বিহারে ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্ট্রার বা এনপিআরের কাজ শুরু চলবে চলতি বছরের মে মাসে। শনিবার এই ঘোষণা করেন বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী। মে মাসের ১৫-২৪ তারিখ পর্যন্ত হবে জনগণনার কাজ।এনপিআরের কাজে সম্মতি দিয়েছে শাসক দল জেডইউ। দেশে এনআরসি লাগু নিয়ে আলোচনা হয়নি, প্রধানমন্ত্রীর এই আশ্বাসের পরই সম্মতি মেলে নীতীশ কুমারের দলের তরফে। এর আগে জেডিইউ জানিয়েছিল উপযুক্ত ব্যাখ্যা ছাড়া বিহারে এনপিআর হবে না।
Advertisment
বাংলা, কেরাল ও কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলো আগেই জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট রাজ্যে এনআরসি লাগু হবে না। এনপিআরের কাজও তারা স্থগিতত করেছে। অভিযোগ, এনআরসির প্রথম ধাপ হল এনপিআর। বিরোধী শাসকিত রাজ্যেগুলোর সুরেই বিজেপির জোট শরিক জেডিইউ-ও বেঁকে বলেছিল। উপযুক্ত ব্যাখ্যা ছাড়া বিহারে এনআরসি হবে না বলে জানিয়েছে জেডিইউ। যা গেরুয়া শিবিরের কাছে অস্বস্তির। এই পরিস্থিতিতে বিহারে নীতীশ কুমারের এনপিআরে সম্মতি কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে মোদী-শাহদের।
শনিবার রাজ্যে এনপিআরের দিনক্ষণ ঘোষণা করে উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী বলেন, 'এনপিআর আইনী প্রক্রিয়া। প্রত্যেক রাজ্যই এটা করতে বাধ্য।' এরপরই কিছুটা হুঁশিয়ারির সুরে মোদী বলেন, 'কোনও সরকারি কর্মী এনপিআরের বিরোধীতা করতে পারবেন না। এনপিআর না করতে বললে আইনে তিন বছরের শাস্তির মেয়াদ রয়েছে। এছাড়া বিভাগীয় তদন্তের পাশাপাশই আর্থিক জরিমানারও সংস্থান রয়েছে।'
Advertisment
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ২০১৮-১৯ -এর বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, এনআরসির প্রথম ধাপ হল এনপিআর। ২০১৪ সালে রাজ্যসভাতেও একই কথা বলেছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু। সিএএ ঘিরে বিক্ষোভ দানা বাঁধতেই অবশ্য উল্টো সুর শোনা যায় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখে। দিল্লির রামলীলা ময়দানে দাঁড়িয়ে মোদী বলেছিলেন, 'তাঁর সরকার ও মন্ত্রিসভায় এনআরসি নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।' অমিত শাহও বলেন, 'দেশজুড়ে অবিলম্বে এনআরসি লাগুর কোনও পরিকল্পনা নেই কেন্দ্রের। এনআরসির সঙ্গে এনপিআরের কোনও যোগ নেই।' বিরোধীরা মানুষকে বিভ্রান্ত করতেই 'মিথ্যা' রটাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
কেরালা আগেই এনপিআরের বিরুদ্ধে প্রস্তাবনা পাস করেছে। বিরোধী পরিচালিত অন্যান্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদেরও বিধানসবায় প্রস্তাবনা পাসের আর্জি জানিয়েছেন। বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'কোনও রাজ্যেরই এনপিআরের বিরোধীতা করার ক্ষমতা নেই। এনপিআরের বিরোধীতা সংবিধান বিরোধী।' এনপিআরে প্রশ্নমালা এবার এবার ১৫ থেকে বাড়িয়ে ২১ করা হয়েছে। বিরোধীদের কটাক্ষ সরিয়ে মোদী বলেন, 'এটা প্রত্যেকবারই বদদল করা হয়। নতুনত্বের কিছু নেই।'
জেডিইউ মুখপাত্র কেসি ত্যাগী বলেন, 'জনগণনার বিষয় হিসাবে ২০১০-এ কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের আমলেই এনপিআরের সূচনা হয়েছিল। তবে এনসিআরের জন্য এনপিআর না করা হলে আমাদের আপত্তির কিছু নেই। এছাড়া আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিকে আমরা সম্মান করছি। তবে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার আগেই জানিয়েছেন বিহারে অনআরসি হবে না।'
উল্লেখ্য, এনআরসি-এনপিআর ঘিরে জেডিইউ-য়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সহ-সভাপতি প্রশান্ত কিশোর প্রকাশ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করেন। পরে, নীতীশ কুমারের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তারপরই নীতীশ ঘোষণা করেন বিহারে এনআরসি হবে না।