করোনা অতিমারীতে বন্ধ স্কুল। বন্ধ মিড ডে মিলও। তার জেরেই শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি বেড়েছে। পেটের জ্বালায় বিহারের পড়ুয়ারা কাগজ কুড়াতে শুরু করেছে। ভাগলপুরের বাদবিল্লা জেলার মুশাহারিটোলা, মহাদলিত গ্রামের এই করুণ অবস্থার কথা সোমবার দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে উঠে আসে। এই খবর প্রকাশের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই শিশুদের কাছে খাবার পৌঁছে দিতে পদক্ষেপ করল বিহার সরকার। রাজ্যব্যাপী আরও তিন মাস মিড-ডে মিল পাবে শিশু পড়ুয়ারা। এছাড়াও শিশু অথবা তার অভিভাবকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে টাকা। ইতিমধ্যেই এই মর্মে নির্দেশ জারি করেছে নীতিশ কুমার সরকার।
সোমবার দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে মিড-ডে মিল না পেয়ে শিশুদের দুরাবস্থার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। যার ভিত্তিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কেন্দ্র ও বিহার সরকারকে নোটিস জারি করে। বিষয়টিকে 'অমানবিক, গুরুতর সমস্যা' বলে মনে করছে কমিশন। এ বিষয়ে বিস্তারিত জবাব আগামী চার মাসের মধ্যে কমিশনের কাছে জমা করতে বলা হয়েছে।
বিহারের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব (শিক্ষা) আর কে মহাজনের জারি করা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে যে, 'এই পরিস্থিতে খাদ্য সুরক্ষা আইনের মাধ্যমে ৮০ দিনের খাবার দেওয়া হবে (মে মাসে ২৪ কর্ম দিবস, জুনে ৩০ দিন গ্রীষ্মকালীন ছুটি, জুলাইতে ২৬ কর্মদিবস)। নির্দিষ্ট পরিমানে খাবার দেওয়া হবে ও শিশুদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা অভিভাবকদের অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছে যাবে।'
বর্তমানে ৮০ দিনের জন্য প্রথম -পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়ারা মাথাপিছু ৮ কেজি করে রেশন পাবে ও ব্য়াংকে মিললবে ৩৫৮ টাকা। রোজের ভিত্তিতে যা দাঁড়াচ্ছে- ১০০ গ্রাম করে চাল ও ৪.৪৮ টাকা। ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়ারা ১২ কেজি করে রেশন পাবে ও ৫৩৬ টাকা নগদ। অর্থাৎ প্রতিদিনের ভিত্তিতে পাবে- ১৫০ গ্রাম করে চাল ও ৬.৭১ টাকা করে।
এর আগে ১৪ মার্চ বিহার সরকারের জারি করা নির্দেশিকা অনুসারে, ১৫ দিনের জন্য প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য বরাদ্দ হয় ১১৪.২১ টাকা ও ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমান ১৭১.১৭ টাকা। প্রতিদিনের হিসাবে মাথাপিছু বারদ্দ যথাক্রমে ৭.৬১ টাকা ও ১১.৪১ টাকা। এক্ষেত্রে পড়ুয়ারা রেশন পেত না। প্রশ্ন উঠেছিল এতে কী পেট ভরে?
পেটের জ্বালা বড় জ্বালা। স্কুল থেকে খাবার না মেলায় আপাতত বই খাতার পাট মিটিয়েছে ভাগলপুরের মুশাহারিটোলার মহাদলিত বস্তির শিশুরা। আবর্জনা কুড়িয়ে বা ভিক্ষা করেই আপাতত দিন গুজরান করছে তারা। এটা শুধু এই বস্তির ছবি নয়। বিহারের বেশিরভাগ দরিদ্র মহল্লায় এটাই দস্তুর। সোমবার এই খবর দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত হয়।
ভাগলপুরের স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকারা সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। শিশুদেরকে খাবার দেওয়ার ফলে তারা উপকৃত হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৯-এ উঠে এসেছে বিহারে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ১১৫ শিশু মি-ডে মিল খেয়ে থাকে।
বিহারে মিড-ডে মিলের জেলা আধিকারিক সুভাষ গুপ্তার কথায়, 'প্রধান শিক্ষকরা বিজ্ঞপ্তিতে অনুমোদন দেওয়ার পর আগামিকাল থেকেই রেশন দেওয়া শুরু হয়ে যাবে। অর্থের বদলে তেল ও অন্যান্য় খাদ্যদ্রব্য দেওয়া হতে পারে। রেশন তিন মাস ধরে দেওয়া হবে।' শ্রেণিভিত্তিক পড়ুয়াদের তালিকা তৈরি করে শিশুদের অভিভাকদের রেশন নিয়ে যেতে বলে হবে। এই কাজের সময় স্বাস্থ্য বিধি মানতে হবে।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন