হরিয়ানায় ২ মুসলিম যুবককে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনায় আঁতকে উঠেছে সারা দেশ। পুলিশ ও বজরং দলের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মৃতের পরিবার। এবার পুলিশি তদন্তে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে রিংকু সাইনি নামে এক ব্যক্তিকে। জিজ্ঞাসাবাদে সে দাবি করেছে ২ মুসলিম যুবক গরুপাচারকারী সন্দেহে হরিয়ানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। যদিও ভরতপুর রেঞ্জের পুলিশের আইজি গৌরব শ্রীবাস্তব বলেন, পুলিশ অভিযুক্তের দাবির সত্যতা যাচাই করছে।
হরিয়ানায় দুই মুসলিম যুবককে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনায় পুলিশ ও বজরং দলের বিরুদ্ধেই সুর চড়িয়েছেন পরিবারের লোকজন। নিহতের ২জনের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশই নিহত দুজনকেই ‘বজরং দলের’ লোকজনের হাতে তুলে দেয়, পরে তারাই গরু পাচারকারী সন্দেহে একটি বোলেরো গাড়ির ভিতর তাদের পুড়িয়ে হত্যা করে।
নিহত ২ যুবক জুনাইদ এবং নাসিরের মৃতদেহ বুধবার ভিওয়ানির লোহারু গ্রামের কাছে পাওয়া যায়। পরিবারের অভিযোগ, পুলিশই জুনায়েদ ও নাসিরের বোলেরোটিকে তাড়া করে ধরে ফেলে। এরপর তাদের ২জনকে মারধরও করে। অসুস্থ অবস্থায় বজরং দলের লোকজনের হাতে তাদের তুলে দেওয়া হয়।
নিহত জুনায়েদের বয়স ৩৫ বছর এবং নাসিরের বয়স ২৮ বছর। দুজনেই রাজস্থানের ভরপুর জেলার ঘটমিকা গ্রামের বাসিন্দা। এই গ্রামটি হরিয়ানা সীমান্তের একেবারে কাছেই অবস্থিত। জুনায়েদের ভাই ইসমাইল বুধবার গোপালগড় থানায় (ভরতপুর) অপহরণের মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার পর রাজস্থানের ভিওয়ানি ও ভরতপুর জেলার পুলিশ তদন্তে নেমেছে। পাশাপাশি নিহত দুজনের দেহের নমুনা সংগ্রহ করে তাদের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
একদিকে যেখানে পরিবারের লোকজন পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে, অন্যদিকে পুলিশ অভিযোগকে পুরোপুরি অস্বীকার করেছে। পুলিশ বলছে, ঘটনার সঙ্গে পুলিশের কোন সম্পর্ক নেই। পুলিশ অভিযুক্তদের কাউকেই ধরেনি বা বজরং দলের লোকদের হাতে তুলে দেয়নি। এই ঘটনায় বজরং দলের নেতা মনু মানেসার, রিংকু সাইনি সহ আরও ৭ থেকে ৮ জনের নাম সামনে আসছে। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখার কাজ করছে। পরিবারের সদস্যদের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে রাজস্থান পুলিশ রিংকু সাইনি নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে।
ভরতপুর আদালত এই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাইনিকে ৫ দিনের পুলিশি ফেফাজতের নির্দেশ দেয়। অন্যদিকে, রাজস্থানের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাহিদা খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলও এই বিষয়ে এখানে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের সঙ্গে দেখা করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর মন্ত্রী জাহিদা খান সাংবাদিকদের বলেন, মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনায় জড়িত সকলকেই দ্রুত গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়েছেন। খান বলেন, “পরিবারের সদস্যরা বিচার ও অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে এবং প্রয়োজনে হরিয়ানা পুলিশের থেকে সহযোগিতা চাওয়া হবে।
আরও পড়ুন: < একশো আসনও পেরোবে না বিজেপি, ভবিষ্যতবাণী নীতীশের, অঙ্কটা কী? >
নিহতের যুবকের আত্মীয়রা রাজস্থান পুলিশের কাছে তাদের অভিযোগে, বজরং দলের পাঁচজনের নাম উল্লেখ করেছেন। একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, জুনায়েদ নামের ওই যুবকের গরু পাচারের রেকর্ড ছিল এবং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় পাঁচটি মামলা রয়েছে। এর আগে, কর্তৃপক্ষ প্রতিটি নিহতের পরিবারকে ২০.৫০ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছিল।