপ্তাহে ওজন বৃদ্ধির জন্য রুটিনমাফিক চিকিৎসা চলছে। ২০ সপ্তাহের মাথায় স্ক্যানের ফলাফল দেখে আশা করা যায়, গঠন ঠিক থাকবে।
শিবম্মা ও মীনাক্ষীর স্বামীদের কাছ থেকে শুক্রাণু সংগ্রহ করে ডিম্বাশয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। শিবম্মার ক্ষেত্রে চারটি এবং মীনাক্ষির আটটি নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে প্রথমবারই সফল হবে এমনটা ঘটে না। জরায়ু প্রতিস্থাপনের এই পর্যায়টি সময়সাপেক্ষ।
শিবম্মার ক্ষেত্রে ১৫ অগাস্ট আবারও ভ্রূণ স্থানান্তরের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মীনাক্ষির ভ্রূণ স্থানান্তর সফল হয়েছে। বিশ্বব্যাপী, শুধুমাত্র আটজন মহিলার সফলভাবে জরায়ু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ভারতে এইটি প্রথমবার তাই আমাদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ, এমনটাই জানা ডাঃ পুতমবেকার।