বিলকিস বানো গণধর্ষণ ও হত্যা মামলায় ১১ আসামিকে ক্ষমা ও মুক্তি দেওয়ার গুজরাট সরকারের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্ট একটি মামলা দায়ের করা হয়। শুক্রবার সেই মামলার রায়ে দেশের শীর্ষ আদালত গুজরাট সরকারকে দু সপ্তাহের মধ্যে মামলার সমস্ত নথি জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তিন সপ্তাহ পর ফের এক মামলার শুনানি। শুক্রবার, আদালত গুজরাট সরকারকে দু’ সপ্তাহের মধ্যে গুজরাত সরকারকে সমস্ত নথিপত্র জমা দিতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
বিলকিস বানো মামলায় ১১ জন দোষীকে ক্ষমা করার গুজরাট সরকারের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে সিপিআই(এম) নেতা সুভাষানি আলি সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন দায়ের করেছেন। তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্রও এই বিষয়ে পিটিশন দায়ের করেছেন। ২৫ আগস্ট, সুভাষানি আলির আবেদনের ভিত্তিতে, আদালত কেন্দ্র এবং গুজরাট সরকারকে নোটিশ জারি করেছিল। শুক্রবার বিচারপতি অজয় রাস্তোগি এবং বিচারপতি বি.ভি. নাগরথনার বেঞ্চ গুজরাত সরকারকে সময় বেঁধে দিলেন তথ্য জমা দেওয়ার জন্য।
গুজরাট সরকারের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে সিপিআই(এম) নেতা সুভাষানি আলি, সাংবাদিক রেবতী লাউল এবং সামাজিক কর্মী ও অধ্যাপক রূপ রেখা বর্মার দায়ের করা আবেদনের ভিত্তিতে গুজরাত সরকারকে নোটিস জারি করেছে। সেই আবেদনে বলা হয়েছিল ১১ জন দোষীকে মুক্তি দেওয়ার আদেশ পুনরায় ফিরিয়ে নিতে এবং অবিলম্বে ওই ১১ জনকেই গ্রেফতার করতে। প্রসঙ্গত, বিলকিস বানো গণধর্ষণে দোষীদের মুক্তি দেওয়া নিয়ে সরব হয়েছে দেশের নানা অংশের মানুষ।
উল্লেখ্য, গত ১৫ আগস্ট বিলকিস বানো মামলায় ১৪ বছর সাজা পূর্ণ হলে গুজরাট সরকার মুক্তি ও সাধারণ ক্ষমা নীতি অনুযায়ী ১১ আসামিকে ক্ষমা করে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। যার প্রেক্ষিপ্তে ১১ আসামিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
বিলকিস মামলার আসামিরা ১৫ আগস্ট মুক্তি পান। সিপিএম নেতা সুভাষিনী আলি, সামাজিক কর্মী রোখাইন ভার্মা, রেবতী লাল এবং তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্র এই মুক্তি সম্পর্কিত গুজরাট সরকারের আদেশ বাতিল করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দায়ের করেছেন। ২৫ আগস্ট, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এনভি রমনা, বিচারপতি অজয় রাস্তোগি এবং বিক্রম নাথের বেঞ্চ এই বিষয়ে একটি নোটিশ জারি করেছিলেন। এ বিষয়ে ২ সপ্তাহ পর শুনানির কথা বলে আদালত।
আরও পড়ুন: < একমাসেই সরতে হল যোগীর জয়ের কারিগরকে! বঙ্গ বিজেপিতে নয়া পর্যবেক্ষক >
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালে গোধরা-কাণ্ডের পর গুজরাতে সাম্প্রদায়িক অশান্তি চলাকালীন ৩ মে দাহোড় জেলার দেবগড় বারিয়া গ্রামে ভয়াবহ হামলা চালানো হয়। ২১ বছর বয়সী বিলকিস বানো, যে সময় গর্ভবতী ছিলেন, দাঙ্গায় তার তিন বছরের মেয়ে সহ তার পরিবারের সাত সদস্য নিহত হয়।
মঙ্গলবার (১৬ অগস্ট), বিলকিস বানো গণধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১১ জন আসামীকেই জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হল। মওকুফ নীতির অনুসারে তাদের মুক্তি দেয় গুজরাট সরকার। এই নিয়ে গুজরাট এবং কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে নিশানা করেছে কংগ্রেস। গুজরাট সরকারের প্যানেলের তীব্র সমালোচনা করেছেন এআইমিম প্রধান আসাদউদ্দীন ওয়াইসিও। এনসিপি, আরজেডি, সিপিএম এবং তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও এই পদক্ষেপের সমালোচনা করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট গুজরাট সরকারকে ২ সপ্তাহের মধ্যে মামলার রেকর্ড, মওকুফ নীতি আদেশ আদালতের সামনে উপস্থাপন করতে বলেছে।
আসামীদের মুক্তি সমাজে ব্যাপক ক্ষোভ ও নিন্দার জন্ম দেয়। অ্যাক্টিভিস্ট এবং ঐতিহাসিক সহ ৬ হাজারের বেশি মানুষ এই মামলায় দোষীদের দ্রুত মুক্তি প্রত্যাহার করার জন্য সুপ্রিম কোর্টকে অনুরোধ করেছে৷ এই মামলার পরবর্তী শুনানি এখন তিন সপ্তাহ পরে অনুষ্ঠিত হবে৷