কলকাতা হাইকোর্টে বড় জয় পেল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পুজো কমিটিগুলিকে সরকারের অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলাটি বুধবার খারিজ করে দিল ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত এবং বিচারপতি শম্পা সরকারের ডিভিশন বেঞ্চ। এই আবেদন ত্রুটিপূর্ণ বলে এ দিন জানিয়েছে হাইকোর্ট। বিচারপতিরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, রাজ্যের সিদ্ধান্তে আদালত নাক গলাবে না।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের ২৮ হাজার দুর্গাপুজো কমিটিকে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেবে রাজ্য সরকার, সম্প্রতি এমন ঘোষণাই করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেই ৫ অক্টোবর কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল। মামলাকারীদের আইনজীবী ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী তথা কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। অন্যদিকে দিকে রাজ্যের হয়ে সওয়াল করেছেন অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত। আদলত প্রাথমিকভাবে এই সিদ্ধান্তের উপর ৯ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিতাদেশ জারি করে। এরপর ৯ তারিখই ফের স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়িয়ে ১১ অক্টোবর করা হয়।
এজলাসে পুজোর অনুদান মামলার সওয়াল ছিল কার্যত টানটান চিত্রনাট্যের মতো। মামলাকারী পক্ষের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, পুজো কমিটিগুলিকে নতুন এভাবে টাকা দিয়ে সাংবিধানিক ক্ষমতার অপব্যবহার করছে সরকার। তখন বিচারপতি করগুপ্ত এজিকে প্রশ্ন করেন, এই অনুদান কি সংবিধানের কোনও নির্দিষ্ট ধারার আওতায় পড়ছে? উত্তরে এজি বলেন 'না'। তবে এই অনুদান আগামী বছর বাজেটের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। এরপরই বিচারপতি বলেন, ইতিমধ্যে তো টাকা খরচ করা হয়ে গিয়েছে! এই প্রেক্ষিতে এজি জানান, ২৮২ ধারা অনুযায়ী জনকল্যাণ প্রকল্পে সরকারের আর্থিক সাহায্য করার ক্ষমতা রয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে। এছাড়াও ২০৬ ধারা অনুয়াযী কোনও বিশেষ ক্ষেত্রে বাজেটের খসড়া পেশ করতে পারে সরকার। সে সময়বিচারপতি পালটা প্রশ্ন করেন, কী এমন বিশেষ ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে যেখানে অর্থ বরাদ্দ করতে হল রাজ্যকে? এজি এর উত্তরে জানান, ২৮২ ধারায় রাজ্যকে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে জনগণের কাজে অর্থ বরাদ্দ করার ক্।মতা দেওয়া হয়েছে। ঠিক তখনই বিকাশরঞ্জনবাবু জানতে চান, কি এমন আপৎকালীন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যেখানে পুজো কমিটিগুলির জন্য অর্থ বরাদ্দ করতে হল রাজ্য সরকারকে? এজির জানান, এই অর্থ পুজোর খরচ নয়, বরং বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রচার চালানোর ক্ষেত্রে কলকাতা ও রাজ্য পুলিশকে পুজো কমিটিগুলি যে সাহায্য করে, এই অনুদান সেই কারণেই। সুপ্রিম কোর্টও এ বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে বলে জানান তিনি। তাঁর মতে, কোনও করদাতা সরকারের কাছে সরাসরি প্রশ্ন করতে পারেন না, কোন খাতে টাকা খরচ হচ্ছে। এরপরই বিচারপতি করগুপ্ত এজিকে প্রশ্ন করেন, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে কি কোনও নির্দেশিকা আছে। এজির জবাব, "না, নেই, কিন্তু তা বলে কি কোনও খরচ হবে না"?
এই পর্যন্ত সওয়াল চলার পর অ্যাডভোকেট জেনারেলের বক্তব্য, সংবিধানের ২৮২ ধারায় সাধারণের স্বার্থে টাকা ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। সরকারের একচ্ছত্র অধিকারও আছে টাকা ব্যবহারের। পুজোর অনুদানের ২৮ কোটি টাকা আসলে পথ নিরাপত্তার প্রচারে ব্যবহৃত হবে। আদালত এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। কিন্তু বিকাশবাবু জানান, একমাত্র বাজেটে বরাদ্দ খরচই জনসাধারণের কাছে প্রশ্নাতীত। আর কোনও খরচ নয়। পুজোর জন্য এই বরাদ্দ অসাংবিধানিক, কারণ এই আদালত ইমাম ভাতাকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়েছিল। এর উত্তরে সরকার পক্ষের আইনজীবী শক্তিনাথ মুখার্জী বলেন, ট্যাক্স দেন যাঁরা, তাঁরা প্রশ্ন তুলতে পারেন না কেন সরকার জনগণের টাকা খরচ করেছে। এর জন্য আলাদা অ্যাকাউন্ট কমিটি রয়েছে। বরং খরচ সঠিক নিয়মে হয়েছে কি না তা পরবর্তী সময়ে অডিটর ও কম্পট্রোলার খতিয়ে দেখবেন। এই মুহূর্তে সরকার সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে অগ্রাধিকার পাবে। এ বিষয়ে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
সওয়াল শোনার পর বিচারপতি কর গুপ্ত বলেন, “কেউ হস্তক্ষেপ করছে না। শুধু জানতে চাওয়া হচ্ছে, চেক-ভালভ আছে কি? জলের গতিপথ পরিবর্তন বা স্রোত আটকাতে চাইছি না। শুধু লিকেজ আটকাতে চাইছি।” বুধবার জনস্বার্থ মামলার আবেদনটিকেই ত্রুটিপূর্ণ বলে খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু, বুধবার জনস্বার্থ মামলার আবেদনটিকেই ত্রুটিপূর্ণ বলে খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এর ফলে, রাজ্যের পুজো কমিটিগুলিকে অনুদান দেওয়ার ক্ষেত্রে আর কোনও বাধা রইল না রাজ্য সরকারের। তবে, বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে রাজ্যের হিন্দু জনগোষ্ঠীর 'মন জয়ের চেষ্টা করছে' মমতা সরকার।