সিবিআই-বিশেষ আদালতের বিচারক তীব্র বিরোধিতা করলেও জোর করেই বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তি দেয় কেন্দ্র। সুপ্রিম কোর্টে গুজরাট সরকারের হলফনামারে দেশজুড়ে তোলপাড়ের মধ্যেই আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এল। গুজরাট দাঙ্গায় বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ এবং তাঁর সন্তানকে হত্যার অপরাধী ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলেও তাঁদের মধ্যে ১০ জন অন্তত ১০০০ দিনের বেশি জেলের বাইরে ছিলেন। প্যারোল, কখনও অস্থায়ী জামিন, আবার কখনও পরিবারের কারও অসুস্থতার অছিলায় তাঁরা মুক্ত ছিলেন।
শীর্ষ আদালতে দাখিল করা গুজরাট সরকারের হলফনামা অনুযায়ী, দোষী সাব্যস্ত রমেশ চন্দনা জেলের বাইরে ছিলেন ১৫৭৬ দিন। ১১ জন দোষীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সাধারণত, সর্বোচ্চ এক মাসের জন্য বিশেষ কারণে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়। সেটা স্বল্পমেয়াদী সাজার ক্ষেত্রে। দীর্ঘমেয়াদী সাজার ক্ষেত্রে বিশেষ সর্বনিম্ন সময় সাজা কাটার পর সর্বোচ্চ ১৪ দিনের জন্য মঞ্জুর করা হয়।
সোমবার গুজরাট সরকার সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে, ১১ জন দোষীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে কারণ তাঁরা প্রত্যেকেই ১৪ বছর সাজা সম্পূর্ণ করেছে এবং জেলেও তাঁদের আচরণ ভাল ছিল। সেই কারণে কেন্দ্র তাঁদের মুক্তি দিতে বলেছে। কিন্তু আদতে, কেউই পুরো ১৪ বছর সাজা কাটেনি। অনেকেই ১০০০ দিনেরও বেশি সময়ে জেলের বাইরে ছিলেন।
আরও পড়ুন ‘আইন মেনেই মুক্তি ধর্ষক-খুনিদের’, বিলকিস-মামলায় মন্তব্য মোদীর মন্ত্রীর
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালে গোধরা দাঙ্গার সময় বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ করে ওই ১১ জন। বিলকিস সেই সময় অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তাঁর গর্ভস্থ ভ্রুণকে হত্যা করে দোষীরা। তাঁর তিন বছরের মেয়ে-সহ পরিবারের ১৪ জনকে খুন করা হয়। ১১ জন অপরাধীর মুক্তির তীব্র বিরোধিতা করেছিল সিবিআই, মুম্বইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক। কিন্তু কেন্দ্রই সেসব আপত্তির তোয়াক্কা না করে ১১ জনকে মুক্তি দিয়েছে। দোষী রমেশ চন্দনা প্রায় চার বছর জেলের বাইরে ছিলেন হিসাব মতো। একমাত্র বাকাভাই বাহোনিয়া নামে এক অপরাধী ৯৯৮ দিন জেলের বাইরে ছিলেন প্যারোল-সহ অন্যান্য কারণে।
আরও পড়ুন বিরোধিতা করে সিবিআই-আদালত, জোর করেই বিলকিসের ধর্ষকদের মুক্তি দেয় কেন্দ্র, জানাল গুজরাট সরকার
গত অগস্টেই দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়, বিলকিসের ১১ জন ধর্ষক যখন তখন প্যারোলের অছিলায় জেলের বাইরে থেকেছেন। তার পর একাধিক সাক্ষীকে খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এই বিষয়ে গুজরাট সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতরের সচবি রাজ কুমার জানিয়েছেন, সরকার সমস্ত তথ্য আদালতের কাছে পেশ করেছে। বিষয়টি বিচারাধীন তাই এই নিয়ে কোনও মন্তব্য তিনি করতে পারবেন না।